ঢাকা: বাংলাদেশে প্রায় দুই কোটিরও বেশি মানুষ কোনো না কোনোভাবে কিডনি রোগে আক্রান্ত। কিডনি সংক্রান্ত রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রতি ঘণ্টায় পাঁচজন মানুষ অকালে মৃত্যুবরণ করছেন।
যাদের ‘দীর্ঘস্থায়ী কিডনি’ রোগ রয়েছে, তাদের কিডনি রোগের কারণে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঝুঁকি সাধারণ মানুষের চেয়ে ১০ ভাগেরও বেশি।
মূলত খাদ্যে ভেজালের কারণেই বাড়ছে কিডনি সংক্রান্ত এ রোগের ঝুঁকি।
খাদ্যে ফরমালিন, কৃত্রিম রঙ, কৃত্রিমভাবে পাকানোর জন্য ব্যবহৃত কার্বাইড ও ইথ্রেল ও ক্ষতিকর কীটনাশক ডিডিটি'র প্রভাবে দেহে ক্যান্সারসহ নানা জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে।
বুধবার রাজধানীর বিয়াম মিলনায়তনে কিডনি অ্যাওয়ারনেস মনিটরিং অ্যান্ড প্রিভেনশন সোসাইটি (ক্যাম্পস) আয়োজিত 'ভয়াবহ কিডনি রোগ ও প্রতিরোধের উপায়: গণসচেতনতা সৃষ্টিতে সংবাদমাধ্যমের ভূমিকা' শীর্ষক কর্মশালায় কিডনি ঝুঁকি সর্ম্পকে এ তথ্য জানান অধ্যাপক ডা. এম এ সামাদ।
ক্যাম্পসের সভাপতি ডা. সামাদ বলেন, কিডনি রোগ অত্যন্ত ভয়াবহ এবং এ রোগের চিকিৎসা এতই ব্যয়বহুল যে, এদেশে শতকরা পাঁচ ভাগ লোকেরও সাধ্য নেই এই ব্যয়বহুল চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়ার। সে কারণে কিডনি রোগ সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে প্রাথমিক অবস্থায় রোগের কারণ ও রোগ শনাক্ত করে এই ভয়াবহ রোগ প্রতিরোধ করতে হবে।
তিনি জানান, দুইভাবে কিডনি বিকল হতে পারে- আকস্মিক ও দীর্ঘস্থায়ী কিডনি বিকল।
সমীক্ষায় দেখা গেছে, শকতরা ১৬ থেকে ১৮ ভাগ লোকের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ সুপ্ত অবস্থায় বিদ্যমান থাকে। দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগীর শেষ পরিণতি কিডনি বিকল হয়ে মৃত্যুবরণ।
যাদের দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ রয়েছে, তাদের কিডনি রোগের কারণে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঝুঁকি সাধারণ মানুষের চেয়ে ১০ ভাগেরও বেশি।
দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগের প্রধান কারণ হলো- ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, গ্লুমারেলো নেফ্রাইটিস, প্রস্রাব প্রবাহে বাধাজনিত রোগ, বয়স্ক পুরুষদের প্রস্টেট বড় হয়ে যাওয়া, প্রস্রাবের নালী সরু হয়ে যাওয়া, বিভিন্ন ধরনের যেখানে-সেখানে ওষুধের ব্যবহার, যাদের ওজন বেশি, যারা ধূমপান করেন, যারা কম কায়িক পরিশ্রম করেন, তাদের মধ্যেও দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগের প্রবণতা অনেক বেশি।
সমীক্ষা থেকে জানা যায়, কোনো সুস্থ মানুষের বিশেষ কতকগুলো কারণে হঠাৎ করে কিডনির কার্যকারিতা লোপ পাওয়াকে ‘আকস্মিক কিডনি’ বিকল বলা হয়। এটা সাধারণত কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বা দিনের মধ্যে ঘটে থাকে। অনেক সময় প্রাথমিক অবস্থায় কোনো লক্ষণ পরিলক্ষিত হয় না।
ক্যাম্পস সভাপতি ডা. সামাদ জানান, খাদ্যে ভেজালে প্রতারণার চেয়ে বেশি রয়েছে স্বাস্থ্যগত ক্ষতি।
তিনি বলেন, ফরমালিন অত্যন্ত বিষাক্ত বলে নিয়মিত ফরমালিনযুক্ত খাবার খেলে শরীরের বিভিন্ন অংশে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কিডনি, লিভার ও পাকস্থলির ক্ষতি হয়।
এ ছাড়া কৃত্রিম রংযুক্ত খাবার গেলে ক্যান্সার হতে পারে। লিভার, কিডনি, হৃৎপিণ্ড ও অস্থিমজ্জার ক্ষতি হয়। কৃত্রিমভাবে পাকানোর জন্য ব্যবহৃত কার্বাইড ও ইথ্রেল মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার আমাদের লিভার, কিডনি ইত্যাদির ক্ষতি করে।
ক্ষতিকর কীটনাশক ডিডিটি একটি নিষিদ্ধ কীটনাশক। এর প্রভাবে আমাদের দেহে ক্যান্সারসহ নানা জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে।
এসব ক্ষতিকর দ্রব্য দেহের কিডনিকে বিকল করে দিতে কাজ করে।
ডা. সামাদ বলেন, ভেজাল প্রতিরোধ কঠিন হলেও অসম্ভব নয়। বিশ্বের অনেক দেশেই খাদ্যদ্রব্যে ভেজালকে কঠোর হাতে দমন করা সম্ভব হয়েছে। বাংলাদেশেও তা সম্ভব। এ কাজে সরকারকেই মূল ভূমিকা পালন করতে হবে। পাশাপাশি এগিয়ে আসতে হবে সৎ ব্যবসায়ী ও জনগণকেও।
কর্মশালায় কিডনি রোগে ইউরোলজি বিভাগের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেন জাতীয় কিডনি ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. রফিকুল আলম।
কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইদুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ।
বাংলাদেশ সময়: ১৩২৫ ঘণ্টা, মার্চ ০৫, ২০১৪