ঢাকা: তদন্ত কমিটিকে ম্যানেজ করে ৪ নবজাতক মৃত্যুর তদন্ত রিপোর্ট থেকে ওষুধের নাম কাটিয়ে নিয়েছে আগ্রাসী ওষুধ কোম্পানি ইনসেপটা। তাদের ওই মেয়াদোত্তীর্ণ ইনজেকশনের প্রতিক্রিয়াতেই গত ৪ অক্টোবর টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে শিশুদের মৃত্যু হয় বলে জোর অভিযোগ আছে।
তাছাড়া নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে ইনসেপটার ওষুধ তৈরি হয় বলে বিস্তর অভিযোগও পাওয়া গেছে।
সম্প্রতি টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতাল ঘুরে জানা যায়, ঠাণ্ডাজনিত কারণে শিশুদের যে ইনজেকশন দেয়া হয়েছিল সেটি ইনসেপটা কোম্পানির। ইনজেকশনটির জেনেরিক নাম পেন্টামাইডিন। ওই ওষুধের নাম এরিসটম। ১০০ মিলি’র ওই ইনজেকশন পুশ করা হয়েছিল শিশুদের শরীরে।
তবে শিশুদের কোন ইনজেকশন পুশ করা হয়েছিল তদন্ত প্রতিবেদনে তার নাম কেৌশলে বাদ দেওয়া হয়। এছাড়াও ওষুধগুলোর মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ যে শেষ পর্যায়ে ছিল সেটিও এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে প্রতিবেদনে।
টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ভুল ইনজেকশনের প্রতিক্রিয়ায় চার নবজাতকের মৃত্যুর ২ দিন পর তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গঠিত তদন্ত কমিটি। প্রতিবেদনে ভুল চিকিৎসায় চার নবজাতকের মৃত্যু হয়নি বলে জানানো হয়েছে।
তবে শিশুদের অভিভাবকরা বলছেন, মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ দেওয়ার কারণে সকাল সাড়ে ৯টা থেকে পৌনে ১১টার মধ্যে হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে তাদের মৃত্যু হয়। তাদের বয়স এক মাসের মধ্যে।
হাসপাতালের এক নার্স জানান, ডা. সাইফুল ইসলাম ৩ অক্টোবর রাতে শিশুদের প্রেসক্রিপশন লিখে যান। সকালে সে অনুযায়ী এক শিশুকে ১০০ মিলি এরিসটম ইনজেকশন পুশ করলে ১৫/২০ মিনিটের মধ্যে তার মৃত্যু হয়। পরে আরো ৩ শিশুকে ওই একই ইনজেকশন পুশ করা হলে তাদেরও মৃত্যু হয়।
এদিকে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ৪ অক্টোবর সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সদর উপজেলার বিন্নাফৈর গ্রামের রিপন মিয়ার চার দিন বয়সী ছেলেকে ঠাণ্ডাজনিত সমস্যা নিয়ে শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা ইনজেকশন দেওয়ার কিছু সময়ের মধ্যেই শিশুটি মারা যায়।
এর আগে সদর উপজেলার ছিটকিবাড়ি গ্রামের শাজাহানের আট দিনের শিশুপুত্র একইভাবে মারা যায়। অলোয়া গ্রামের লিটন মিয়ার নয় দিনের শিশু আলামিন এবং দশ দিনের আরেক শিশু একইভাবে মারা যায় বলে জানান তারা।
শিশুদের অভিভাবকরা অভিযোগ করেন, হাসপাতালে নিয়ে আসার পর শিশুদের একটি ইনজেকশন পুশ করার ১০ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যেই তাদের মৃত্যু হয়।
আল-আমিনের মা হোসনে আরা জানান, ঠাণ্ডাজনিত সমস্যা নিয়ে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সকালে তার স্যালাইন চলছিল। সকাল ৯টার দিকে তাকে একটি ইনজেকশন দেওয়া হয়। ইনজেকশন দেওয়ার কিছুক্ষণ পরই সে চিৎকার দেয়। এর পরপরই তার মৃত্যু হয়।
হোসনে আরা দাবি করেন, মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ দেওয়ার কারণে তার ছেলের মৃত্যু হয়েছে।
হাসপাতালের গঠিত তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, জন্মের পর থেকে শ্বাসকষ্ট, শ্বাসতন্ত্রে ও রক্তে সংক্রমন, ওজন কম ও অপরিপক্ক জন্মগ্রহণের কারণেই তাদের মৃত্যু হয়েছে।
তবে হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, ইনসেপটার যে ইনজেকশন রাখা হয় হাসপাতালে। সেগুলো অনেকদিন ধরেই ছিল এবং মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ প্রায় শেষ পর্যায়ে ছিল। ওই ঘটনার পরপরই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ওই ধরনের আরো ইনজেকশন সরিয়ে ফেলে।
সূত্র জানায়, মোট ৩টি তদন্ত কমিটির সব ক’টিই ওষুধের নাম চেপে যায়। মেয়াদ শেষ হওয়ার বিষয়টিও এড়িয়ে যায়।
হাসপাতালের সহকারী পরিচালক নূর মোহাম্মদ গত শনিবার বাংলানিউজকে বলেন, ইনজেশনটি ইনসেপটা কোম্পানির ছিলো। তবে মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ ঘনিয়ে এসেছিল বলে যে অভিযোগ তা অস্বীকার করেন তিনি।
যদিও তদন্ত প্রতিবেদনে ওষুধের বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি কোন উত্তর দেননি।
অভিযোগ সর্ম্পকে ইনসেপটার ব্যাবস্থাপনা পরিচালক মুক্তাদির আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, শিশুরা পুষ্টিহীন ছিলো। ইনজেকশনে মৃত্যু হয়নি।
বাংলাদেশ সময়: ১২০৭ ঘণ্টা, মে ১৪, ২০১৪