ঢাকা: আগামী বাজেটে বিড়ি-সিগারেটসহ সকল তামাকজাত পণ্যের ওপর কর বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ তামাকবিরোধী জোট।
শুক্রবার রাজধানীতে বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস উপলক্ষে আয়োজিত ‘জনস্বাস্থ্য রক্ষায় তামাকজাত দ্রব্যের ওপর কর বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা’ শীর্ষক এক সেমিনারে তামাকবিরোধী জোটের নেতারা এ দাবি জানান।
বক্তারা বলেন, এ দেশে এক টাকায় তিনটি বিড়ি পাওয়া যায়, অথচ এতো সস্তায় বাচ্চাদের চকলেটও পাওয়া যায় না। তামাকের ওপর এমনভাবে কর বাড়ানো উচিত যাতে করে তামাক পণ্যের দাম নিশ্চিতভাবে বাড়ে। এতে নতুন ধূমপায়ী কম তৈরি হবে এবং ধূমপান ত্যাগের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া, সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে, ভর্তুকি কমবে স্বাস্থ্য ও পরিবেশ খাতেও।
বক্তারা বলেন, বিগত কয়েক বছরে মুদ্রাস্ফীতির বিষয়টি বিবেচনায় আনলে তামাক ও তামাকজাত পণ্যের ওপর কার্যত কর বাড়েনি। যেসব দেশে সস্তায় তামাক পাওয়া যায়, বাংলাদেশ সেসব দেশের তালিকায় শীর্ষস্থানে আছে।
সভা থেকে বক্তারা সিগারেটের জটিল মূল স্তর বা স্লাব প্রথা বাতিল করে তামাকের করনীতি সহজ করার দাবি জানান। একইসঙ্গে সব ধরনের সিগারেটের ১০ শলাকার প্রতি প্যাকেটের ওপর ৩৪ টাকা হারে ও বিড়ির ২৫ শলাকার এক প্যাকেট বিড়ির উপর ৪ দশমিক ৯৬ টাকা হারে একক কর আরোপ করার দাবি করেন। যেন সর্বোচ্চ খুচরা বিক্রয় মূল্যের অন্তত ৭০ শতাংশ কর হিসেবে আরোপিত হয়।
সেমিনারে জানানো হয়, বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ৪৩ দশমিক ৩ শতাংশ প্রাপ্ত বয়স্ক লোক তামাক ব্যবহার করে। তামাক ব্যবহারের পরিণতি হিসেবে প্রতিবছর বাংলাদেশে ৩০ বছরের বেশি বয়স্ক জনগোষ্ঠীর মধ্যে ৫৭ হাজার লোক মারা যায়, তিন লাখ ৮২ হাজারের বেশি লোক পঙ্গুত্ববরণ করে এবং প্রতিবছর ১২ লাখের বেশি মানুষ তামাক ব্যবহারজনিত প্রধান আটটি রোগে আক্রান্ত হয়।
রোগীর চিকিৎসা, অকালমৃত্যু, পঙ্গুত্বের কারণে বছরে দেশের অর্থনীতিতে ১১ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে বলেও জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।
সেমিনারে সংগঠক মোজাজফর হোসেন পল্টু বলেন, তামাকের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে কথা বলতে হবে। এখানে আপোসের কোনো সুযোগ নেই। যারা তামাক নিয়ে আন্দোলন করে তাদের বিভিন্ন
জায়গা থেকে হুমকি দেওয়া হয়। তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি সরকারকে দেখতে হবে। ।
তামাক বিরোধী সংগঠন মানবিক’র উপদেষ্টা রফিকুল ইসলাম মিলন বলেন, তামাকের বিরুদ্ধে প্রচারণায় টোবাকো কোম্পানিগুলোবাধা দেয়। গণমাধ্যমকেও তারা ‘ম্যানেজ’ করে ফেলে।
আলোচনা অংশ নিয়ে ম্যাজিস্ট্রেট আল আমিন বলেন, আইনের দুর্বলতার কারণে অনেক ক্ষেত্রে তামাকবিরোধী আইন কার্যকর করা যাচ্ছে না।
তিনি বলেন, তামাকের ওপর কর না বাড়ানো জন্য সংসদ সদস্যরা এনবিআরকে জিও চিঠি দেন এটা খুবই দুঃখজনক।
ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অ্যান্ড হসপিটালের অধ্যাপক সোহেল রেজা চৌধুরী বলেন, বিশ্বব্যাংক ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণায় বলা হয়েছে, ১০ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধি ঘটলে দরিদ্র দেশগুলোতে ধূমপানের হার কমবে ৩৬ ভাগ ও তামাকজনিত মৃত্যু কমবে নয় ভাগ, এছাড়া বাড়বে রাজস্বও।
সেমিনারে তামাকজাত দ্রব্যের ওপর কর বৃদ্ধি ও মূল্য বৃদ্ধির ক্ষেত্রে কিছু সুপারিশ পেশ করেন বক্তারা। তাদের দাবি, সব ধরনের তামাকজাত দ্রব্য করের আওতায় আনার পাশাপাশি বিড়ি-সিগারেটসহ সকল প্রকার তামাকের ওপর প্রতিবছর কমপক্ষে ২০ শতাংশ কর বৃদ্ধি করতে হবে।
সেমিনারে আরও জানানো হয়, বর্তমানে বাংলাদেশের প্রায় চার কোটি ২৩ লাখ মানুষ তামাক জাতীয় দ্রব্য সেবন করেন। এর মধ্যে প্রায় ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ মানুষ সিগারেট সেবন করে। ৬০ ভাগ মানুষ সস্তা মূল্যের সিগারেট সেবন করে। এসবগুলোর আনুমানিক মূল্য এক কোটি ৭৫ লাখের কাছাকাছি।
বক্তারা দাবি জানান, বিড়ি, সিগারেটসহ সকল প্রকার তামাকজাত দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধির পাশাপাশি তামাকজাত দ্রব্যের ওপর কর বৃদ্ধির একটি নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। এছাড়া, তামাকজাত দ্রব্যের ওপর ২ থেকে ৪ শতাংশ স্বাস্থ্যকর নির্ধারণ করতে হবে, যেটা তামাক নিয়ন্ত্রণ ও জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে ব্যয় করা হবে।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ তামাকবিরোধী জোটের নির্বাহী সদস্য বিধান চন্দ্র পাল ও নির্বাহী সম্পাদক আমিনুল ইসলাম সুজন।
বাংলাদেশ সময়: ১৩১৭ ঘণ্টা, মে ৩০, ২০১৪