ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

ইবোলা রোগী খুলনায়!

মাহবুবুর রহমান মুন্না, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫৫৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৮, ২০১৪
ইবোলা রোগী খুলনায়!

খুলনা: বুলু নামের ইবোলা রোগী খুলনাতে অবস্থান করছেন। পশ্চিম আফ্রিকা থেকে তিনি বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন।

খুলনার সিভিল সার্জনকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের এক কর্মকর্তার এমন ফোন বার্তার ভিত্তিতে তোলপাড় শুরু হয়েছে খুলনায়। নড়েচড়ে বসেছে খুলনার স্বাস্থ্য বিভাগ। গত ৫ দিন ধরে বিভাগের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকে হন্যে হয়ে খোঁজা হচ্ছে ওই ইবোলা আক্রান্ত বুলুকে। কিন্তু সন্ধান মেলেনি তার।

জানা যায়, পশ্চিম আফ্রিকায় মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছে ইবোলা ভাইরাস। ইতোমধ্যে বহু লোক মারা গেছেন। ইবোলা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে বিশ্বব্যাপী ঘোষণা করা হয়েছে জরুরি অবস্থা। বাংলাদেশ সরকার বিষয়টিকে অধিক গুরুত্ব দিচ্ছে।

খুলনার সিভিল সার্জন ডা. মো. ইয়াছিন আলী সরদার স্বাক্ষরিত ১৩ অক্টোবরের সিএসকে/শা-৮/২০১৪/২৭৭২ নম্বর স্মারকের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঢাকার মহাখালীর স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও লাইন ডাইরেক্টর, সিডিসির টেলিফোন মারফত জানা যায়, পশ্চিম আফ্রিকা থেকে বুলু নামে একজন লোক ১২ অক্টোবর বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন এবং তিনি বর্তমানে খুলনা জেলায় অবস্থান করছেন। ওই ব্যক্তি যদি অসুস্থ হয়ে কোনো হাসপাতাল/ক্লিনিকে ভর্তি হন তবে তাকে অবশ্যই খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থাপিত আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করতে হবে। পরে তার জীবন-বৃত্তান্ত সিভিল সার্জন, পরিচালক (স্বাস্থ্য) এবং স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক, রোগ নিয়ন্ত্রণকে তাৎক্ষণিকভাবে জানানোর জন্য অনুরোধ করা হলো। বিষয়টি অতীব জরুরি।

বিজ্ঞপ্তিটি স্বাস্থ্য অধিদফতরের সংশ্লিষ্ট পরিচালক, খুলনার স্বাস্থ্য পরিচালক, শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালের পরিচালক, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক, খুলনা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক, খুলনার সব উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এবং সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও মেডিকেল অফিসারকেও দেওয়া হয়।

এ খরব ছড়িয়ে পড়লে খুলনার সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়।

কলেজ শিক্ষার্থী অরূপ কুমান কুন্ড ও বীমা কর্মকর্তা কবীর হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ইবোলা ভাইরাস প্রাণঘাতী। কিন্তু এ ভাইরাস সনাক্ত করার কোনো ধরনের ব্যবস্থা এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে নেই। তার উপর শোনা যাচ্ছে খুলনায় বুলু নামের এক ইবোলা আক্রান্ত রোগী রয়েছেন। এ খবর আমাদের সবাইকে আতঙ্কিত করে তুলেছে।

এদিকে গুজবে কান দিয়ে অনেক এলাকায় সম্প্রতি আফ্রিকা থেকে যারা খুলনায় এসেছেন তাদের সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখা হচ্ছে।

একটি অসমর্থিত সূত্রে জানা যায়, বুলু নয়, তবে দুলু নামের এক ব্যক্তি ১২ অক্টোবর আফ্রিকা থেকে দেশে এসেছেন। তার বয়স আনুমানিক ৫০ থেকে ৫৫ বছর। প্রথমে তিনি খুলনা এসে নগরীর লবনচরা এলাকায় ছিলেন। পরে তিন হয়ত তার আত্মীয় বাড়ি যশোর অথবা নিজ বাড়ি গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় চলে গেছেন। অবশ্য বুলু ও দুলু দু’ভাই।

নড়াইল জেলার বাসিন্দা বুলু, প্রায় একবছর আগে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে বাংলাদেশে এসেছেন। বর্তমানে তিনি খুলনা জেলাতেই আছেন। তবে তিনি ইবোলা আক্রান্ত কিনা বিষয়টি নিশ্চিত নয়।

সিভিল সার্জন ডা. মো. ইয়াছিন আলী সরদার শুক্রবার রাতে বাংলানিউজকে  বলেন, আমাকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও লাইন ডাইরেক্টর, সিডিসির টেলিফোন মারফত জানানো হয় খুলনায় বুলু নামের এক ইবোলা রোগী অবস্থান করছেন। এ তথ্যটি পাওয়ার পর সব জায়গায় বিজ্ঞপ্তির মাধ্যতে বার্তা পাঠানো হয়। সবাইকে সতর্ক থাকার জন্যও বলা হয় এবং বুলু নামের ব্যক্তিকে খোঁজা হয়। কিন্তু কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।

তিনি আরও বলেন, খুলনা একটি বড় এলাকা। বুলুর সন্ধান অব্যাহত রয়েছে।

শুধুমাত্র শোনা খবরে আতঙ্কিত না হওয়ার জন্য খুলনাবাসীকে আহবান জানান তিনি। তবে কেউ এমন ব্যক্তির সন্ধান পেলে স্বাস্থ্য বিভাগকে জানানোর জন্যও তিনি অনুরোধ জানান।

ইবোলা ভাইরাস আগে রক্তপ্রদাহজনিত জ্বর হিসাবেই সমধিক পরিচিত ছিল। ইবোলা মূলত একটি আরএনএ ভাইরাস। যেটির নামকরণ করা হয়েছে কঙ্গোর ইবোলা নদীর নাম থেকে। ইবোলা ভাইরাস গোত্রের ৫টির মধ্যে ৩টি প্রজাতি মানুষের শরীরে সংক্রমিত হয়ে গুরুতর অসুস্থ করার ক্ষমতা রাখে! বাকি ২টি মানুষের জন্য তেমন ক্ষতিকর নয়। এদের মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক হচ্ছে জাইরে  ইবোলা ভাইরাস (জাইরে হলো একটি জায়গার নাম যেখানে সর্বপ্রথম এই ভাইরাসে কোনো মানুষ আক্রান্ত হয়েছিলো)। প্রথমবার এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হার ছিল শতকার ৯০ শতাংশ! ভয়াবহ এই ভাইরাসটি মানবদেহে রক্তপাত ঘটায়। লিভার, কিডনিকে অকেজো করে দেয়, রক্তচাপ কমিয়ে দেয়, হৃৎপিণ্ডের স্পন্দন কমিয়ে দেয় এবং শ্বাস-প্রশ্বাস ব্যাহত করে।

ইবোলা ভাইরাস মানবদেহে প্রবেশের পর কয়েকদিন থেকে প্রায় ৩ সপ্তাহ কোনো লক্ষণ প্রকাশ না করেই অবস্থান করতে পারে। অর্থাৎ এর লক্ষণসমূহ পরিলক্ষিত হওয়ার জন্য সর্বোচ্চ ২১দিন লাগতে পারে। ফলে আক্রান্ত ব্যক্তি এই রোগ নিয়ে চলে যেতে পারেন এক দেশ থেকে অন্য দেশে। আর সেখানে ছড়িয়ে দিতে পারেন নিজের অজান্তেই।

এই ভাইরাসের কোনো প্রতিষেধক টিকা আবিষ্কৃত হয়নি এখনও। নেই কোনো কার্যকর ওষুধ।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ইবোলা ভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যুর হার ৯০ শতাংশ। একজন আক্রান্তের সং¯পর্শে আসলেই আক্রান্ত হচ্ছে অপরজন। মানুষ থেকে মানুষে ছড়িয়ে পড়া এই ভাইরাস বাংলাদেশের মতো ঘনবসতিপূর্ণ দেশে ঘটাতে পারে স্মরণাতীত কালের ভয়াবহ মহামারী। কারণ এখানে আমরা একই ব্যক্তির জিনিস ব্যবহার করি বহুজন, প্রতি মুহূর্তেই আমরা লেগে আছি কারো না কারো সংস্পর্শে, অফিসে, রাস্তায়, ফুটপাতে, বাসে, দোকানে।

বাংলাদেশ সময় :  ০৫৫৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৮, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।