সাভার: বর্ণাঢ্য আয়োজনে সাভারে পালিত হচ্ছে বিশ্ব অকুপেশনাল থেরাপি দিবস। অকুপেশনাল থেরাপি পেশা এবং এর চিকিৎসা সেবা সম্পর্কে দেশব্যাপী প্রচারণাই এ উদযাপনের মূল লক্ষ্য।
সোমবার (২৭ অক্টোবর) বিশ্বের ৮০টি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশেও দিবসটি উপলক্ষ্যে যৌথভাবে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সিআরপি’র অকুপেশনাল থেরাপি বিভাগ এবং বাংলাদেশ অকুপেশনাল থেরাপি অ্যাসোসিয়েশন।
দিনটি উদযাপন উপলক্ষ্যে দিনব্যাপী বিভিন্ন প্রচারণামূলক কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। সকালে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মাধ্যমে কর্মসূচির উদ্বোধন করেন সিআরপি’র প্রতিষ্ঠাতা ড. ভেলরি এ. টেইলর।
এতে অকুপেশনাল থেরাপি বিভাগের শিক্ষার্থী, অকুপেশনাল থেরাপিস্ট এবং সিআরপি’তে কর্মরত বিভিন্ন পেশার কর্মকর্তারা অংশ নেন।
পরে অকুপেশনাল থেরাপির বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভায় অংশ নেন সিআরপির নির্বাহী পরিচালক শফিকুর রহমান, সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের আবাসিক চিকিৎসক ডা. নজিবুর রহমান, সিআরপির অকুপেশনাল থেরাপি বিভাগের প্রধান জুলকার নাইন।
আলোচনায় বলা হয়, সব ক্ষেত্রে অকুপেশনাল থেরাপিস্ট কাজ করে থাকেন। মূলত: স্ট্রোক বা শরীরের এক অংশ অবশ, মাথায় প্রাপ্ত আঘাত থেকে শারীরিক সমস্যা, যে কোনো আঘাত বা রোগ থেকে হাতের সমস্যা বা হাত ব্যবহার করতে না পারা, বিশেষ কোনো রোগের পরে মনে রাখতে বা কোনো জিনিস সঠিক ভাবে চিনতে সমস্যা, অটিজম বা অপরিপূর্ণ মনোবুদ্ধি বিকাশ, কম মানসিক বুদ্ধি সম্পন্ন বাচ্চা বা ব্যক্তি, কর্মস্থল নিরাপদের জন্য পরিবেশ সঠিকভাবে ডিজাইন করা (যা কোমর, হাত বা ঘাড়ে ব্যাথা প্রতিরোধে সহায়ক), জন্ম থেকে বা জন্মের কিছুদিন পর থেকে বাচ্চাদের শারীরিক বা মানসিক সমস্যা ইত্যাদি। এসব কারণে ব্যক্তির দৈনন্দিন কাজকর্মে (নিজস্ব পরিচর্চামূলক কাজ যেমন- ব্রাশ করা, খাওয়া, গোসল করা, উৎপাদনমূলক কাজ, বিনোদনমূলক কাজে ইত্যাদি) অংশগ্রহণ বাধাপ্রাপ্ত হলে অকুপেশনাল থেরাপিস্ট চিকিৎসার মাধ্যমে বিভিন্ন কাজে অংশগ্রহণ, সহায়ক উপকরণ, স্প্লিন্ট প্রদান, পরিবেশের কাঠামোগত পরিবর্তনের মাধ্যমে ব্যক্তির দৈনন্দিন কাজে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে থাকেন।
আলোচনা সভায় বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের চিকিৎসায় অকুপেশনাল থেরাপির ভূমিকা, মানসিক স্বাস্থ্যরক্ষায় অকুপেশনাল থেরাপির ভূমিকা, কর্মক্ষেত্রে অকুপেশনাল থেরাপি কিংবা আরগোনমিক্স, বার্ধক্যে ভুলে যাওয়া রোধে অকুপেশনাল থেরাপি, মনসামাজিক সমস্যা পুনর্বাসনে অকুপেশনাল থেরাপি, সমাজভিত্তিক পুনর্বাসনে অকুপেশনাল থেরাপি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কিংবা এনজিও ভিত্তিক অকুপেশনাল থেরাপির বিষয়টি উঠে আসে।
আলোচনা সভায় বলা হয়, সড়ক দুর্ঘটনা, জটিল রোগ, ভবন ধস, প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রভৃতি কারণে বাংলাদেশে প্রতিবন্ধিতার হার দিনদিন বেড়েই চলেছে, যার সংখ্যা বর্তমানে ১০-১৫%।
প্রতিবন্ধিতার ফলে ব্যক্তি দৈনন্দিন কাজে অংশগ্রহণে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন যা স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ব্যাঘাত ঘটায়। ব্যক্তির পারিবারিক, কর্মস্থল, এবং সামাজিক জীবনে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করণে অকুপেশনাল থেরাপি চিকিৎসা সেবার চাহিদা বেড়েই চলেছে বলেও আলোচনায় উঠে আসে।
বর্তমানে বিভিন্ন সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো’তে অকুপেশনাল থেরাপি চিকিৎসা সেবা পাওয়া যাচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সিআরপি অন্যতম যা দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বৃহত্তম পুনর্বাসনকেন্দ্র, যার প্রধান শাখা রয়েছে সাভারে। এছাড়াও মিরপুর-১৪, চট্টগ্রাম, সিলেট, বরিশাল, রাজশাহীতেও এর শাখা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি সিআরপি’তে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে যা বাংলাদেশ হেলথ্ প্রফেশন্স ইনস্টিটিউট (বিএইচপিআই) নামে পরিচিত। এটিই বাংলাদেশের একমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেখানে অকুপেশনাল থেরাপি কোর্সটি (ব্যাচেলর ও ডিপ্লোমা) পরিচালিত হয় যা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা অনুষদের অধিভুক্ত এবং ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন অব অকুপেশনাল থেরাপিস্টস দ্বারা স্বীকৃত ।
বাংলাদেশ সময়: ১১৪০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৭, ২০১৪