মুন্সীগঞ্জ: কাগজেপত্রে আট বছর ধরে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল ১০০ শয্যা বিশিষ্ট হলেও চলছে ৫০ শয্যার চিকিৎসক ও জনবল দিয়ে। এর ফলে প্রতিদিন আউটডোরে ৬ থেকে ৭ শতাধিক রোগীকে মাত্র ৩ থেকে ৪ জন চিকিৎসক সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন।
খুড়িঁয়ে খুড়িঁয়ে চলা এই হাসপাতালটিতে ডাক্তার ও জনবল সঙ্কট, কর্তব্যরত ডাক্তারদের অনিয়ম এবং অবহেলায় ভেঙ্গে পড়েছে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম।
জেলার ১৫ লাখ মানুষের চিকিৎসা সেবা দেওয়ার মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালটি আজ নিজেই যেন রোগাক্রান্ত। এ অবস্থা থেকে উত্তোরণের জন্য হাসপাতালটিতে প্রয়োজনীয় ডাক্তার ও জনবল দ্রুত নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, এই হাসপাতালে চারটি সিনিয়র কনসালট্যান্ট পদের মধ্যে ৯ বছর ধরে মেডিসিন, ২ বছর ধরে নাক, কান ও গলা এবং দুই বছর ধরে চক্ষু বিভাগের কনসালট্যান্ট পদ শূন্য রয়েছে।
সার্জারি বিভাগের সিনিয়র কনসালট্যান্ট নেই, জুনিয়র দিয়ে চালানো হচ্ছে এই বিভাগটি। এর মধ্যে শ্রীনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে গত ৩১ মে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার জেনারেল হাসপাতালে যুক্ত করা হয়েছে। তিনি এখানে সপ্তাহে তিনদিন রোগী দেখেন।
এছাড়া সহকারী নার্স তিনটি, দাড়োয়ান, মালি, এমএলএসএস ও ইলেক্টিশিয়ানের পদেও জনবল নেই এই হাসপাতালে। অপরিস্কার ও অপরিচ্ছন্নতা হাসপাতালের নিত্যদিনের চেহারা।
স্থানীয়রা জানান, শুধু আবাসিক মেডিকেল অফিসার ছাড়া কোনো ডাক্তার মুন্সীগঞ্জে থাকেন না। তারা ঢাকা থেকে আসেন। এতে কর্মস্থলে বিলম্বে পৌঁছান ডাক্তাররা।
অন্যদিকে, হাসপাতালের তিনটি এম্বুলেন্সের মধ্যে দুইটি দীর্ঘদিন ধরে সম্পূর্ণ অকেজো হয়ে খোলা আকাশের নীচে পড়ে আছে। একটি সচল থাকলেও তা কয়েকদিন পর পর মেরামত করে চালু রাখা হচ্ছে। এর ফলে প্রায় সময়ই বাইরে থেকে এম্বুলেন্স ভাড়া করে রের্ফার করা রোগীকে ঢাকায় নিতে হচ্ছে।
অপরদিকে জেনারেল হাসপাতালে রোগীদের জন্য সরকারি বরাদ্দের ওষুধ চুরি করে তা বাইরে বিক্রি করা, রোগীদের খাবার সরবরাহে অনিয়মসহ ডাক্তারদের সার্টিফিকেট বাণিজ্যেরও অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের দৌরাত্ম্যেও রয়েছে।
একই সঙ্গে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালটিতে বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দালালদের কমিশন বাণিজ্যে অতিষ্ঠ রোগীরা। হাসপাতালটিকে একরকম জিম্মি করে রেখেছে এসব দালালরা। হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রতিবাদ করলে দালালদের হাতে নাজেহাল হতে হয়।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, ২০০৬ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালকে ৫০ শয্যা থেকে ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। কিন্তু এর পর ৮ বছর ধরে সেই ৫০ শয্যার জনবল দিয়েই কাজ চলছে। তাও আবার ৫০ শয্যার লোকবলও নেই হাসপাতালে। এ অবস্থার উন্নতি তো দূরে থাক রাজধানীর কাছের জেলা মুন্সীগঞ্জের জেনারেল হাসপাতালটি দিনদিন আরও অবনতির দিকে যাচ্ছে।
হাসপাতালের প্রশাসনিক শাখার কর্মকর্তা মো. মোখলেছুর রহমান জানান, ১০০ শয্যার হাসপাতালের জন্য ডাক্তারসহ লোকবলের প্রয়োজন ১৫৬ জন। এর মধ্যে বর্তমানে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে কর্মরত আছেন ৯৩ জন। সেই হিসেবে ডাক্তারসহ ৬৩ জন লোকবলের পদ শূন্য রয়েছে।
তিনি জানান, এসব সমস্যা নিরসনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ডিজি অফিস থেকে সংশ্লিষ্ট ফাইল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এসব শূন্য পদে নিয়োগ কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগ সূত্র জানায়, ডাক্তার সঙ্কটে হাসপাতালে প্রতিদিন আউটডোরের ৬ থেকে ৭ শ’ রোগীকে দেখছেন মাত্র ৪ জন ডাক্তার। একজন ডাক্তার গড়ে ১৫০ জনের অধিক রোগী দেখায় রোগীরাও সঠিক চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন না। ডাক্তারকেও হিমশিম খেতে হচ্ছে।
মাঝে মধ্যে কোনো ডাক্তার ছুটিতে গেলে ২ থেকে ৩ জন ডাক্তার দিয়েই এই ৬-৭শ’ রোড়ী দেখতে হয়।
মুন্সীগঞ্জের সিভিল সার্জন কাজী শরীফুল আলম জানান, কনসালট্যান্ট পদ শূন্য থাকায় কর্তব্যরত ডাক্তারদের চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে এ কথা সত্য। এ অবস্থায় হাসপাতালের ডাক্তারসহ জনবল সঙ্কট নিরসন করতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
হাসপাতালের ওষুধ বাহিরে বিক্রি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। যদি কারও বিরুদ্ধে এ ধরনের কাজ করার প্রমাণ পাওয়া যায় তবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
চিকিৎসকদের সার্টিফিকেট বাণিজ্য ও অনিয়ম সম্পর্কে তিনি বলেন, এক্ষেত্রে যদি কারও বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায় তবে কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেবে।
বাংলাদেশ সময়: ০১৪৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৮, ২০১৪