বগুড়া: বগুড়ায় হাত কাটা, পা কাটা, পোড়া, মাথা ফাটা, যাই হোক না কেন, প্রথমে যে স্থানটিতে ছুটে যায় মানুষ তার নাম সরকারী মোহাম্মদ আলী হাসপাতাল। সৃষ্টিকাল থেকেই এ অঞ্চলের মানুষের জন্য হাসপাতালটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও কালের বিবর্তনে বর্তমান সময়ে জনবল ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি সঙ্কটের মুখে সঠিক মানের সেবা দিনে পারছেন না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
অভিযোগ রয়েছে, গুরুত্বপূর্ণ এই হাসপাতালটি জনবল ও রক্ষণাবেক্ষণসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত। এরপরও রয়েছে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের দুর্নীতি। হাসপাতালের সার্জারি, গাইনি, অর্থোপেডিক্স বা শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি হয়ে প্রথম দিনেই বেড পায় এমন রোগীর সংখ্যা খুবই কম। কমপক্ষে ২-৩ দিন বারান্দায় কিংবা ওয়ার্ডের মেঝেতে থেকে থাকার পর বেড নিতে হয় তাদেরকে।
হয়তো এসব বিবেচনায় নিয়েই দু’দিন আগে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমকে ১৬ সমস্যার কাগজ (চাহিদাপত্র) ধরিয়ে দেন ২৫০ শয্যার হাসপাতালের সদ্য নিয়োগ পাওয়া তত্ত্বাবধায়ক। একইসঙ্গে সমস্যাগুলো দ্রুত সমাধান করা জরুরি বলেও মন্ত্রীকে অবগত করেন হাসপাতালের এই কর্মকর্তা।
সোমবার সরকারী মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা: শেখ মো: আরবাব হোসেন বাংলানিউজকে জানান, ছোটখাটো কিছু সমস্যা ছাড়াও ১৬ টি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা চিহ্নিত করে হয়েছে আগে থেকেই। শনিবার (৮ নভেম্বর) হাসপাতাল পরিদর্শনে আসলে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর হাতে সমস্যাগুলোর একটি তালিকা তুলে দেওয়া হয়। তাৎক্ষণিকভাবে মন্ত্রীও তার বক্তব্যে সমস্যাগুলো সমাধানের আশ্বাস দেন। এখন দেখা যাক, সমস্যাগুলো কবে সমাধান হয়।
চাহিদাপত্র অনুযায়ী জরুরি ভিত্তিতে হাসপাতালে একটি অ্যাম্বুলেন্স, মাইক্রোবাস (তত্ত্বাধায়কের জন্য), আলট্রাসনোগ্রাফি মেশিন, ইসিজি মেশিন, এনেসথেসিয়া মেশিন, সিসিইউ চালুকরণ, সিনিয়র কনসালটেন্ট এর পদ সৃষ্টি (ডিওলজি, প্যাথলজী, এনেসথেসিওলজি, অর্থপেডিক্স ও কার্ডিওলজি), সিনিয়র কনসালটেন্ট এর পদ সৃষ্টি (চর্ম, যৌন, শিশু, রক্ত, পরিসঞ্চালন, ক্লিনিক্যাল প্যাথলজি), আর. এস (গাইনি এবং নাক কান গলা), ২০ জন ইনডোর মেডিকেল অফিসার, একজন স্বাস্থ্য শিক্ষা কর্মকর্তা, একজন ষ্টোর অফিসার, ১ ডিকেল রেকর্ড কিপার, ৫ জন টিকিট বিক্রয়কারী ও ২ জন পরিসঞ্চালন সহকারী প্রয়োজন।
হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) এটিএম. নুরুজ্জামান বাংলানিউজকে জানান, তৎকালীন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নবাব মোহাম্মদ আলী ১৯৬৪ সালে শহরের ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের ঠনঠনিয়া এলাকায় হাসপাতালটি নির্মাণ করেন। একটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থাকা সত্ত্বেও বগুড়া শহরের মাঝখানে শেরপুর রোড ঠনঠনিয়ায় অবস্থিত এই হাসপাতালটির কার্যকারিতা এতটুকু কমেনি। বরং এর গুরুত্ব এখনো আগের মতোই রয়েছে।
বগুড়া জেলা প্রশাসন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, প্রায় শত বছর আগে তৎকালীন প্রাদেশিক প্রধানমন্ত্রী নবাব মোহাম্মদ আলী এই হাসপাতালটি স্থাপন করেন। শুরু থেকেই সেবাদানে হাসপাতালটি সুনাম অর্জনে ছিল অপ্রতিরোধ্য। এরপর থেকে এই হাসপালকে ঘিরে চলে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের নানা রকম মুখরোচক প্রতিশ্রুতি। পরবর্তীতে ১৯৯৮ সালে মেডিকেল কলেজের টিচিং হাসপাতাল হিসেবে ২৫০ বেডে উন্নীত করা হয়। কিন্তু ২৫০ বেডের হাসপাতাল হলেও প্রতিদিন এখানে প্রায় ১ থেকে দেড় হাজার রোগীকে চিকিৎসা সেবা দিতে হয় চিকিৎসকদের।
বাংলাদেশ সময়: ২১২১ ঘণ্টা, ১০ নভেম্বর, ২০১৪