ঢাকা: পৃথিবীতে প্রতিবছর আনুমানিক পাঁচ কোটি ৬০ লাখ মানুষ মারা যান। এর মধ্যে ৪ কোটি ৪০ লাখ মানুষ মারা যান, শুধুমাত্র উন্নয়নশীল দেশগুলোতেই।
ধারণা করা হয়, অন্তত ৩ কোটি ৩০ লাখ মানুষের মৃত্যুর আগে ব্যথামুক্তি এবং অন্যান্য চিকিৎসা সেবার প্রয়োজন পড়ে।
তবে পৃথিবীতে নিরাময়হীন রোগীর সঠিক পরিসংখ্যান নেই।
২০০৭ সালে শুধুমাত্র ক্যান্সার রোগে সারাবিশ্বে মারা গেছেন প্রায় ৭০ লাখ মানুষ এবং একই সময়ে এইডস রোগে মৃতের সংখ্যা ছিল ২০ লাখ। আক্রান্তের শতকরা ৭০ ভাগ মৃত্যুর আগে কঠিন শারীরিক ব্যথা সহ্য করেছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাত্র স্বল্প প্রশিক্ষণে এ সব মানুষকে সেবা দিয়ে তাদের মৃত্যু ব্যথাহীন নিশ্চিত করা সম্ভব। নিরাময়-অযোগ্য রোগীর ব্যথাহীন মৃত্যু নিশ্চিত সম্ভব প্যালিয়াটিভ কেয়ারের মাধ্যমে।
ধারণা করা হয়, বর্তমান হারে বৃদ্ধি পেলে প্রতিবছর নতুন ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা দাঁড়াবে দুই কোটি ৪০ লাখে। আবার অনেক রোগ আছে, যা পুরোপুরি ভালো হওয়ার নয়। যেমন, বিশেষ ধরনের ক্যান্সার, পক্ষাঘাতগ্রস্ততা এ ধরনের একটি রোগ। সাধারণত, এমন রোগীর ক্ষেত্রে তার পরিবারকে অনেক সময় বলা হয়, আর কিছু করার নেই। বাড়ি নিয়ে যান।
কিন্তু, প্যালিয়াটিভ কেয়ার এসব রোগী ও তার পরিবারকে দূরে ঠেলে না দিয়ে সহায়তার হাত বাড়ায়। প্যালিয়াটিভ কেয়ারের মতে, ‘কিছুই করার নেই’ একটি ভুল ও পালিয়ে বেড়ানোর মানসিকতা।
প্যালিয়াটিভ কেয়ার ব্যবস্থা চিকিৎসা সেবা ও সমাজবিজ্ঞানের এক নতুন ধারণা। নিরাময় অযোগ্য রোগীর চিকিৎসা ও সেবার ধারণাটি বর্তমান পৃথিবীতে ‘প্যালিয়াটিভ কেয়ার’ নামে পরিচিত।
নিরাময়-অযোগ্য রোগে আক্রান্ত মানুষ নানা ধরনের শারীরিক উপসর্গ, মানসিক ও সামাজিক সংকটে পড়েন, যা পুরো পরিবারকে বিপর্যস্ত করে ফেলে। অথচ বর্তমান স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা মূলত, প্রতিরোধ আর নিরাময়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। অসুখ-বিসুখ যেন আর কখনো না হয়, আর হলেও যেন তাড়াতাড়ি ভালো হয়ে যায়, সবাই সেটাই চান।
এদিকে, বাংলাদেশে ক্যান্সার রোগীর কোনো নির্ভরযোগ্য পরিসংখ্যান নেই। ধারণা করা হয়, দেশের প্রায় ১০ লাখ ক্যান্সার রোগী রয়েছেন এবং প্রতিবছর ২ থেকে ৩ লাখ মানুষ নতুন করে ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা মনে করেন, এ ধরনের রোগীর শতকরা ৭০ থেকে ৮০ ভাগ নিরাময়-অযোগ্য অবস্থায় চিকিৎসকের কাছে আসেন। কিন্তু আমাদের দেশে তাদের চিকিৎসায় কোনো সুসংগঠিত ব্যবস্থা নেই। অথচ অল্প খরচে ও প্রশিক্ষণে পৃথিবীর ৪৫টি দেশ নিরাময়-অযোগ্য রোগে আক্রান্তদের জন্য একটি জাতীয় উপসর্গ প্রশমন চিকিৎসা সেবা দিতে পারছে। সেই সঙ্গে অন্তিম সময় ব্যথামুক্ত নিশ্চিত করতে পেরেছে।
ভারত, স্পেন, উগান্ডা ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো উন্নয়নশীল দেশগুলো প্যালিয়াটিভ সেবা ব্যবস্থায় নতুন মাত্রা সংযোজন করেছে। ১৯৬৪ সাল থেকে চিকিৎসাবিজ্ঞান প্যালিয়াটিভ কেয়ার বিষয়টিকে জ্ঞানচর্চা ও গবেষণার অন্তর্ভুক্ত করেছে।
২০১১ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষায়িত এই বিভাগের অন্তঃবিভাগ ও বহিঃবিভাগে পরামর্শ গ্রহণকারী ও ভর্তি হওয়া মানুষের সংখ্যায় বোঝা যায়, এ রোগের ভয়াবহতার চিত্র।
প্যালিয়াটিভ সেবা বিষয়ে মতবিনিময় সভা
প্যালিয়াটিভ সেবা কার্যক্রম সর্ম্পকে সবাইকে জানানো ও যুক্ত করতে এবং আলোচনার মাধ্যমে করণীয় বের করতে মতবিনিময় সভার আয়োজন করেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় সেন্টার ফর প্যালিয়াটিভ কেয়ার।
১৮ ফেব্রুয়ারি (বুধবার) সকাল ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মিল্টন হলে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়েছে।
প্যালিয়াটিভ কেয়ারের দায়িত্বতে থাকা মানুষেরা মনে করেন, মানুষ কেবল শরীর-নির্ভর নয় বরং মন, জীবনী শক্তি, আবেগ এমনকি পরিবার এবং সমাজও তার অস্তিত্বের অংশ। সুতরাং, একজন রোগীকে যখন শারীরিক ও অন্যান্য সেবা দেওয়া সম্ভব হবে, তখনই এটিকে ‘সম্পূর্ণ সেবা’ বলা যাবে। নিরাময়-অযোগ্য রোগে আক্রান্ত বিশাল জনগোষ্ঠীর প্রয়োজনীয় সেবা নিশ্চিত করা শুধুমাত্র চিকিৎসাকেন্দ্রগুলোর পক্ষে এককভাবে করা সম্ভব নয়।
বাংলাদেশ সময়: ২০১৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১৫