ঢাকা: মা ও নবজাতকের মৃত্যুর হার তুলনামূলকভাবে বেশি এমন জেলায় উন্নয়ন সহযোগীরা (স্টেক হোল্ডার) কিছু প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।
এর মধ্যে অন্যতম জাতিসংঘ শিশু তহবিল (ইউনিসেফ), বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও), জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ), যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (ইউএসএইড)।
এর মধ্যে অন্যতম প্রকল্প হচ্ছে প্রসূতি ও নবজাতকের সমন্বিত স্বাস্থ্যসেবা (এমএনসিএস), ইন্টারন্যাশনাল মেটার্নাল নিউবর্ন অ্যান্ড চাইল্ড হেলথ (আইএমএনসিএইচ), মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্য পরিচর্যা (এমএনএইচআই), মা ও শিশু পরিচর্যা (মামনি) প্রকল্প।
কিন্তু, মাতৃমৃত্যু ও নবজাতকের মৃত্যু হ্রাসে প্রকল্পগুলো আপাদত দৃষ্টিতে সঠিক অবদান রাখতে পারছে না বলে মনে করে পরিকল্পনা কমিশন।
কমিশন মনে করে, প্রকল্পগুলো মূল্যায়ন পরিকল্পনা বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে সর্বোচ্চ পন্থায় হয় না।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, মা ও নবজাতকের মৃত্যু হার রোধে পুরোপুরি সফলতা অর্জন করা সম্ভব হয়নি। এখনও মোট জনসংখ্যার মধ্যে প্রতিবছর প্রায় ১২ হাজার মা প্রসবজনিত জটিলতায় মারা যান।
সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল-এমডিজি) অনুযায়ী, মাতৃমৃত্যু হার ৪ ভাগের ৩ ভাগ ও নবজাতকের মৃত্যু হার ৩ ভাগের ২ ভাগে কমিয়ে আনার লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার। সেই লক্ষ্যে মা ও নবজাতকের মৃত্যু যেসব জেলায় বেশি, সে সব জেলায় বৈজ্ঞানিক পন্থা প্রয়োগ করা হবে।
সেফ মাদারহুড প্রোমোশন প্রজেক্ট (এসএমপিপি) শীর্ষক কারিগরি সহায়তা প্রকল্পের আওতায় এই উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, ১৬ ফেব্রুয়ারি প্রকল্পের ওপর বিশেষ প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (এসপিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এতে সভাপতিত্ব করেন পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য হুমায়ুন খালিদ।
পরিকল্পনা কমিশনের স্বাস্থ্য উইংয়ের এক কর্মকর্তা বৈঠক প্রসঙ্গে বলেন, মা ও নবজাতকের মৃত্যু রোধে কিছু প্রকল্প চলমান আছে। তবে প্রকল্পগুলো মূল্যায়ন পরিকল্পনা বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে সর্বোচ্চ পন্থায় হয় না। সেই লক্ষ্যে প্রকল্পগুলো আরো বৈজ্ঞানিক পন্থা অবলম্বন করে বাস্তবায়ন করা হবে; যাতে করে মা ও নবজাতকের মৃত্যু সংখ্যা কমিয়ে আনা সম্ভব হয়।
বৈঠকে বলা হয়, প্রকল্পটির আওতায় জেলা সদর হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে স্বাস্থ্য সেবার মান উন্নয়নের জন্য নানা ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা যায়, মা ও নবজাতক মৃত্যু রোধে বৈজ্ঞানিক গবেষণায় প্রায় ১৬ কোটি ৩২ লাখ টাকা খরচ করা হবে। প্রকল্পটি স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় ২০১৬ সালে শুরু করে ২০১৮ সাল নাগাদ শেষ করবে, যার অভিজ্ঞতাপরবর্তী সময়ে দেশব্যাপী মা ও নবজাতক মৃত্যু রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তবে পাইলট প্রকল্প হিসেবে শুধু চাঁদপুর জেলার জন্য এক কোটি ৮ লাখ টাকা চায় আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি)।
প্রকল্পটি প্রসঙ্গে বৈঠকে উপস্থিত বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) এক প্রতিনিধি বাংলানিউজকে বলেন, রেফারেল সিস্টেম ডেভেলপের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু কমিউনিটি ক্লিনিকে রেফারেল সিস্টেম কার্যকরভাবে কাজ করছে না। এছাড়া প্রকল্পে যে গবেষণার কথা বলা হয়েছে, তা কীভাবে শেষ হবে, গবেষণার আউটপুট থেকে পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণের জন্য কী কী বিষয় পাওয়া যাবে এবং কীভাবে সমন্বয় করা হবে, তার দিকনির্দেশনা টিপিপিতে উল্লেখ নেই। এটি উল্লেখ করা জরুরি। তাহলে গবেষণার কাজ আরো ভালো হবে।
তবে বর্তমানে পাইলট প্রকল্প হিসেবে চাঁদপুর জেলাকে নির্বাচন করা হয়েছে। জাপান সরকার প্রাথমিকভাবে চাঁদপুর জেলাকে প্রকল্প এলাকা হিসেবে বিবেচনা করে অর্থায়নে সম্মত হয়েছে।
প্রকল্পের আওতায় কী ধরনের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা হবে, এ প্রশ্নের জবাবে আইসিডিডিআরবি’র এক প্রতিনিধি জানান, প্রকল্পের আওতায় তিনটি আঙ্গিকে তথ্য সংগ্রহ করা হবে। এ গুলো হচ্ছে, ফ্যাসিলিটি ইন্টারভেনশন, কমিউনিটি ইন্টারভেনশন ও ইফেকটিভ রেফারেল বিটুইন কমিউনিটি অ্যান্ড ফ্যাসিলিটি পদ্ধতি।
প্রকল্পের আওতায় মেটারনাল অ্যান্ড চাইল্ড ডেথ রিভিউ করে হেলথ ফ্যাসিলিটি ইমপ্রুভ করার বিষয়ে বৈজ্ঞানিক গবেষণা করা হবে।
প্রকল্পের আওতায়, উপজেলা পর্যায়ে হেলথ ফ্যাসিলিটি একসেস করে বিদ্যমান ফ্যাসিলিটির মধ্যে যে দূরত্ব আছে, তা শনাক্ত করা হবে। হেলথ কেয়ার প্রোভাইডারদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। উপজেলা পর্যায়ে ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এমআইএস) শক্তিশালী করা হবে। নিউবর্ন বেবিদের জন্য একটি চাইল্ড কেয়ার ইউনিট স্থাপন করা হবে।
অপরদিকে, মা ও শিশুর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে রেফারেল লিংকেজ প্রতিষ্ঠা করা হবে ও কমিউনিটি ক্লিনিকের বিভিন্ন গ্রুপের জন্য লোকাল অ্যাডভোকেসি মিটিংয়ের আয়োজন করা হবে; যাতে করে বৈজ্ঞানিক গবেষণা পরিচালনা করা সহজ হয়।
আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সদস্য হুমায়ুন খালিদ বাংলানিউজকে বলেন, মা ও নবজাতকের মৃত্যু রোধে কিছু বৈজ্ঞানিক গবেষণা করা হবে। এতে যদি সুফল পাওয়া যায় তবে দেশের সব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এটি বাস্তবায়িত হবে। মা ও নবজাতকের সর্বোচ্চ সুরক্ষার কথা চিন্তা করেই এই কারিগরি প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হচ্ছে।
এর মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের ট্রেনিং ও জনসচেতনতামূলক কার্যক্রমও পরিচালনা করা হবে।
তিনি আরো বলেন, পাইলট প্রকল্প হিসেবে চাঁদপুরে বৈজ্ঞানিক কার্যক্রম শুরু হবে। এর অর্জিত গবেষণা ও জ্ঞান অন্যান্য জেলায় পরিচালনা করা হবে। হাসপাতালগুলোতে ডেলিভারি করানোর সময় যে সব যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয়, সেগুলোরও পরিবর্তন করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০১৫