রংপুর: রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (রমেক) সার্জারি ও অ্যানেসথেসিওলোজি বিভাগের চিকিৎসকরা মুখোমুখি অবস্থান নেওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে অস্ত্রোপচার। এতে বিপাকে পড়েছেন রোগীরা।
এদিকে এ অবস্থার সুযোগ নিয়ে হাসপাতালের দালালরা রোগী ভাগিয়ে নিয়ে ভর্তি করাচ্ছেন বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের এক কর্মকর্তা জানান, অ্যানেসথেসিওলজিস্ট পদে চিকিৎসক সংকটের কারণে এবং সার্জারি চিকিৎসকদের সঙ্গে তাদের সমন্বয়ের অভাবে এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, প্রায় ৪০ বছর আগে ছয়শ’ শয্যা বিশিষ্ট এ হাসপাতাল চালু হয়। সে সময় হাসপাতালে ১২টি অ্যানেসথেসিওলজিস্ট এর পদ তৈরি করা হলেও কর্মরত ছিলেন মাত্র পাঁচজন।
হাসপাতাল চালুর সময় শুধুমাত্র গাইনি ও সার্জারি বিভাগে অপারেশন থিয়েটার ছিলো।
এখন এক হাজার বেডের হাসপাতাল হওয়ায় অপারেশন থিয়েটার হয়েছে আটটি। এগুলো হচ্ছে সাধারণ সার্জারি, ইউরোলজি, অর্থো সার্জারি, গাইনি, নাক, কান ও গলা, নিউরো সার্জারি, বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি এবং চক্ষু।
তবে অপারেশন থিয়েটারের সংখ্যা বাড়ানো হলেও বাড়ানো হয়নি অ্যানেসথেসিওলজিস্টের সংখ্যা। এখনও ওই পাঁচজন দিয়েই অ্যানেসথেসিয়ার কাজ করানো হচ্ছে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, হরতাল অবরোধ না থাকলে এ হাসপাতালে দুই হাজারেরও বেশি রোগী ভর্তি থাকে প্রতিদিন।
কিন্তু অ্যানেসথেসিওলজিস্টের অভাবে রোগীদের সময় মত অ্যানেসথেসিয়া দিতে না পারায় অস্ত্রোপচারে ব্যাঘাত ঘটছে।
এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি হাসপাতালের পরিচালকের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন সার্জারি বিভাগের বিভিন্ন ইউনিটে কর্মরত ১৪জন মেডিকেল অফিসার ও সহকারী রেজিস্ট্রার।
এতে তারা অ্যানেসথেসিওলজিস্ট এর অপ্রতুলতার কারণে সার্জারি বিভাগের অস্ত্রোপচার আয়োজনে বিভিন্ন সমস্যার কথা উলে¬খ করেন।
জরুরি অপারেশনের ক্ষেত্রে সময় মত অ্যানেসথেসিওলোজিস্ট না পাওয়া এবং নিয়মিত অপারেশনের ক্ষেত্রে অ্যানেসথেসিয়া পেতে প্রায় দেরি হওয়ার কথাও স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
তবে এ নিয়ে অ্যানেসথেসিওলজি বিভাগের চিকিৎসকদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
অ্যানেসথেসিওলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. সদরুল ইসলাম তালুকদার, ডা. গৌতম কুমার বিশ্বাস, ডা. বিশ্বজিৎ বর্মন এবং ডা. ওয়াহেদা চৌধুরী তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের তীব্র প্রতিবাদ জানান।
গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের সঙ্গে হাসপাতালের জনবল সংকটসহ বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আলোচনা হয়। আলোচনায় অংশ নেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত এইচ এম এরশাদ এবং রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. আব্দুল কাদের খানসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা।
বৈঠকে হাসপাতালের সমস্যা সমাধানে আশ্বাস দেন মন্ত্রী।
রমেক হাসপাতালের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. আব্দুল কাদের খান সার্জারি বিভাগের চিকিৎসকদের এই স্মারকলিপি পাওয়ার কথা স্বীকার করেন।
তিনি বলেন, অ্যানেসথেসিওলজিস্ট পদে চিকিৎসক সংকট রয়েছে। এছাড়া সার্জারি চিকিৎসক ও অ্যানেসথেসিওলজিস্টদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবে এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। পরিচালক ঢাকা থেকে এলেই বিষয়টি নিরসনে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
বালাদেশ সময়: ০০২৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৯, ২০১৫