ঢাকা: ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীরা নিয়মিত পাচ্ছেন না ব্যথা উপশমের ওষুধ মরফিন। ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর, মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর আর মানুষের অজ্ঞতার কারণে দুর্লভ হয়ে উঠেছে অতি প্রয়োজনীয় এ ওষুধ।
রোব ও সোমবার রাজধানীর উত্তরা, মহাখালী এবং শাহবাগের বেশ কয়েকটি ফার্মেসি ঘুরেও এ ওষুধ পাওয়া যায়নি। আবার শাহবাগের যে দোকানে এ ওষুধ বিক্রি হচ্ছে, তারা দাম নিচ্ছেন কয়েক গুণ বেশি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া রোগীরা হাসপাতালে থাকার সময় মরফিনের সংকট না হলেও বাড়ি ফিরে গেলে তা আর কিনতে গিয়েও পান না তারা। অনেক বেশি দামে শুধু ঢাকা থেকেই কিনতে হয় মরফিন ট্যাবলেট।
সম্প্রতি বিএসএমএমইউ’র পেলিয়াটিভ কেয়ারে কথা হয় ক্যান্সারে আক্রান্ত ৩৫ বছর বয়সী ঝর্ণার সঙ্গে। শরীরের ব্যথা কমাতে কোনো রকমে হামাগুঁড়ি দিয়ে হাসপাতালের বেডে কুঁজো হয়ে শুয়ে পড়েন তিনি। চেহারায় ব্যথার চিহ্ন ফুটে উঠেছে। এ ধরনের ব্যথা কিছুটা কমাতে সাহায্য করে মরফিন।
তিনি বলেন, ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার পর কিছুদিন প্যালিয়াটিভ কেয়ারে এবং কিছুদিন বাড়িতে ---এভাবেই দিন কাটে তার। প্যালিয়াটিভ কেয়ারে মরফিন পেলেও, শেরপুরে বাড়িতে ফিরলে সঙ্গে কিনে আনা মরফিন শেষ হয়ে গেলে অনেক সময় বিপদে পড়তে হয়।
তিনি বলেন, শেরপুরের কোথাও এ ওষুধ পাওয়া যায় না। আবার ঢাকাতেও সবখানে পেসক্রিপশন নিয়ে গেলেও ওষুধ পাওয়া যায় না।
বিএসএমএমইউ এর প্যালিয়েটিভ সেবাকেন্দ্রের প্রকল্প সমন্বয়ক অধ্যাপক নিজামুদ্দিন আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, ক্যান্সার রোগীর প্রথম সমস্যা হচ্ছে ব্যথা। বিভিন্ন স্থানে ঘা এর ব্যথায় তারা ছটফট করেন।
চিকিৎসার সীমাবদ্ধতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, পৃথিবীজুড়ে ক্যান্সার রোগীদের জন্যে মরফিন হচ্ছে স্বীকৃত ট্যাবলেট। কিন্তু আমাদের দেশে রোগীরা এই ট্যাবলেট পান না। মরফিন নিয়ে আমাদের এখানে মিথ্যা ও অপধারণা ধারণা রয়েছে। চিকিৎসকরাও এ ভ্রান্ত ধারণার শিকার। এবং এ বিষয়ে তাদের প্রশিক্ষণ নেই। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ভ্রান্ত ধারণা ও দীর্ঘসূত্রতাও একটি সমস্যা। এ কারণে বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা কর্তৃক স্বীকৃত হওয়ার পরও ব্যথার ওষুধ মরফিন কিনতে পাওয়া যায় না। এখানে কালোবাজারে চড়া দামে এ–ওষুধ পাওয়া গেলেও এমনি পাওয়া যায় না।
তিনি বলেন, এতো ব্যথা হয় যে ক্যান্সারআক্রান্ত রোগীরা ব্যথায় চিৎকার করতে থাকেন। তবে ওষুধ যে নেই! এখানে হাসপাতালে পাওয়া গেলেও, রোগী যখন বাসায় ফেরেন যায় তখন আর পান না। এখানে আজিজ মার্কেটে ১০ টাকার মরফিন ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
রাজধানীর উত্তরার সিয়াম ফার্মেসির বিক্রেতা রশিদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, মরফিন বিক্রি করতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অনুমতির প্রয়োজন হয়। সরবরাহ ও বিক্রির হিসেবও দিতে হয় অধিদপ্তরকে। অনেকেই এসব ঝামেলায় যেতে চান না। তাই মরফিন রাখা হয় না। আবার ওষুধ তৈরির প্রতিষ্ঠানগুলোরও মরফিনের বিষয়ে আগ্রহ কম। তৈরি করেন না তারা।
তবে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এ ধরনের কড়াকড়িকে অনেকেই বাড়বাড়ি হিসেবে দেখছেন।
শাহবাগের একটি ফার্মেসির বিক্রেতা বলেন, মরফিন তো আর সব দোকানে বিক্রি করা হয় না। তাই যারা বিক্রি করছে, তারা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি দামেই বিক্রি করছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্তমানে গণস্বাস্থ্য ফার্মাসিউটিক্যাল ও ইউনিমেড মরফিন ট্যাবলেট ও ইনজেকশন তৈরি করছে। তবে অনুমোদনপ্রাপ্ত ফার্মেসিগুলোতে এর সরবরাহ নিয়মিত নয়।
সরবরাহের ঘাটতি থাকায় এবং বিক্রির আইন-কানুন থাকায় শাহবাগের ফার্মেসিগুলোতে মরফিন ট্যাবলেটের প্রতি স্ট্রিপ (পাতা) বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়।
নিজামুদ্দিন আহমেদ বলেন, নানা নিয়ম কানুনের বাড়াবাড়ির কারণে আপনি ফার্মেসিতে গেলেও মরফিন কিনতে পাবেন না। মরফিন ক্যান্সারের রোগীদের অবশ্য প্রয়োজনীয় ওষুধ। এটা ন্যায্য মূল্যে পাওয়ার অধিকার তাদের অবশ্যই আছে।
বাংলাদেশ সময়: ১০১৯ ঘণ্টা, মার্চ ১০, ২০১৫