শরীয়তপুর: সরকারি স্বাস্থ্যসেবা থেকে সবচেয়ে বেশি বঞ্চিত শরীয়তপুরের চরাঞ্চলের মানুষ। এখানকার মানুষ বছরের পর বছর এভাবে বঞ্চিত হলেও দেখার যেন কেউ নেই।
৬টি উপজেলা নিয়ে গঠিত শরীয়তপুর জেলা। এ জেলার লোক সংখ্যা ১০,৮২,৩০০ জন। জেলার বুক চিরে প্রবাহিত হচ্ছে পদ্মা নদী। পদ্মা জেলার মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে নড়িয়া উপজেলার চরআত্রা, নওপয়াপাড়া, ঘড়িসার, জাজিরা উপজেলাধীন কুণ্ডেরচর, পালের চর, নাওডোবা, বিলাসপুর, ভেদেরগঞ্জ উপজেলার চরভাগা, কাঁচিকাট, উত্তর তারাবুনিয়া, দক্ষিণ তারাবুনিয়া চরসেন্সাস ইউনিয়ন। জেলা শহর থেকে এ ইউনিয়নগুলোর দূরত্ব ২৫ থেকে ৪০ কিলোমিটার।
ইউনিয়নগুলোর বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে খণ্ড খণ্ড উর্বর কিংবা অনুর্বর অনেক চর। প্রতি বছর নদী ভাঙনে নদীগর্ভে বিলীন হয় এ অঞ্চলের ভূখণ্ড। সর্বনাশা পদ্মা এ অসহায় মানুষদের সহায় সম্বল কেড়ে নিয়ে নতুন এক পরিচয় দিয়েছে নদী ভাঙনে চরবাসী। প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে আছে এ মানুষগুলো।
চরবাসীর মৌলিক অধিকারগুলোও কেউ নিশ্চিত করতে পারছে না। স্বাস্থ্যসেবা থেকে তারা চরমভাবে বঞ্চিত হচ্ছে। বিশেষ করে চরাঞ্চলের নারী ও শিশু স্বাস্থ্যসেবার দশ ভাগও পাচ্ছে না।
সুশাসনের জন্য প্রচারাভিযান সুপ্র পরিচালিত বার্ষিক সামাজিক নিরীক্ষা প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
সুশাসনের জন্য প্রচারাভিযান (সুপ্র) ২০১৪ সালে শরীয়তপুর জেলায় স্বাস্থ্যসেবার ওপর একটি সামাজিক নিরীক্ষা পরিচালনা করে।
নিরীক্ষায় পাওয়া গেছে- শরীয়তপুর জেলায় ১০০ শয্যার আধুনিক সদর হাসপাতাল ১টি, মাতৃ ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র ১টি, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ৫টি, পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ১৭টি, স্বাস্থ্য উপকেন্দ্র ১৮টি, সক্ষম দম্পতির সংখ্যা ১,৫৩৭২৫ জন, পরিবার পরিকল্পনা গ্রহণ সক্ষম দম্পতির সংখ্যা ৯৮২৭৭ জন, শরীয়তপুর জেলার স্যানিটেশন কাভারেজ ৭৫.৩১ শতাংশ।
শরীয়তপুর জেলায় সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ মানুষ বিদ্যমান সরকারি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা পরিচালিত সামগ্রিক স্বাস্থ্য সেবার সুযোগ পাচ্ছে। ৪৫ শতাংশ মৃত্যু পথযাত্রী রোগী অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ পায় না। ৮০ শতাংশ প্রসূতি নারী প্রসব পূর্ব চেকআপ থেকে বঞ্চিত। ৭৫ শতাংশ নারী রক্তশূন্যতার শিকার ও শরীয়তপুর জেলায় প্রতিজনে বার্ষিক বরাদ্দ ৯৫ পয়সা।
র্যাংকের দিক থেকে শরীয়তপুর জেলার অবস্থান ৬৪ জেলার মধ্যে ৫৮তম। চরাঞ্চলের এ অবস্থান আরও ভয়াবহ। চরে কোনো স্বাস্থ্যসেবা নেই। শরীযতপুর জেলার অবস্থান সক্রিয় গাংগেয় ভূমিতে।
সুপ্র’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- প্রাতিষ্ঠানিক সীমাবদ্ধতার পাশাপাশি ডাক্তার ও অন্যান্য কর্মকর্তা কর্মচারীদের বিভিন্ন অনিয়ম অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির জন্য জেলার সরকারি হাসপাতালের অবস্থা দিন দিন নাজুক হচ্ছে।
রোগীদের প্রতি অমনোযোগিতা ও দুর্ব্যবহার, ওষুধের দুষ্প্রাপ্যতা, শয্যার অপ্রতুলতার মতো নানা কারণে অনেক চিকিৎসা সরঞ্জামাদি এবং অন্যান্য সুযোগ সুবিধা অনেক কম।
অধিকাংশ সময় ডাক্তার, নার্স এবং অন্যান্য স্টাফরা তাদের অফিসের জন্য নির্ধারিত সময়সূচি মানেন না।
ডাক্তাররা ব্যস্ত থাকে ব্যক্তিগত চেম্বার, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মাধ্যমে অর্থ উপার্জনে। সরকারি হাসপাতালের রোগীদের তারা ব্যক্তিগত চেম্বারে আনার জন্য দালাল নিয়োগ করে এবং রোগীদের অপ্রয়োজনীয় টেস্ট করানোর জন্য নির্দিষ্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পাঠায় যাতে তারা ওই ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে কমিশন পেতে পারে।
আবার দায়িত্বরত অবস্থায় তারা মনোযোগ দিয়ে রোগী না দেখে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলায় ব্যস্ত থাকেন। সরকার হাসপাতাল থেকে যেসব ওষুধ বিনামূল্যে রোগীদের পাওয়ার কথা সেসব ওষুধ প্রতিনিয়ত বাইরে বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। রোগীদের খাবার নিয়েও চলে অনিয়ম।
বরাদ্দকৃত খাবারের মান নিয়ে রয়েছে অনেক অভিযোগ। সেবার নামে ডাক্তার, নার্স, ওয়ার্ডবয়সহ অন্যান্য স্টাফদের দুর্নীতি, অনিয়ম ও দলাদলির কারণে সরকারি চিকিৎসা সেবার বেহাল অবস্থা।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪২ ঘণ্টা, মার্চ ১৬, ২০১৫