সাতক্ষীরা: সরকারি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলো থেকে ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ওষুধ পাচ্ছে না সাতক্ষীরা জেলার প্রায় ৭৯ শতাংশ সেবাপ্রার্থী।
এছাড়া অবকাঠামোগত সমস্যা, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, চিকিৎসা উপকরণ ও পর্যাপ্ত সংখ্যক কর্মচারী না থাকায় কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এ জেলার মানুষ।
সরকারি স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে সুশাসনের জন্য প্রচারাভিযান (সুপ্র) পরিচালিত এক সামাজিক নিরীক্ষায় সাতক্ষীরার স্বাস্থ্যখাতের এ চিত্র উঠে এসেছে।
সম্প্রতি প্রকাশিত ওই সামাজিক নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পরিষ্কার টয়লেটের ব্যবস্থা থাকলেও জেলার কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে বিদ্যুৎ সংযোগ ও বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থা নেই। প্রয়োজনীয় অবকাঠামো, যন্ত্রপাতি, চিকিৎসা উপকরণ ও পর্যাপ্ত কর্মচারীর অভাবে চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রগুলোতে।
আর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলো চলছে প্রয়োজনীয় ওষুধ ও কর্মচারী সংকট নিয়ে। এসব কমপ্লেক্সে মা ও শিশুর জন্য প্রয়োজনীয় সেবা অপ্রতুল, নেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তালিকা। চালু করা হয়নি টেলিমেডিসিন ব্যবস্থাও।
ওই প্রতিবেদনে সরকারি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের চিকিৎসা সেবার পরিধি তুলে ধরে বলা হয়েছে, সাতক্ষীরা জেলায় পরিচালিত সামাজিক নিরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী ৮০ শতাংশ মানুষ মনে করেন- উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে মা ও শিশু সেবার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা আছে। তবে, সেবা গ্রহণকারীর অনুপাতে প্রয়োজনীয় কর্মী ও উপকরণ নেই বলে মনে করেন ৪০ শতাংশ উত্তরদাতা।
প্রায় ৬৩ শতাংশ রোগীই স্বাস্থ্যসেবায় কেন্দ্র প্রদেয় সেবা সম্পর্কে জানেন না। ৫৬ শতাংশ রোগীই বলেছেন, চিকিৎসকের সঙ্গে দেখা করার জন্য তাদের দীর্ঘসময় অপেক্ষা করতে হয়। প্রায় ৭৯ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী খুব কম ওষুধই তারা কেন্দ্র থেকে বিনামূল্যে পান। শতকরা প্রায় ৭৪ জন বলেছেন, তারা স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধের জন্য সরকারি ভর্তুকির কথা জানেন।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, শতকরা ১৬ জন রোগী স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা করান ও সেজন্য তাদের টাকা দিতে হয়। অভ্যন্তরীণ রোগীদের মধ্যে শতকরা ৪০ জন ওয়ার্ডে বেড পেয়েছে। তবে, কারোই হাসপাতালের কল্যাণ তহবিল সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই।
প্রতিবেদনে সাতক্ষীরার প্রতিটি নাগরিকের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে বিশুদ্ধ খাবার পানি ও বিদ্যুৎ সংযোগের ব্যবস্থাকরণ, নবজাতকের সেবার মান নিশ্চিতকরণ, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা এবং পরিবার পরিকল্পনার জন্য প্রয়োজনীয় পদ্ধতির ব্যবস্থা রাখা, কমিউনিটি ক্লিনিক ম্যানেজমেন্ট কমিটি আরো কার্যকর করা, সেবার মান বহুমুখীকরণ, অবকাঠামোগত সংস্কারের সুপারিশ করা হয়েছে।
ঠিক একইভাবে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রগুলোতে প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ, বিশেষজ্ঞ সেবা প্রদানকারীর উপস্থিতি নিশ্চিতকরণ, প্রয়োজনীয় অবকাঠামো, যন্ত্রপাতি, চিকিৎসা উপকরণ, পর্যাপ্ত জনবল, বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থা, সেবা গ্রহণকারীর অনুপাতে সেবা প্রদানকারীর সংখ্যা বাড়ানো, বিশুদ্ধ খাবার পানি ও পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে সুপ্র’র সুপারিশ মালায়।
প্রতিবেদনে উপরিকাঠামোর দুর্বলতার জন্য সেবার মান বাধাগ্রস্ত হয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোর বাজেট বৃদ্ধি করে জনবল সংকট দূরীকরণ ও মনিটরিং ব্যবস্থা শক্তিশালী করারও সুপারিশ করা হয়েছে এতে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫২ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০১৫