ভোলা: ভোলা সদর হাসপাতালে শনিবার ওষুধ কোম্পানি ওরিয়ন ইনফিউশন লিমিটেড প্রস্তুতকৃত আইভি স্যালাইনের ভেতরে শ্যাওলা পাওয়া গেছে।
এ নিয়ে ভোলার সর্বত্র তোলপাড় শুরু হয়েছে।
হাসপাতালে শনিবার সড়ক দুর্ঘটনায় আহত এক শিশুকে ওই স্যালাইন পুশ করতে গিয়ে এর ভেতরে শ্যাওলা দেখতে পান দায়িত্বরত সিনিয়র স্টাফ নার্স ঝুমা হালদার।
এরপর তিনি বিষয়টি কর্তব্য চিকিৎসককে জানালে ওই স্যালাইন বাদ দিয়ে অন্য স্যালাইন পুশ করানো হয়। সেবিকা ও চিকিৎসকের সতর্কতায় অল্পের জন্য রক্ষা পায় ওই শিশুটির জীবন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে।
স্যালাইনে শ্যাওলা থাকার সংবাদ মুহূর্তের মধ্যে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়লে তোলপাড় শুরু হয়। স্থানীয় উৎসুক জনতা হাসপাতালে এসে ভিড় জমাতে থাকেন।
এদিকে, রোগীর স্বজনরা এ ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।
ভোলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন পৌর ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ৫ নম্বর কেবিনে চিকিৎসাধীন আহত শিশু রাসেলকে (৭) স্যালাইন পুশ করাতে গিয়ে শ্যাওলা সেবিকার নজরে আসে ।
রাসেলের পিতা মোঃ মনির জানান, শনিবার সকালে একটি অটোরিকশা দুর্ঘটনায় তার ছেলে রাসেল মারাত্মক জখম হয়। মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এরপর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে দায়িত্বরত চিকিৎসক মাহমুদুল হাসান ওই রাসেলকে বেশ কিছু ওষুধসহ ইলেকট্রো ম্যাক্স-১০ আইভি নামের ১টি স্যালাইন দেওয়ার পরামর্শ দেন।
রোগীর স্বজনরা দ্রুত হাসপাতালের পাশ্ববর্তী অর্নব মেডিকেল হল নামের ওষুধের দোকান থেকে ওষুধসহ ওই স্যালইনসহ কিনে আনেন। এরপর নার্স ঝুমা হালদার ওই স্যালাইন পুশ করতে গিয়ে শ্যাওলা দেখতে পান।
ঝুমা হালদার বলেন, ‘আমি স্যালাইন পুশ করতে গিয়ে শ্যাওলা দেখতে পাই। পরে ঘটনাটি দায়িত্বরত চিকিৎসককে জানাই। ’
হাসপাতালে কত্যর্বরত চিকিৎসক ডা. মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘এ স্যালাইন রোগীকে পুশ করালে রোগীর মারাত্মক ক্ষতি হতো। এমনকি রোগীর মৃত্যুও হতে পারতো।
রোগীর স্বজনরা জানান, স্যালাইনের মোড়কে ওরিয়ন ইনফিউশন লি. লেখা রয়েছে, যা ২০০৯ সালের নভেম্বর মাসে তৈরি এবং ২০১১ সালের অক্টোবর মাস পর্যন্ত মেয়াদ আছে বলে স্যালাইনের প্যাকেটে উল্লেখ রয়েছে।
কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, মেয়াদ থাকতেও কেন স্যালাইনে শ্যাওলা পড়লো- তা নিয়ে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. শরিফ বলেন, ‘শ্যাওলাভর্তি স্যালাইনটি আমরা সংরক্ষণে রেখেছি, ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষার পর ওই ফামের্সির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’
এ ব্যাপারে ভোলার সিভিল সার্জন ডা. শাহে আলম শরীফ একই কথা জানিয়ে বলেন, ‘সরকারের ওষুধ প্রশাসনের পক্ষ থেকে ফার্মেসিগুলোতে নিয়মিত মনিটরিং না করার কারণে এমন ঘটনা ঘটছে। ’
অভিযুক্ত ফার্মেন্সি অর্নবের মালিক মোঃ নীরব দোকান বন্ধ করে পালিয়ে যাওয়ায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
সন্ধ্যা ৬টায় পাওয়া সর্বশেষ খবরে জানা যায়, এ ঘটনায় ভোলার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ আরিফুর রহমানের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালতের একটি টিম বিকেল সাড়ে ৪টায় অভিযান চালিয়ে মেয়াদোত্তীর্ণ ও ব্যবহার অনুপযোগী ওষুধ বিক্রির অভিযোগে স্থানীয় রামদাশপুর মেডিকেল হলের মোঃ মাকসুদের কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা ও ইলিশা মেডিকেল হলের মালিক মোঃ বাচ্চুর কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেছে।
উল্লেখ্য, অর্নব মেডিকেল হল ওই স্যালাইন রামদাশপুর মেডিকেল হলের কাছ থেকে কিনেছিল।
ভোলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর মোবাশ্বের আলী বলেন, ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪২ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৯, ২০১১