ঢাকা: বর্তমান সময়ে অনেকের কাছেই মধ্যরাত বেশ প্রিয় সময়। রাত জেগে পড়াশোনা, গল্পের বই পড়া, গান শোনা, সিনেমা দেখা ছাড়াও, ইন্টারনেট ব্রাউজিং ও ফেসবুক চ্যাটিং বলতে গেলে নিত্যদিনের রুটিন।
আবার ঘুমিয়ে পড়লেও মাঝরাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙে যায়। পরে চেষ্টা করলেও আর ঘুম আসে না। এটি শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে। আবার অনেকে ঘুমের ওষুধ খেয়েও ঘুমাতে পারেন না।
এ অবস্থায় এক ধরনের মানসিক চাপ সৃষ্টি হয়। ফলে তাদের মধ্যে বিছানাভীতি তৈরি হয়। একইসঙ্গে শরীর ও মনের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়, মনযোগ ব্যাহত হয়, সহজেই কোনো কিছু ভুলে যাওয়া থেকে শুরু করে মাথা ব্যথা ও নানাধরনের সমস্যা দেখা দেয়।
নিদ্রা কথন
ঘুম আমাদের সুস্থ জীবন যাপনের জন্য এক অপরিহার্য উপাদান। তবে এটাও ঠিক, ঘুম ব্যক্তির শারীরিক চাহিদার উপর নির্ভর করে। অর্থাৎ, কেউ যদি দিনে চারঘণ্টা ঘুমিয়ে সুস্থবোধ করেন, তাহলে সেটাই তার জন্য উপযুক্ত। আবার অনেকে সারারাত জেগে কাজ করার পরেও সকালে বেশ উৎফুল্ল ও তরতাজা অনুভব করেন। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, দৈনিক ছয় থেকে আটঘণ্টা ঘুম অত্যন্ত জরুরি।
অনিদ্রা বা ইনসমনিয়া
ইনসমনিয়া বা স্লিপিং ডিসঅর্ডার বলতে অনিদ্রা বা স্বল্প নিদ্রাকে বোঝায়। এ পর্যায়ে মানুষের শরীরে ঘুমের চাহিদা অপূর্ণ থেকে যায়। সেক্ষেত্রে ব্যক্তি ঘুমাতে যাওয়ার সময় বা ঘুমের মধ্যে অস্বস্তিবোধ করেন। ফলে সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর স্বাভাবিক সতেজতা অনুভূত হয় না।
ইনসমনিয়ার দুই ধরন
প্রাথমিক বা স্বল্পমেয়াদি: অতিরিক্ত কাজের চাপ, দুশ্চিন্তা, পারিবারিক দ্বন্দ্ব ও অন্যান্য নেতিবাচক ঘটনা অনিদ্রার কারণ হতে পারে। এক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে ব্যক্তির ঘুমাতে সমস্যা হয় কিন্তু তা শারীরিকভাবে কোনো ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে না। স্বল্পমেয়াদি ইনসমনিয়া কিছুদিন অর্থাৎ কয়েক সপ্তাহ স্থায়ী হয়।
ক্রনিক বা দীর্ঘমেয়াদি: অনিদ্রা যখন একমাস বা তার বেশি সময় ধরে চলতে থাকে, তখন তাকে দীর্ঘমেয়াদি ইনসমনিয়া বলে। এ ধরনের ইনসমোনিয়ার কারণ শারীরিক ও মানসিক অবসাদ, অ্যাজমা, আর্থ্রাইটিস, অ্যালকোহল সেবন, ওষুধের কুফল ইত্যাদি।
কারণ
ইনসমনিয়া নিয়ে বিভিন্ন গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী বিশেষজ্ঞরা কিছু নির্দিষ্ট কারণ সনাক্ত করেছেন। জীবনের বড় কোনো ক্ষতি ফলে সৃষ্ট মানসিক চাপ যেমন, চাকরি হারানো বা চাকরি বদলের ফলে নতুন পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে না পারা, প্রিয় কারও মৃত্যু, ডিভোর্স, বৈষম্য বা পারিবারিক কলহের ফলে ইনসমনিয়া হতে পারে। অন্যদিকে রয়েছে শারীরিক অসুস্থতা, ঠাণ্ডা, অ্যালার্জি, উচ্চরক্তচাপ ও অ্যাজমার জন্য ব্যবহৃত ওষুধ দীর্ঘদিন ধরে সেবন কিংবা স্লিপিং শিডিউল বারবার পাল্টে যাওয়া।
লক্ষ্মণ
ইনসমনিয়ার কতিপয় লক্ষ্মণগুলো হলো পরিপূর্ণ ঘুম না হওয়া, মধ্যরাতে ঘুম ভেঙে যাওয়া ও পুনরায় ঘুম না আসা, খুব ভোরে ঘুম ভাঙা ও ক্লান্তিবোধ করা, রাত হলে অস্বস্তিবোধ ও বিছানাভীতি কাজ করা, দিনের মধ্যভাগে বা সকালে ঘুমানো এবং কাজকর্মে উদ্যম হারিয়ে ফেলা ও মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া।
করণীয়
যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা ইউনিভার্সিটির অ্যারিজোনা সেন্টার ফর ইনটিগ্রেটিভ মেডিসিনের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক ও পরিচালক ডক্টর অ্যান্ড্রু ওয়েইলের পরামর্শ মতে, যদি ইনসমনিয়ার লক্ষ্মণ দেখা দেয় তাহলে নোটবুকে একটি ছোট্ট হিসেব টুকে নিন। তাতে প্রতিদিনের কাজের তালিকা, ঘুমাতে যাওয়া ও ঘুম থেকে ওঠার সময় লিখুন। প্রতিদিন কতটুকু ক্যাফেইন (চা বা কফি) নিচ্ছেন, খাদ্যাভ্যাসে কী রয়েছে তাও লিখুন। প্রতিদিন কী কী ঘটনা ঘটছে, তা মানসিক দিক থেকে কতটা সহনীয় বা আপনি কতটা উদ্বিঘ্ন তা লিপিবদ্ধ করুন।
ডক্টর অ্যান্ড্রু ওয়েইল ইনসমনিয়া রোগীদের জন্য আরও কিছু পরামর্শ দিয়েছেন, শোবার ঘরের সঠিক তাপমাত্রা নিশ্চিত করা, শোবার ঘরে টিভি-কম্পিউটার না রাখা, প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যাওয়া ও ঘুম থেকে ওঠা। এছাড়া রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে বড় কেনো যুক্তিতর্কে না যাওয়া, টিভি না দেখা ও ভিডিও গেমস না খেলাই ভালো। তবে সফট মিউজিক শোনা যেতে পারে।
অতিরিক্ত চা কফি খাওয়ার মাত্রা কমিয়ে আনুন। ঘুমাতে যাওয়ার আগে প্রার্থনা করুন। এটি মানসিক প্রশান্তি ফিরে পেতে সহায়তা করবে। নিয়মিত মেডিটেশন বা যোগব্যায়াম করার অভ্যাস করতে পারেন। আর সবশেষে একজন ভালো বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
বাংলাদেশ সময়: ০১২২ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৫, ২০১৫
এসএস