ঢাকা: মৃত্যুঝুঁকি ও নানামুখী ক্ষতিকর প্রভাব থাকলেও, দিনে দিনে ধূমপায়ীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। ধূমপান শরীরের জন্য ভীষণ ক্ষতিকারক।
অনেকেই মনে করেন, ধূমপানের মাধ্যমে শরীরে নিকোটিন প্রবেশ করে, যা খিদে কমায়, ফলে ওজন কমে।
তবে চলতি বছর বিজ্ঞানীরা এ ধারণাকে পুরোপুরি উল্টো প্রমাণ করেছেন। জানিয়েছেন, বরং ধূমপান বর্জন করলেই কমবে শরীরের বাড়তি ওজন।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ধূমপানের মাধ্যমে মিষ্টি ও ফ্যাট জাতীয় খাবার খাওয়ার চাহিদা বেড়ে যায়, ফলে ওজন কমার বদলে বেড়ে যায় অনেকগুণ।
সাধারণত মিষ্টি জাতীয় খাবার খাওয়ার দৃঢ় ইচ্ছে তৈরি হলে, প্রথমবার খাবার পর চাহিদা পূরণ না হলেও দ্বিতীয়বার চাহিদা কিছুটা কমে যায়। তৃতীয়বার আর খাওয়ার চাহিদা থাকে না বললেই চলে।
কিন্তু এ গবেষণায় দেখা গেছে, ধূমপানের মাধ্যমে স্থূলকায় নারীদের জিহ্বায় মিষ্টি ও ফ্যাট জাতীয় খাবারের স্বাদ নিস্তেজ হয়ে যায়। এতে তারা স্বাদ পরিপূর্ণ করার জন্য বারবার উচ্চ ক্যালরি সম্পন্ন খাবার খান, ফলে তা ওজন বাড়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
এ বিষয়টি গবেষণার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নারীদের উপর একটি বিশেষ পরীক্ষা চালানো হয়। ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ইয়ানিনা পেপিনো ও ফিলাডেলফিয়ার মনেল সেন্টারের বায়ো সাইকোলজিস্ট জুলি ম্যানিয়েলা ২১ থেকে ৪১ বছর বয়সী নারীদের উপর এ গবেষণা চালান।
গবেষকরা নারীদের চারটি টিমে ভাগ করেন। স্থূলকায় ধূমপায়ী, স্থূলকায় তবে ধূমপায়ী নন, ধূমপায়ী তবে স্বাভাবিক ওজন ও স্বাভাবিক ওজন তবে ধূমপায়ী নন। তাদের সামনে বিভিন্ন রকমের ভ্যানিলা পুডিং রাখা হয়। এসব ভ্যানিলা পুডিংয়ের মিষ্টির পরিমাণ ভিন্ন ছিল। পরীক্ষার সময় তাদের কাছে পুডিংয়ের মিষ্টি পরিমাণ কেমন, তা জানতে চাওয়া হয়।
পেপিনো জানান, স্থূলকায় ধূমপায়ী নারীরা অন্য টিমের নারীদের তুলনায় পুডিংয়ের মিষ্টতা ও ক্রিমিভাব কম অনুভব করেছেন।
তিনি আরও জানান, ধূমপায়ী নারীরা তীব্র ক্ষুধা অনুভব করলেও খাবারের মিষ্টতা অনুভব করতে পারেন না, ফলে স্বাভাবিকভাবেই তারা বেশি খেয়ে ফেলেন।
স্থুলতা ও ধূমপান স্বাভাবিকভাবেই হৃদপিণ্ডের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। এছাড়া হজমের ক্ষেত্রেও এটি মোটেও সুফল বয়ে আনে না বলে মত বিশেষজ্ঞদের।
সবচেয়ে আশ্চর্যজনক ঘটনা, যুক্তরাষ্ট্রের নয় লাখ নারীর মধ্যে প্রায় বিশ ভাগই ধূমপায়ী। ধূমপানকে তারা ওজন কমানোর এক সহজ পদ্ধতি হিসেবেই মানেন বলে জানান পেপিনো।
বিগত বছরের গবেষণাগুলোতে দেখা গেছে, ধূমপায়ীরা অধূমপায়ীদের তুলনায় অতিরিক্ত মাংস, অ্যালকোহল ও চর্বি জাতীয় খাবার খান। একই সঙ্গে তারা ভিটামিন সি কম খান বলেও জানা গেছে।
অন্যদিকে, যারা আগে ধূমপায়ী ছিলেন কিন্তু বর্তমানে ছেড়ে দিয়েছেন, তাদের ক্ষেত্রেও ওজন হঠাতই বেড়ে গেছে।
এক্ষেত্রে লন্ডনের ইউনিভার্সিটি কলেজের তামাক গবেষণা পরিচালক রবার্ট ওয়েস্ট জানান, তামাক ছেড়ে দেওয়ার পর শরীরে জমা নিকেটিন হজম ক্রিয়া বাড়তে শুরু করে, ফলে মুটিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
এক্ষেত্রে শরীরের ওজন চার থেকে পাঁচ কেজি বাড়তে পারে। তবে দেখা গেছে, ১৬ শতাংশ ব্যক্তি যারা ধূমপান ছেড়েছেন, তাদের ওজন সত্যিই অগের তুলনায় কমেছে।
বাংলাদেশ সময়: ০১৩৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ২২, ২০১৫
এসএস