রংপুর: রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার ৩১ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ৫০ শয্যায় উন্নীতকরণের জন্য চার বছর আগে ভবন নির্মাণ ও যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হলেও অর্থ বরাদ্দ না থাকায় তা আজও চালু হয়নি। তবে কমপ্লেক্সের অপারেশন থিয়েটার ও যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে সার্জারি কনসালট্যান্ট ডা. সৈয়দা শাহনাজ নশরুল্লাহ ইলোরা চালাচ্ছেন অস্ত্রোপচার ব্যবসা।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একমাত্র এক্সরে মেশিনটি চার মাস আগে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হলেও তা সরিয়ে নেওয়া হয়নি। সরবরাহ করা হয়নি নতুন এক্সরে মেশিন। চিকিৎসকের অভাবে ভেঙে পড়েছে চিকিৎসা কার্যক্রম। ওষুধ না পেয়ে ও নিম্নমানের খাবার সরবরাহে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসা রোগীদের মাঝে দেখা দিয়েছে ক্ষোভ।
জানা যায়, ১৯৬৫ সালে উপজেলার শাহাপুর এলাকায় ৩১ শয্যার এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি স্থাপন করা হয়। ২০১০ সালে সেটিকে ৫০ শয্যায় উন্নীতকরণে নির্মাণ করা হয় নতুন ভবন। আর ওই ভবনে অপারেশন থিয়েটার স্থাপনের পাশাপাশি সরবরাহ করা হয় অস্ত্রোপচারের যন্ত্রপাতি। কিন্তু অর্থ বরাদ্দ না থাকায় সেটিকে আজও চালু করতে পারেনি স্বাস্থ্য অধিদফতর।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সার্জারি কনসালট্যান্ট ডা. সৈয়দা শাহনাজ নশরুল্লাহ ইলোরার নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি সিণ্ডিকেট গড়ে উঠেছে। যারা অস্ত্রোপচার করে রোগীদের থেকে হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা। অথচ নিয়ম মোতাবেক স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অস্ত্রোপচারের জন্য কোন ফি দিতে হয় না।
সিণ্ডিকেটের অন্য সদস্যরা হলেন কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার ডা. আব্দুল মতিন, কর্মচারী মোফাজ্জল হোসেন, বহিরাগত হোসেন আলী ও দিপ্তী রাণী। এরা উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে রোগী সংগ্রহ করে পাঠিয়ে দেন ডা. ইলোরার কাছে। তিনি মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারেই অস্ত্রোপচার করে থাকেন। আর ওই টাকার ভাগ চলে যায় সিণ্ডিকেট সদস্যসহ স্থানীয় প্যাথলজি ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে।
দীর্ঘদিন ধরে প্রকাশ্যে এই কার্যক্রম চললেও প্রভাবশালী চিকিৎসকের ভয়ে কেউ মুখ খোলার সাহস পাননি।
এ ব্যাপারে ডা. ইলোরার সঙ্গে কথা হলে তিনি সাফ জানিয়ে দেন, সিভিল সার্জনের অনুমতি আছে। এ নিয়ে লেখালেখি করে কোনও লাভ নেই।
এদিকে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মোট নয়জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও প্রশাসনিক কাজে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে সর্বদা’ই ব্যস্ত থাকতে হয়। এছাড়া আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তার পদটি দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে। কনসালট্যান্ট মেডিকেল অফিসারের চারটি পদ থাকলেও অ্যানেসথেসিয়া কনসালট্যান্ট রয়েছেন ডেপুটিশনে।
ডেন্টাল সার্জন থাকলেও যন্ত্রপাতির অভাবে তার পক্ষে সেবা দেওয়া সম্ভব হয় না। বাকি কনসালট্যান্টরা সবাই রংপুর শহরে থাকেন। তারা কখন আসেন আর যান তা রোগীরা বুঝতে পারেন না।
এছাড়াও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রোগীদের অভিযোগ, চিকিৎসাপত্রে লেখা ওষুধের সকই কিনতে হয় বাইরের দোকান থেকে।
এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আমিনুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলা হলে তিনি জানান, অস্ত্রোপচারের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। নতুন এক্সরে মেশিন সরবরাহের জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্যের ডিও লেটার দিয়ে আবেদন করা হয়েছে। তবে তিনি ওষুধ সরবরাহ না থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেন।
রংপুরের সিভিল সার্জন ডা. মোজাম্মেল হোসেনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, অপারেশন থিয়েটারে যদি বিনামূল্যে অপারেশন হয় তাহলে আপত্তি নেই। তবে অর্থের বিনিময়ে কেউ যদি অপারেশন করে থাকেন তাহলে তা অবশ্যই খতিয়ে দেখা হবে। এ সময় তিনি স্থানীয় সংসদ সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগ করার অনুরোধ করে বলেন, তার সহযোগিতা ছাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সেবা কার্যক্রমকে গতিশীল করা সম্ভব নয়।
এ বিষয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য ডিউক চৌধুরী বলেছেন, চিকিৎসকদের বেশিরভাগই স্থানীয়। এ কারণে তারা নিজেদের খেয়াল খুশিতে চলাফেরা করছেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৭০৭ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০১৫
আরএ/এসইউ