ঢাকা, বুধবার, ১৯ আষাঢ় ১৪৩১, ০৩ জুলাই ২০২৪, ২৫ জিলহজ ১৪৪৫

স্বাস্থ্য

আইসিডিডিআরবি’র গবেষণার ফল

‘থেরাপিউটিক খাবারে’ শিশুর মারাত্মক অপুষ্টি দূর

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯২৬ ঘণ্টা, জুন ৯, ২০১৫
‘থেরাপিউটিক খাবারে’ শিশুর মারাত্মক অপুষ্টি দূর

ঢাকা: সারাদেশে প্রায় ছয় লাখ শিশু মারাত্মক অপুষ্টির শিকার। এসব শিশুদের মৃত্যুর হারও ১০ গুণ বেশি।

বয়সে বেড়ে উঠলেও মস্তিষ্ক ও ওজনের দিক দিয়ে এরা খুবই দুর্বল হয়।
 
অপুষ্টিতে ভোগা এসব শিশুদের চিকিৎসায় আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) ‘থেরাপিউটিক খাবার’ তৈরি করেছে। দেশি উপাদানে তৈরি এ খাবার খেলে শতকরা ৮০ ভাগ শিশুর অপুষ্টি থেকে মুক্তি পাওয়ার পাশাপাশি ওজনও বাড়বে।
 
আইসিডিডিআরবি’র তিন বছরের গবেষণায় উঠে এসেছে এসব তথ্য। গবেষণাটির নেতৃত্বে ছিলেন সংস্থাটির পুষ্টি বিভাগের প্রধান ড. তাহমিদ আহমেদ।

রোববার (০৭ জুন) সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে ‘থেরাপিউটিক খাবার’ ও গবেষণা নিয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন তিনি।
 
সোমবার  (০৮ জুন) দুইদিনব্যাপী পুষ্টিবিষয়ক আন্তর্জাতিক সিম্পোজিয়ামের উদ্বোধনী অধিবেশনে ড. তাহমিদ আহমেদ বলেন, অপুষ্টির শিকার ছয় মাস থেকে পাঁচ বছর বয়সী শিশুদের এ খাবার খাওয়ানো যাবে। খাবারটি সম্পূর্ণ দেশীয় উপাদান চাল, ডাল, ছোলা, গুড়া দুধ, চিনি, সয়াবিন তেল ও মাইক্রো নিওট্রেন্টের মিশ্রণে তৈরি।
 
তিনি জানান, পানি ছাড়া তৈরি প্যাকেটজাত এ খাবার এক বছর পর্যন্ত ভালো থাকবে। ১০০ গ্রামের একটি প্যাকেটের খাবার খেলে একজন শিশু ৫৪৩ কিলোক্যালোরি শক্তি পাবে। সাত থেকে আট দিন খাওয়ানোর পর থেকেই এর ফল পাওয়া শুরু হবে। তবে এটি শিশুর বয়স, ওজন ও চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খাওয়াতে হবে।
 
গবেষণার বিষয়ে জানানো হয়, আইসিডিডিআরবি’র মহাখালী কলেরা হাসপাতাল, কুড়িগ্রামে টেরে দেস হোমস ক্লিনিক ও ঢাকার একটি ক্লিনিকে অপুষ্টির শিকার ৩২৭ জন শিশুর ওপর এ খাবার নিয়ে গবেষণা করা হয়েছে। গবেষণা চলাকালে একটি শিশুরও মৃত্যু হয়নি। শতকরা ৮০ ভাগ শিশুর অপুষ্টি দূর হয়েছে। প্রতিটি শিশুরই বেড়েছে ওজন।
 
এ খাবারটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণে যাওয়ার সম্ভবনা আছে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে ড. তাহমিদ জানান, এটি কোনোভাবেই বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের হাতে ছেড়ে দেওয়া উচিত হবে না। কারণ সাধারণত গ্রাম ও তৃণমূল পর্যায়ের শিশুরা মারাত্মক অপুষ্টির শিকার বেশি হয়। এসব শিশুদের জন্য বিনামূল্যে এ খাবার খাওয়ানোর ব্যবস্থা করা উচিত।
 
এছাড়া গ্রামের মায়েরা তাদের শিশু-সন্তানদের শহরের হাসপাতালে খুবই কম নিয়ে আসেন। এক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে এ খাবার গ্রামের অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের কাছে পৌঁছে দেওয়া উচিত বলে মনে করেন এ বিজ্ঞানী।

খাবারটি ব্যবহারের আগে মাঠপর্যায়ে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে বলেও জানান তিনি।
 
এ থেরাপিউটিক খাবার সম্পর্কে জানানো হয়, এর আগে ফ্রান্সের তৈরি ‘প্লাম্পিনাট’ আমদানি করে তীব্র অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের চিকিৎসা করা হতো। ‘প্লাম্পিনাট’ উচ্চ ক্যালরির খাবার, এর দামও খুব বেশি। আমদানিতে প্রচুর টাকা খরচ হতো। তাই এক সময়ে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে এটি আমদানি নিষিদ্ধ করা হয়।
 
এরই বিকল্প হিসেবে আইসিডিডিআরবি দেশীয় উপাদান দিয়ে এ ‘থেরাপিউটিক খাবারটি’ তৈরি করেছে। এটি অল্প দামের খাবার (থেরাপিউটিক খাবার) হলেও  ফ্রান্সের ১০০ গ্রাম প্লাম্পিনাট খাবারে যে ৫৪৩ কিলোক্যালরি শক্তি রয়েছে, ঠিক আইসিডিডিআরবি’র ১০০ গ্রাম খাবারেও একই পরিমাণ শক্তি আছে।
 
অপুষ্টিতে ভুগছে এমন শিশুর পাকস্থলি ধীরে ধীরে ছোট হয়ে যায়। ফলে সাধারণ খাবার এরা খেতে পারে না। কিন্তু আইসিডিডিআরবি’র থেরাপিউটিক খাবারটি অপুষ্টির শিকার শিশু প্রতিদিন দুই প্যাকেট খেতে পারবে। প্যাকেটজাত এ খাবারটি রান্না করতে হবে না।
 
তবে কোনো সুস্থ শিশুকে এ খাবার খাওয়ানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কারণ এতে উচ্চ ক্যালরি রয়েছে। আর বয়স্করা খেলে কিছু দিনের মধ্যেই হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি আছে।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৯২১ ঘণ্টা, জুন ০৯, ২০১৫
একে/আরএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।