রমজান মাস সংযমের মাস। পানাহার থেকে বিরত থাকার সময় বাদেও যে খাবারের প্রতি সংযম থাকা দরকার আমরা বেশিরভাগ মানুষই তা ভুলে যাই।
যেসব সমস্যা দেখা দিতে পারে:
ইফতারে বেশি পরিমাণ খাবার খাওয়ায় বেশ কিছু শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন-
ক. বদহজম
খ. পেট খারাপ
গ. বুক জ্বালা-পোড়া (অম্বল)
ঘ. পেট ফাঁপা
ঙ. ঢেকুর/ দুর্গন্ধযুক্ত ঢেকুর
চ. বমি বমি ভাব
ছ. অবসাদ
জ. মাথা ব্যথা ইত্যাদি
এসব শারীরিক সমস্যা থেকে বাঁচার জন্য কিভাবে বেশি বেশি খাবার খাওয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখা যায় খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞানের আলোকে সেসব বিষয়ে উল্লেখ করবো। এখানে একটা বিষয় বলে রাখি, দীর্ঘক্ষণ পানাহার থেকে বিরত থাকার পর যখন টেবিলে সারি সারি সাজানো খাবার চোখের সামনে শোভা পায়, তখন নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা আসলেই কষ্টসাধ্য। এজন্য মানসিক শক্তি অধিক গুরুত্বপূর্ণ।
বিরত থাকার উপায়:
ধর্মীয় বিধান অনুসরণ: রাসূল (সা:) বলেছেন, যে ব্যক্তি পেট ভর্তি করে খাবার খায় তার পেট (আল্লাহর কাছে) একটি নিকৃষ্ট পাত্র। (তিরমিযী)। সুন্নাত হল পেটের তিন ভাগের একভাগ খাবার খাবে, একভাগ পানি পান করবে। বাকি এক ভাগ খালি রেখে দিবে। (তিরমিযী)। ধর্মীয় এসব নির্দেশনা মেনে চললে ইফতারে কম খাওয়ার অভ্যাস গড়ে উঠবে।
অধিক পরিমাণে পানি পান: প্রচুর পরিমাণ পানি পান করতে হবে। এতে খাবারের চাহিদা বেশ কমে যাবে। এক্ষেত্রে, ইফতারের শুরুতে এক গ্লাস পানি অথবা হালকা লেবু ও চিনিযুক্ত শরবত খেতে হবে। এর পর, অল্প পরিমাণ ইফতার করতে হবে। ইফতার শেষে হালকা পানি পান করা যেতে পারে, তবে তা আধা গ্লাসের বেশি নয়। এতে খাবার হজম ভালো হয় এবং শরীর অবসন্ন হয়ে পড়ে না। ২০/৩০ মিনিট পরে শরীরের চাহিদা মতো যথেষ্ট পরিমান পানি পান করতে হবে।
অল্প দিয়ে শুরু করা: কম পরিমাণ খাবার দিয়ে ইফতার শুরু করতে হবে। খেজুর, পাকা আম ও অন্যান্য ফলমূল দিয়ে ইফতার করা যেতে পারে। এর সঙ্গে সামান্য পরিমাণ ভেজা চিড়া ও দই খাওয়া যেতে পারে। ক্ষুধা লেগেই আছে, এমন অনুভূতি থাকা অবস্থায় ইফতার শেষ করতে হবে। এরপর, রাতের খাবারের আগে এক থেকে দেড় ঘণ্টা বিরতি দিত হবে। এ বিরতিতে মাগরিবের নামাজ, পরিবার-পরিজনের সঙ্গে আলোচনা, দৈনন্দিন অন্যান্য কাজ করা যেতে পারে।
ধীর স্থির ভাবে খাওয়া: খাবার কোনো ভাবেই গিলে খাওয়া যাবে না। ধীর স্থিরভাবে চিবিয়ে খেতে হবে। এতে করে হজমে সহায়তাকারী উপাদান যথাযথভাবে নিঃসৃত হয়। একই সঙ্গে মস্তিস্কে ক্ষুধার মাত্রা সম্পর্কে যথাযথ তথ্য পৌঁছায়। যাতে করে, অতিরিক্ত খাওয়া থেকে বিরত থাকা সম্ভব হয়।
বসে খাওয়া: দাঁড়িয়ে খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। বসে খেলে খাবার অনেক বেশি উপভোগ করা যায় এবং অল্প পরিমাণে তৃপ্তি লাভ হয়। এছাড়া, শরীর খাওয়ার পরিমাণ সহজে অনুধাবন করতে পারে।
সেহরিতে সুষম খাবার: চার ভাগ শর্করা (ভাত, আলু) এক ভাগ আমিষ (মাছ, গোশত, ডিমের সাদা অংশ) ও এক ভাগ স্নেহ/চর্বি (তেল, ডিমের কুসুম, মাংসের চর্বি) এই অনুপাতে সেহরিতে খাবার গ্রহণ করতে হবে। ভিটামিনের চাহিদা পূরণের জন্য লেবু, শাক ও অন্যান্য সবজি খাওয়া যেতে পারে। সেহরিতে স্বাভাবিক অথবা কম ওজনের লোকজন শাক-সবজি কম খাবেন। অতিরিক্ত ওজনের তথা মোটা লোকজন শাক সবজি বেশি খাবেন। সেহরিতেসুষম খাবার খেলে ইফতারে খাবারের চাহিদা কম থাকে।
পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমানো: ঘুম শরীরের জন্য অত্যাবশ্যকীয় একটি উপাদান। আর এর সঙ্গে রুচির একটা বড় সম্পর্ক রয়েছে। কম ঘুমালে শরীর ক্ষুধার জন্য দায়ী হরমোন শরীরে নিঃসৃত করে। এতে দ্রুত ক্ষুধা সৃষ্টি হয়, যার প্রভাব পড়ে ইফতারে। বাংলাদেশে সেহরি থেকে ইফতার পর্যন্ত সময়ের ব্যবধান প্রায় সোয়া ১৫ ঘণ্টা। ইফতার, সেহরি, নামাজ ও নিত্য প্রয়োজনীয় অন্যান্য সময় বাদ দিলে রাতে গড়ে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা ঘুমানোর সময় পাওয়া যেতে পারে। আর যারা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন তারা ঘুমানোর সময় পান ২ থেকে ৩ ঘণ্টা। এজন্য ঘুমানোর সুবিধাজনক সময় বের করে নিয়ে দৈনিক ৭/৮ ঘণ্টা ঘুমাতে হবে।
ওজন কমানোর পরিকল্পনা: (যারা ওজন কমাতে চান তাদের জন্য এই পরামর্শ) রমজান মাস সবচেয়ে ভালো একটি সময় অধিক ওজনের মানুষের জন্য। অধিক ওজনের সমস্যা থেকে বাঁচতে খুব সহজেই একটা পরিকল্পনা করে নিতে পারেন সংশ্লিষ্টরা। আর এ ইচ্ছেতে ইফতারে কম খাওয়ার পাশাপাশি সেহরি ও অন্যান্য সময় কম খেতে পারেন।
ব্যায়াম করা: রমজান অলস বসে থাকার সময় নয়। রোজার অজুহাত দিয়ে ব্যায়াম থেকে দূরে থাকা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। ইফতারের পর কোনো সময় যদি ব্যায়ামের পরিকল্পনা থাকে তবে এমনিতেই কম খাওয়া হয়ে যাবে। অবশ্য এ সময় ব্যায়াম বলতে কঠিন কোনো ব্যায়াম করার প্রয়োজন নেই। ১৫ থেকে ২০ মিনিট হাঁটা অব্যাহত রাখলেই চলবে। ইফতারের পর নিজেকে শক্তিশালী রাখতে হালকা ব্যায়ামের কোনো বিকল্প নেই।
লেখক: সাবেক ছাত্র,ফলিত পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৫ ঘণ্টা, জুন ২১, ২০১৫