ঢাকা: ডায়েট বলতে অধিকাংশ মানুষ শক্তপোক্ত খাবার রুটিনকেই বোঝেন। আবার অনেকেরই ধারণা, ওজন কমাতে বা মেদহীন সুন্দর গঠন ধরে রাখতে প্রিয় মজাদার সব খাবারকে বিদায় জানিয়ে স্বাদহীন খাবারগুলোকেই খাদ্যতালিকায় টুকে নিতে হয়।
কিন্তু সুস্থ থাকতে ও ওজন ঠিক রাখতে প্রয়োজন সঠিক খাদ্য বাছাই ও খাদ্যের সমন্বয়।
খাদ্য সমন্বয়ের প্রয়োজনীয়তা
পুষ্টি উপাদান বিবেচনা করে কয়েকটি খাবার একসঙ্গে মিলিয়ে রান্না করাকে মূলত খাদ্য সমন্বয় বলে। খাদ্য উপাদানের সমন্বয়ের ওপর পুষ্টির মান, রক্তে শর্করার মাত্রা, হরমোন নিয়ন্ত্রণ, ওজন হ্রাস ও বৃদ্ধি অনেকটাই নির্ভরশীল। তবে এক্ষেত্রে একটা বিষয় খুব লক্ষণীয়। জানতে হবে কোন খাবার হজম হতে কত সময় লাগে। যেমন প্রোটিন জাতীয় খাবার হজম হতে অনেক সময় লাগে, আবার ফলমূল খুব সহজেই হজম হয়।
আমন্ড ও টক দই
আমরা জানি শরীরে ভালো চর্বি এইচডিএল লাইকোপেন শোষণ করতে সাহায্য করে। যা ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়। ভিটামিন এ, ডি ও ই চর্বিতে দ্রবণীয় ভিটামিন। গাজর, ব্রোকলি ও মটরশুটিতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন এ। এসব সবজি এইচডিএল উৎপাদনকারী অলিভ অয়েল দিয়ে রান্না করা উচিত।
অন্যদিকে ভিটামিন ‘ডি’ সম্পন্ন খাবার যেমন- মাছ, দুধ, দই ও কমলার রস এবং ভিটামিন ‘ই’ সমৃদ্ধ সূর্যমুখীর বীজ, বাদাম, অ্যাভোকাডো প্রভৃতিও চর্বিতে দ্রবণীয়। টকদইয়ে আমন্ড দিয়ে ফুল-ফ্যাট ডেইরির সঙ্গে ভিটামিন ‘ই’ যুক্ত করতে পারেন।
রাইস ও মটরশুটি
শক্ত পেশি তৈরিতে খেয়াল রাখতে হবে ২৫ থেকে ৩৫ শতাংশ ক্যালরিই যেন প্রোটিন থেকে আসে। সেক্ষেত্রে লাল মাংস ও মুরগি প্রোটিনের ভালো উৎস হলেও এতে রয়েছে উচ্চমানের স্যাচুরেটেড ফ্যাট। রাইস একটি অসম্পূর্ণ প্রোটিন। রাইসের সঙ্গে ডাল যোগ করলে তা সম্পূর্ণ প্রোটিনে পরিণত হয়। তাই ব্রাউন রাইসের সঙ্গে, মটরশুটি ও ডাল মেশালে পটাশিয়াম ও খনিজের ঘাটতি পূরণ হয়। এছাড়াও এটি রক্তের অম্লভাব কমিয়ে বয়সজনিত পেশি ক্ষয় রোধ করে।
পালংশাক ও অ্যাভোকাডো অয়েল
অ্যাভোকাডো অয়েলে রয়েছে হৃদবান্ধব মনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট। এতে আরও রয়েছে ভিটামিন ‘বি’, ভিটামিন ‘ই’ ও পটাশিয়াম। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা পানি সমৃদ্ধ খাবার যেমন সবুজ শাক খান তাদের বডি মাস ইনডেক্স (উচ্চতা অনুযায়ী শরীরের আনুপাতিক ওজন) ও কোমরের স্ফীতি যারা এসব খান না তারচেয়ে অনেক কম। এক কাপ পালংশাকে এক টেবিল চামচ অ্যাভোকাডো অয়েল মিশিয়ে খেতে পারেন। এছাড়াও গমের রুটি, মাছ ও পিজ্জাতেও ব্যবহার করতে পারেন অ্যাভোকাডো অয়েল।
মটর ও সালসা
প্রোটিনকে শক্তিশালী করতে মটরের সঙ্গে টমেটোর সালসা খেতে পারেন। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা প্রতিদিন অন্তত অাধা কাপ মটর খেয়েছেন তাদের ওজন তুলনামূলক এক কেজি কমেছে ও খাবার প্রতি আসক্তি কমেছে অনেকখানি।
মুরগি ও গোলমরিচ
গোলমরিচ চর্বি কমাতে সাহায্য করে। এর মধ্যকার ক্যাপসায়াসিন নামক উপাদান ক্ষুধা নিবারণ করে ও খাদ্যকে শরীরের শক্তিতে রূপান্তরিত করে। খাবারে মাত্র ১/২ চা চামচ গোলমরিচ গুঁড়া ক্ষুধা কমায় ও ক্যালরি পোড়াতে সাহায্য করে। তাই মুরগি, অন্যান্য মাংস ও ডিমে গোলমরিচ ব্যবহার করতে পারেন।
লাল আঙুর ও মধু
শরীরের চর্বি অপসারণ ও পেটের গ্যাস কমাতে লাল আঙুরে মধু দিয়ে খেতে পারেন। তরমুজ মূত্রবর্ধক। তাই শরীরে পানি জমে ফুলে যাওয়া থেকে রক্ষা করে। লাল আঙুর পেটে জমা মেদ কমায়। কারণ এতে রয়েছে অ্যানথোসায়ানিন নামক এক প্রকার এন্টি-অক্সিডেন্ট যা চর্বি জমা করার জিনগুলোর কাজ কমিয়ে দেয়।
আলু ও গোলমরিচ
গবেষকরা দেখেছেন, ওটমিল বা ব্রাউন রাইসের তুলনায় আলুতে রয়েছে পরিপূরক ফাইবার ও গ্যাস নিরোধক পটাশিয়াম। তবে আলুতে মাখনের পরিবর্তে গোলমরিচ ব্যবহার করুন। এর পিপারিন নামক উপাদান শরীরে নতুন ফ্যাট সেল তৈরি হতে দেয় না। গোলমরিচ ওজন ও রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়।
কফি ও দারুচিনি
ক্যালরি ফ্রি দারুচিনি শক্তিশালী এন্টি-অক্সিডেন্ট শরীরে পাঠায় যা চর্বি কমায়। দারুচিনি সমৃদ্ধ কফি ক্ষুধা দমন করে ও ওজন কমায়।
বাংলাদেশ সময়: ০৩০১ ঘণ্টা, জুলাই ১৭, ২০১৫
এএ