ঢাকা: ফ্যাট বা চর্বি খাবারে স্বাদ এনে দিলেও তা শরীরের পক্ষে ক্ষতিকারক বলেই আমরা জানি। তবে এটা অনেকেরই অজানা যে সঠিক উৎস বাছাই করে সঠিক পরিমাণ চর্বি খেলে তা স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে না।
বিভিন্ন প্রকার ফ্যাট
ফ্যাট মূলত দুই প্রকার। স্যাচুরেটেড ও আনস্যাচুরেটেড। পলি-আনস্যাচুরেটেড ও মনো-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট হলো আনস্যচুরেটেড ফ্যাটের অন্তর্গত। স্যাচুরেটেড ফ্যাট শরীরের পক্ষে ক্ষতিকারক, কারণ এটি কোলেস্টেরল বাড়ায়। সাধারণত লাল মাংস, চিংড়ি, কলিজা প্রভৃতিতে স্যাচুরেটেড ফ্যাট রয়েছে।
অন্যদিকে আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটের ক্ষতিকর ভূমিকা নেই। বরং এটি কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। শস্যদানা, মটরশুটি, সামুদ্রিক মাছ, বাদাম ইত্যাদি আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটের উদাহরণ।
সুস্থ থাকতে অন্য খাবারের পাশাপাশি ফ্যাট বা স্নেহজাতীয় খাবারেরও প্রয়োজন রয়েছে। চলুন জেনে নিই কোন কোন স্নেহজাতীয় খাবার খেলে ক্ষতি নেই।
ঘি
ঘি মেদ বাড়ায় ও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বলেই আমরা জানি। এছাড়াও এতে রয়েছে স্যাচুরেটেড ফ্যাট। তবে প্রতিদিন খাবারে সামান্য পরিমাণ ঘি রেখে এড়াতে পারেন হৃদরোগ। কারণ এতে রয়েছে কনজুগেটেড লিনোলিক এসিড বা সিএলএ। এই ফ্যাটি অ্যাসিড ক্যানসার সেল দমন করে, ধমনিতে চর্বি জমতে দেয় না ও ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণ করে।
অলিভ অয়েল
এন্টি-অক্সিডেন্ট ও প্রদাহনাশক অলিভ অয়েন ধমনি পরিষ্কার রাখে। মনো-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ হওয়ায় ও অয়েলিক অ্যাসিড থাকায় এটি ক্ষতিকারক কোলেস্টেরল দূর করে ও ভালো কোলেস্টেরল উৎপাদনে সহায়তা করে। একইসঙ্গে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেও ভূমিকা রাখে। মিরিয়াড পলিফেনল সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি হার্ট অ্যাটকের ঝুঁকি কমায়।
চর্বিযুক্ত মাছ
গবেষণায় দেখা গেছে, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। এছাড়াও এটি অ্যাজমা, আর্থ্রাইটিস, মানসিক অবসাদ, রিউম্যাটোয়েড আর্থ্রাইটিস ও কয়েক ধরনের ক্যানসার প্রতিরোধ করে। স্যালমন, টুনা, সার্ডিনস, ম্যাকরল ও ট্রাউট মাছে রয়েছে উন্নতমানের ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড। সপ্তাহে অন্তত দু’দিন এ ধরনের মাছ খাওয়া উচিত বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
ফ্লেক্স সিড
আপনি যদি মাছ না খেতে চান তাহলে ফ্রেক্স সিড খেতে পারেন। কারণ এতে রয়েছে আলফা লিনোলিক এসিড যা শরীরে পৌঁছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিডে পরিণত হয়। সপ্তাহে তিন থেকে চারদিন এক টেবিলচামচ করে ফ্লেক্স সিড খেতে পারেন। ডাল, স্যুপ বা তরকারিতেও এটি ব্যবহার করতে পারেন। এই আলফা লিনোলিক অ্যাসিড সরষের তেল, মেথি, সয়াবিন, কুমড়ার বিচি ইত্যাদিতে পাওয়া যায়।
বাদাম
হৃদবান্ধব ফ্যাট মানেই বিভিন্ন রকমের বাদাম। কারণ বেশিরভাগ বাদামই স্যাচুরেটেড ফ্যাটমুক্ত। যদি আমন্ডের কথাই বলি, তা মানো-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট সমৃদ্ধ যা ক্ষতিকারক কোলেস্টেরল এলডিএল (লো-ডেনসিটি লিপোপ্রোটিন) কমায় ও এইচডিএলের (হাই-ডেনসিটি লিপোপ্রোটিন) মাত্রা বাড়ায়। অন্যদিকে আখরোট মনো-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট সমৃদ্ধ তো বটেই, সঙ্গে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডও রয়েছে এতে।
পিনাট বাটার
পিনাট বাটারে রয়েছে প্রোটিন ও ভালো ফ্যাট। তবে চিনিযুক্ত পিনাট বাটার না খাওয়াই ভালো। আখরোট দিয়ে বাটার বানাতে সারারাত পানিতে আখরোট ভিজিয়ে রাখুন। পানি ঝরিয়ে ওভেনে ১২০ তাপমাত্রায় ২০ মিনিট রাখুন। ঠাণ্ডা করে ব্লেন্ড করুন। সঙ্গে সামান্য দারুচিনি ও অলিভ অয়েল মেশান।
নারকেল
নারকেল স্যাচুরেটেড ফ্যাট সমৃদ্ধ হলেও এই ফ্যাট হৃদবান্ধব বলেই জানান দিয়েছেন গবেষকরা। কারণ এতে রয়েছে ৫০ শতাংশেরও বেশি লরিক অ্যাসিড যা এইচডিএল কোলেস্টেরলকে শক্তিশালী করে। এছাড়াও বিশুদ্ধ নারকেল তেল দিয়ে রান্নাও করতে পারেন। এটি ফ্যাটি অ্যাসিড, ৪৪ শতাংশ লরিক অ্যাসিড ও ১৬.৮ শতাংশ মাইরিস্টিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ।
ডিম
একটি ডিমে রয়েছে পাঁচ গ্রাম ফ্যাট। এর মধ্যে ১.৫ গ্রামই স্যাচুরেটেড ফ্যাট। ডিম কোলিনের ভালো উৎস। কোলিন একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন বি যা মস্তিষ্ক, স্নায়ু ও হৃৎপিণ্ডের জন্য বিশেষ সহায়ক একটি উপাদান। যদিও বেশি পরিমাণে ডিম খেলে তা শরীরের জন্য ক্ষতিকারক হয়ে দাঁড়ায়। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে ব্রেকফাস্টে একটি ডিম খেলে তা হৃদপিণ্ডের সুস্থতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট।
বাংলাদেশ সময়: ০০১১ ঘণ্টা, জুলাই ১৯, ২০১৫
এএ/