ঢাকা: দেশে ছয় মাসের কম বয়সী শিশুদের শুধুমাত্র মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানোর হার ৬৪ শতাংশ। তবে এ ক্ষেত্রে শহুরে উচ্চবিত্ত পরিবারগুলো বেশি পিছিয়ে রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্রেস্ট ফিডিং ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ডা. এস কে রায় বাংলানিউজকে বলেন, শহরের তুলনায় গ্রামের মায়েরা শিশুকে বেশি বুকের দুধ পান করান।
কারণ, হিসেবে জানা যায়, শহরে এখন বেশিরভাগ শিশুর জন্ম হচ্ছে হাসপাতালগুলোতে। শিশুর জন্মের সঙ্গে সঙ্গেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অথবা নবজাতক বিভাগের কোনো চিকিৎসক বা স্টাফ পরিবারের হাতে কৌটার দুধ তুলে দিচ্ছে সুকৌশলে।
এস কে রায় বলেন, গ্রামে এখনো দাইয়ের মাধ্যমে প্রসব করানো হয়। এখন সরকার ও বেসরকারি সংস্থার দাইয়ের সংখ্যাও বেড়েছে। তবে এসব দাইয়েরা নবজাতককে বুকের দুধ খাওয়ানোর ব্যাপারেই উৎসাহ দেন।
ঢাকার একটি পাঁচতারকা হাসপাতালে জন্ম নেয় শিশু রাইয়ান। জন্মের পর মায়ের শালদুধ পেলেও কাঁদতে থাকে সে। এই সুযোগে শিশুর বাবার হাতে ‘এলডোবেবি’ নামে একটি দুধের কৌটা তুলে দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
শিশুর বাবা জিয়া বাংলানিউজকে বলেন, ‘এলডোবেবি’ খাওয়ানোর পর থেকে বুকের দুধের প্রতি নিরুৎসাহিত হয়ে পড়ে শিশু।
ডা. এস কে রায় বলেন, শহুরে মা এবং বাবারা অনেক সময় ভাবেন, হাজার টাকা দিয়ে কেনা কৌটার দুধ, বুকের দুধের চেয়ে উপকারী। আর যেহেতু চিকিৎসকরাই অনেক সময় কৌটার দুধের পরামর্শ দেন, তাই তারা এটাকেই সঠিক ভাবেন।
শিশুপুষ্টি সম্পর্কে মা-বাবার অজ্ঞতার সুযোগ নেয় দুধ কোম্পানিগুলো। কৌশলী বিজ্ঞাপনে মানুষকে বিভ্রান্ত করে তারা। মায়ের দুধের কোনো বিকল্প না হলেও তারা তাদের পণ্যের বিজ্ঞাপনে এমনটিই দাবি করে।
কখনো বা মায়ের দুধের চেয়ে সেই পণ্য আরও ভালো বলে প্রচারের ধৃষ্টতাও দেখায়। এ বিষয়ে আইন থাকলেও তার প্রতিফলন সেভাবে হচ্ছে না; যার কুপ্রভাব পড়ছে শিশুদের ওপর।
অন্যদিকে, গ্রামের বা নিম্নবিত্ত পরিবারের আর্থিক কারণেই শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছে বেশি। এছাড়াও ছয় মাসের পরও বাড়ির খাবারই খাওয়াচ্ছে বেশি।
রায় বলেন, মায়ের বুকের দুধ শিশু মৃত্যুর ঝুঁকি ১০ শতাংশ কমিয়ে দেয়। শিশু ও মায়ের স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাসে রাখে বড় ভূমিকা। শুধু তাই নয়, সন্তান জন্মদানে মায়ের জরায়ুর যে পরিবর্তন আসে, তা পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে নিতেও বুকের দুধ দানের অবদান ব্যাপক।
তিনি বলেন, মা-বাবার বিজ্ঞান সম্পর্কে কম ধারণার সুবাদে বিকল্প খাদ্যের ভুল ধারণা দেওয়া হয়। বলা হয়, বিভিন্ন বিকল্প খাদ্যে লম্বা ও চওড়া হয়। মায়ের দুধের পরিবর্তে কোনো বিকল্প খাদ্য নয়। বরং পাশাপাশি পরিপূরক খাবারের কথা বলা হচ্ছে।
এদিকে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া ২০১৪ সালের তথ্যানুযায়ী, ছয় মাসের পর থেকে সঠিকভাবে বাড়তি খাবার খাওয়ানোর হার এখনো মাত্র ২১ শতাংশ এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানে মাতৃত্বকালীন ছুটি ছয় মাস কার্যকর হলেও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে এ ছুটি কার্যকর করা সম্ভব হয়নি।
সহস্রাব্দের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) অনুযায়ী, দেশের ছয় মাসের কম বয়সী শিশুদের শুধুমাত্র মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানোর হার ৪৭ থেকে ৬৪ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। আগের তুলনায় বেশি মাকে গর্ভপরবর্তী সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে।
এসব সাফল্যের সঙ্গে যেসব অসম্পূর্ণতা রয়েছে, সেগুলো হচ্ছে- এখনো ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের ৩৬ শতাংশ বয়সের তুলনায় কম ওজন সম্পন্ন, ৪১ শতাংশ শিশু বয়সের তুলনায় উচ্চতা কম এবং ১৬ শতাংশ শিশু উচ্চতার তুলনায় ওজন কম।
এছাড়া প্রতি ১ হাজার শিশুর মধ্যে ৫৩ জন শিশু ৫ বছর বয়স পূর্ণ হওয়ার আগে এবং প্রতি ২৩ জন শিশুর মধ্যে ১ জন ১ বছর বয়স পূর্ণ হওয়ার আগেই মারা যায়।
বাংলাদেশ সময়: ১৪০৩ ঘণ্টা, আগস্ট ০২, ২০১৫
এমএন/এবি