ঢাকা: বিজ্ঞানীদের আপ্রাণ চেষ্টার পরও এখনও দুরারোগ্য ব্যাধির তালিকায় রয়ে গেছে ‘ক্যান্সারের’ নাম। বিশেষ করে, অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সার রোগীদের দীর্ঘশ্বাস আর গবেষকদের কপালের ভাঁজ হয়ে আছে অনেক বছর ধরে।
ক্লিনিক্যাল ক্যান্সার রিসার্চে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে যুক্তরাজ্য ও স্পেনের একদল বিজ্ঞানী দাবি করেছেন, সাধারণ মূত্র পরীক্ষার মাধ্যমে আগেভাগেই অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সার সনাক্ত করা সম্ভব। মূত্রের তিন ধরনের প্রোটিন জানিয়ে দেবে, দেহে অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সার বাসা বেধেছে কি না।
দেহের বিভিন্ন ক্যান্সারের মধ্যে অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সারে রোগী মৃত্যুর হার তুলনামূলকভাবে বেশি। এক হিসাবে জানা গেছে, শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রে বছরে ৯ হাজার মানুষের দেহে অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সার ধরা পড়ে। বিশ্ব ক্যান্সার গবেষণা প্রতিষ্ঠানের হিসাবে, সারা বিশ্বে ২০১২ সালেই ৩ লাখ ৩৮ হাজার মানুষের দেহে এই রোগ সনাক্ত হয়।
চিকিৎসকরা বলছেন, অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সার চিকিৎসায় এখনও সফলতা না পাওয়ার অন্যতম কারণ রোগীর দেহে এর দেরিতে সনাক্ত হওয়া। ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রে এই ক্যান্সার শেষ পর্যায়ে গিয়ে সনাক্ত হয়। সে সময় আর অস্ত্রপচার করে টিউমার সরানোর কোনো উপায় থাকে না।
গবেষকদের মতে, ধূমপায়ী, স্থূলকায়, নতুন সনাক্ত হওয়া বহুমূত্র রোগী ও যাদের পরিবারের কোনো সদস্য আগে অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন, তারাই সবচেয়ে বেশি এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকেন।
যুক্তরাজ্য ও স্পেনের গবেষকদের ওই দল পাঁচশ মানুষের মূত্রের নমূনা পরীক্ষা করেছেন। এর মধ্যে দু’শ অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীর, ৯২টি দীর্ঘদিন ধরে অগ্ন্যাশয়ের প্রদাহে আক্রান্ত রোগীর, ৮৭টি সুস্থ স্বেচ্ছাসেবীর ও বাকিগুলো লিভার ও পিত্তথলীর ক্যান্সার থেকে সেরে উঠছে এমন রোগীর নমূনা।
মূত্রের নমূনায় পাওয়া দেড় হাজার প্রোটিনের মধ্যে গবেষকরা তিনটি বিশেষ প্রোটিন সনাক্ত করেছেন, যা আগেভাগেই জানান দিতে পারবে, অগ্ন্যাশয়ে ক্যান্সার বাসা বেধেছে কি না। এগুলো হলো- এলওয়াইভিইওয়ান (LYVE1), আরইজিওয়ানএ (REG1A) ও টিএফএফওয়ান (TFF1)।
গবেষকরা বলছেন, অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সারের ক্ষেত্রে মূত্রের নমূনায় এই তিন ধরনের প্রোটিনের পরিমাণ বেশি থাকে। আর দীর্ঘদিন ধরে অগ্ন্যাশয়ের প্রদাহে ভোগা রোগীর ক্ষেত্রে এগুলোর পরিমাণ থাকে কম।
এ পরীক্ষায় ৯০ শতাংশ সফলতার দাবিও করেছেন বিজ্ঞানীরা। এবার এ ব্যাপারে আরও বিশদ গবেষণার অংশ হিসাবে রোগীর জিন পরীক্ষার চিন্তা করছেন তারা।
যুক্তরাজ্যের বার্টস ক্যান্সার ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক নিক লেমোইনে বলেছেন, এটা সত্যিকার অর্থেই ভালো খবর। কারণ এই প্রথম আমরা হয়তো অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের জন্য আশার সঞ্চার করতে পেরেছি।
তিনি বলেন, এখনকার ব্যবস্থায় রোগীর দেহে অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সার তখনই সনাক্ত হয়, যখন তা শেষ পর্যায়ে থাকে। ফলে রোগীকে আর সারিয়ে তোলা সম্ভব হয় না। দ্বিতীয় পর্যায়ে থাকাকালেও যদি এটি সনাক্ত করা যায়, তাহলে ২০ শতাংশ রোগীকে সারিয়ে তোলা সম্ভব। আর প্রাথমিক পর্যায়ে সনাক্ত হলে সফলতার হার গিয়ে দাঁড়াবে ৬০ শতাংশে।
প্যানক্রিয়াটিক ক্যান্সার রিসার্চ ইনস্টিটিউটও গবেষকদের এই সফলতাকে স্বাগত জানিয়ে বলেছে, এটা আসলেই একটি দারুন অনুসন্ধান, যা অতি প্রয়োজন।
ক্যান্সার রিসার্চ ইউকে’র গবেষক ফিওনা ওসগান বলেছেন, এই মুহূর্তে বলা কঠিন, বিজ্ঞানীদের এ সফলতা সত্যিই অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সার চিকিৎসায় আশার আলো ফোটাতে পারবে কি না। তবে এ ধরনের গবেষনা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এসব গবেষণায় সামান্য পরিমাণ সাফল্যও অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সারে আক্রান্ত অনেক রোগীর জীবন বাঁচাতে সহায়তা করবে।
বাংলাদেশ সময়: ০১০৫ ঘণ্টা, আগস্ট ০৪, ২০১৫
আরএইচ