ঢাকা: রাজধানীতে আন্তর্জাতিক মানের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট স্থাপন করা হবে। প্রথম পর্যায়ে ১৭তলা বিশিষ্ট ইনস্টিটিউটের দুটি বেইজমেন্টসহ ১০তলা ভবন নির্মাণ করা হবে।
প্রাথকিমভাবে এ প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৬২৪ কোটি টাকা। মোট ব্যয়ের ৫২ শতাংশ যন্ত্রপাতি কেনা ও ৩৮ শতাংশ অবকাঠামো নির্মাণ বাবদ ব্যয় হবে।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ফেব্রুয়ারিতে দেশে বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারির উন্নত চিকিৎসার জন্য আন্তর্জাতিক মানের এ হাসপাতাল নির্মাণের ঘোষণা দেন। এরই ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পাওয়া নির্দেশনায় এ প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে।
বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট বিভাগ সূত্র জানায়, রাজধানীর চানখাঁরপুলের টিবি হাসপাতাল সংলগ্ন প্রায় দুই একর জমির ওপর এ ইনস্টিটিউট নির্মাণ করা হবে। এ লক্ষে বর্তমানে দুইতলা বিশিষ্ট টিবি হাসপাতাল ভেঙে ফেলা হবে। ইতোমধ্যে টিবি হাসপাতালের কাছে পেট্রোলপাম্পের জমিও উদ্ধার করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক মানের ১৭তলা হাসপাতালটি তিন ইউনিটে বিভক্ত করা হবে।
বিশাল ভবনের প্রথম ইউনিট হবে পোড়া চিকিৎসার জন্য। ঢাকাসহ সারাদেশের পোড়া রোগীদের উন্নত চিকিৎসা দেওয়া হবে এখানে। প্রতিটি ইউনিট হবে আন্তর্জাতিক মানের এবং অগ্নিদগ্ধ মুমূর্ষু রোগীদের জন্য ৬০টি আইসিইউ (ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট বা নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র) থাকবে। এসব আইসিইউ পরিচালনার জন্য দক্ষ জনবলও নিয়োগ দেওয়া হবে।
দ্বিতীয় ইউনিট হবে প্লাস্টিক সার্জারির। এর ফলে প্লাস্টিক সার্জারির জন্য রোগীদের আর দেশের বাইরে যেতে হবে না।
তৃতীয় ইউনিটটি হবে প্রশাসনিক ও একাডেমিক ভবন। বর্তমানে সারাদেশে এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ মাত্র ৫২ জন চিকিৎসক রয়েছেন। অথচ প্রতিবছর নানা কারণে প্রায় ৬ লাখ মানুষ আগুনে পুড়ছেন।
এ বিষয়ে বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিষয়ে জাতীয় প্রধান সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন বাংলানিউজকে বলেন, চাঁনখারপুলের টিবি হাসপাতালের জায়গায় ১৭তলা বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট নির্মাণ করা হবে। এখানে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট গড়ে উঠবে।
প্রকল্প প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সারাদেশে পোড়া রোগীর জন্য ভালো মানের চিকিৎসক মাত্র ৫২ জন। অথচ বছরে ৬ লাখ মানুষ নানা কারণে আগুনে পুড়ছেন। এসব কারণ মাথায় রেখেই প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হচ্ছে। আন্তর্জাতিক মানের এই হাসপাতালটি একদিকে যেমন আগুনে পোড়া রোগীদের উন্নত চিকিৎসা দেবে, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক মানের সার্জনও বের হবে এখান থেকে।
‘জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট স্থাপন’ প্রকল্পের আওতায় এই উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। প্রকল্পে নির্মাণ কাজের জন্যই ২১১ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে বলেও জানান তিনি।
প্রকল্পে অর্থায়নের বিষয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ(ইআরডি) সূত্র জানায়, এ প্রকল্পের জন্য ভারতীয় লাইন অব ক্রেডিটের আওতায় আর্থিক সহায়তার চেষ্টা করা হচ্ছে। প্রকল্পটির জন্য বৈদেশিক সাহায্য পাওয়ার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
ইতোমধ্যে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভার জন্য প্রকল্পের সারসংক্ষেপ পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্র।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব(প্রশাসন) বাসুদেব গাঙ্গুলী বলেন, প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি(পিইসি) সভার জন্য প্রকল্পটি পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। প্রকল্পে সরকারি অর্থায়নের পাশাপাশি প্রকল্প সাহায্যও থাকবে। ৬০টি আইসিইউ থাকবে এখানে। এ ইনস্টিটিউটে শুধু আগুনে পোড়া রোগীদেরই চিকিৎসাই দেওয়া হবে না, পাশাপাশি তৈরি হবে দক্ষ চিকিৎসক।
তিনি আরও বলেন, আন্তর্জাতিক মানের হাসপাতালে শিক্ষা নেওয়া দক্ষ চিকিৎসকদের দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পাঠানো হবে। যাতে আগুনে পোড়া গরীব রোগী উন্নত চিৎকিসা পান।
বিদেশি শিক্ষার্থী প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই হাসপাতালে বিদেশি শিক্ষার্থীরাও বার্ন বিষয়ে উন্নত শিক্ষা নিতে আসবে। এটা আমাদের জন্য গর্বেরও বটে।
বাংলাদেশ সময়: ১১৪৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৮, ২০১৫
এমআইএস/পিসি/জেডএম