ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

যে কারণে শীত ফ্লু ছড়ানোর মৌসুম!

স্বাস্থ্য ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২২৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩১, ২০১৫
যে কারণে শীত ফ্লু ছড়ানোর মৌসুম!

ঢাকা: বাতাসে শীতের আগমনী বার্তা। শীতের না বলে ফ্লু বা ভাইরাস ছড়ানোর মৌসুম আসছে বলা যেতে পারে।

এ ফ্লু ছড়ানোর মৌসুম প্রতিবার বিশ্বব্যাপী ৫০ লাখ লোককে আক্রান্ত করে, কেড়ে নেয় আড়াই লাখ মানুষের প্রাণ। কিন্তু ভাইরাস ছড়ানোর জন্য শীতই কেন ‘মোক্ষম’ সময় হয়ে ওঠে, তা আজও অজানা থেকে গেছে।

বিগত ও সাম্প্রতিক বিভিন্ন গবেষণা ও নথিপত্র ঘেঁটে সম্প্রতি এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক একটি সংবাদমাধ্যম। এতে শীতই কেন ভাইরাস ছড়ানোর ‘মোক্ষম’ সময় এবং ভাইরাস থেকে সুরক্ষিত থাকতে করণীয়সহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরা হয়।

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, কার্যকারিতা বিবেচনায় ভাইরাস খুব দ্রুতই পরিবর্তিত হয়। এ কারণে পরবর্তী মৌসুমের ধকল সামলানোর জন্য আমাদের শরীর প্রস্তুত হওয়ার সুযোগ পায় না। অর্থাৎ এক মৌসুমের ভাইরাস সামলানোর জন্য আমাদের শরীরে যে প্রতিরোধক গড়ে ওঠে, পরবর্তী মৌসুমে আসা ভাইরাসকে সে প্রতিরোধক চিনতে পারে না। ফলে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা অকেজো হয়ে পড়ে। আর এ কারণেই ভাইরাস প্রতিরোধক কার্যকর ভ্যাকসিনও বানানো যায় না। আবিষ্কার করা যায় না ভাইরাস থেকে সুরক্ষার নতুন কোনো পথও।

আবার ভাইরাস ছড়ানোর জন্য শীত ‘মোক্ষম’ সময় হয়ে ওঠার কারণ হিসেবে বিগত গবেষণাগুলো আমাদের জীবনাচারকেও দায়ী করেছে। এরমধ্যে ঘরের দরোজা-জানালা বন্ধ রেখে আড্ডাবাজি-গল্পগুজবের কথা উল্লেখ করা যায়। দরোজা-জানালা বন্ধ থাকলে আমরা যে কাশি বা হাঁচি দিই, তার মাধ্যমে সৃষ্ট জীবাণু ঘরেই থেকে যায়, এর সঙ্গে যুক্ত হয় বাইরের অতিথির নিয়ে ‍আসা জীবাণুও। তাছাড়া, শীত থেকে বাঁচতে বাস-ট্রেনে দরোজা-জানালা বন্ধ করে যাতায়াতও জীবাণু সংক্রমণে উল্লেখযোগ্যভাবে দায়ী।

শীতকালটায় অনেক সময়ই সূর্যের আলো পায় না দেহ। এতে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো ভিটামিন ডি বঞ্চিত থাকতে হয় আমাদের। অর্থাৎ ভিটামিন ডি না পাওয়ায় আমাদের প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে। আবার আমরা যখন ঠাণ্ডা বাতাসে শ্বাস-প্রশ্বাস নিই, তখন আমাদের নাকের বদ্ধপ্রায় রক্তনালীগুলোর কারণে ভেতর থেকে গরম বের হতে পারে না। এর ফলে জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াইকারী সাদা রক্তকোষগুলো তাদের কার্যক্রমে বাধা পায় এবং একসময় সেগুলো নিষ্ক্রিয়ও হয়ে যায়।

শীত মৌসুমে ভাইরাস ছড়ানোর কারণ পুরোপুরি জানা না গেলেও অনেক স্বাস্থ্যবিজ্ঞানী মনে করেন, এর উত্তর আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাসের বাতাসেই উড়ছে। ঠাণ্ডা বাতাসে এমনিতেই জলীয় বাষ্প কম থাকে। আর আবহাওয়া যখন স্যাঁতস্যাঁতে বা ‍আর্দ্র থাকে, তখন ঠাণ্ডা বাতাসে আর্দ্রতা ঝরে পড়ে, আবহাওয়া হয়ে ওঠে আরও শুষ্ক। গত ক’বছরের বেশ কিছু গবেষণা মতে, এ ধরনের শুষ্ক আবহাওয়াই ভাইরাস ছড়ানোর সবচেয়ে ‘মোক্ষম’ পরিবেশ হয়ে ওঠে।

ওইসব গবেষণা অনুযায়ী, আর্দ্র আবহাওয়ায় রোগ-ব্যাধি শরীরে ঢোকার জন্য সুযোগ খুঁজতে থাকে, যখনই আবহাওয়ায় খানিকটা শুষ্কতা দেখা যায়, তখনই রোগ-ব্যাধি দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে। ৩০ বছরের জলবায়ু পরিবর্তন ও স্বাস্থ্য সংক্রান্ত নথি বলছে, আবহাওয়ায় আর্দ্রতা খানিক কাটলেই মহামারি আকারে ছড়ায় ফ্লু। ২০০৯ সালের সোয়াইন ফ্লু পরবর্তী গবেষণাও এই তথ্যই প্রতিষ্ঠিত করেছে।

এ কথা সবার জানা যে, যখন কেউ জনসমাগমে চলাফেরা করে, তখন তাকে হাঁচি-কাশিতে সৃষ্ট জীবাণুযুক্ত বাতাসেই শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে হয়। যেহেতু শীতের শুষ্ক আবহাওয়ায় হাঁচি-কাশির জীবাণু বেশ কিছু দিন ধরেই বাতাসে থেকে যায়, সেজন্য অনেকেই সাধারণত মাস্ক বা মুখোশ পরেন। কিন্তু এটা কি নিজেকে সুরক্ষার কার্যকর পদ্ধতি?

অস্ট্রেলিয়ায় পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা যায়, ইনফ্লুয়েঞ্জা নিয়ে এমন একটি পরিবারের সদস্যরা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, যাদের আত্মীয়স্বজন-প্রতিবেশীরা মুখোশ পরেছেন ঠিকই, কিন্তু তাদের সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা দিতে পারেনি। তাদের এই মুখোশ পরিধান ৮০ শতাংশই কাজ করছে।

কিছু বিশেষজ্ঞ বলেন, সাধারণত আমরা রোগ থেকে সুরক্ষিত থাকার উপায় খোঁজার চেয়েও অসুস্থতার কারণ নিয়ে বেশি ভাবি। কিন্তু হাঁচি-কাশির অভিশাপের বিষয়ে কোনোই চিন্তা করি না।

তারা বলেন, শীতে নাক ও মুখ থেকে কাশি বা শ্লেষ জাতীয় পদার্থ ফেলি। আর্দ্র আবহাওয়ায় এগুলো মেঝেতে বা কোনো স্থানে থেকে যায়, আর শুষ্ক আবহাওয়ায় এগুলা ক্ষুদ্রাকারে ছড়িয়ে পড়ে বাতাসে। এসবের কারণে সৃষ্ট জীবাণু শীতে মৃত কোষের মাধ্যমে যায় আমাদের শরীরে। সঙ্গে শরীরে যায় ঘর ঘুরে যাওয়া অতিথিদের জীবাণুও। তাছাড়া, বাতাসের বাষ্প এমনিতেই জীবাণুতে ভরা থাকে। শ্লেষে অম্লতা ও ঘন লবণাক্ততার পরিবর্তনের মাধ্যমে আর্দ্র আবহাওয়া ভাইরাসকে অকার্যকর করে ফেলতে পারে। এতে সাধারণত আমাদের কোষে ভাইরাস যেভাবে আক্রমণ করতে পারে, সে ক্ষমতা আর ধরে রাখতে পারে না। অন্যদিকে শুষ্ক বাতাসে ভাইরাস বেশ কিছু সময় থেকে যেতে পারে, এমনকি আমরা শ্বাস না নেওয়া পর্যন্তও কার্যকর থাকতে পারে।

তাহলে এখন কী করণীয়? বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, একটি এয়ার হিউমিডিফায়ার (আর্দ্রতা ধরে রাখার ডিভাইস) একটি স্কুলে এক ঘণ্টা ব্যবহার করলে ৩০ শতাংশ ভাইরাস ধ্বংস হয়ে যায়। এর পাশাপাশি ভ্যাকসিন গ্রহণ এবং ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাই এখন পর্যন্ত স্বাস্থ্য সুরক্ষিত রাখার সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০২২৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩১, ২০১৫
এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।