ঢাকা: মুগদা ৫০০ শয্যা সরকারি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নামে মাত্র চিকিৎসা দিয়ে দুপুরের আগেই শেষ হয় প্রতিদিনের চিকিৎসাসেবা।
সরেজমিন দেখা যায়, গাইনি, শিশু ও মেডিসিন বিভাগে স্থানীয় কিছু রোগী এলেও অন্য বিভাগের সামনে কোনো রোগী নেই।
হাসপাতালের টিকিট কাউন্টারে দেখা যায় ও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঠাণ্ডা-জ্বর ও নারীদের কিছু সমস্যা নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসেন অধিকাংশ রোগী।
টিকিট কাউন্টার থেকে রোগীদের সমস্যা শুনে সে অনুযায়ী ডাক্তার নির্ধারণ, রোগ নির্ণয়ের জন্য বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার অর্থ জমা নেওয়া ও রোগী ভর্তির যাবতীয় ব্যবস্থার দায়িত্ব পালন করেন কাউন্টারে দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা।
তারাই অভিযোগ করে বলেন, অধিকাংশ চিকিৎসক হাসপাতালে আসেন না। আর মাঝে মাঝে এলেও দুপুর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই দলবেধে চলে যান।
সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা বলেও জানান টিকিট প্রদানকারীরা।
মুগদা সরকারি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ১৪১ জন ডাক্তার, ২০৫ জন নার্স ও ২২টি বিভাগে ২৪ ঘণ্টা রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার কথা জানান হাসপাতালের প্রকল্প পরিচালক ডা. মুহাম্মদ মুস্তাফিজুর রহমান মিয়া।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিদিন এ হাসপাতালে ১৬শ’ থেকে ১৮শ’ রোগী চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন। এছাড়া বর্তমানে প্রায় দেড়শ’ রোগী হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
তবে বাস্তবের চিত্র ভিন্ন। হাসপাতালের টিকিট কাউন্টারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গড়ে প্রতিদিন ৫শ’ বা তার একটু বেশি রোগী চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন। তবে গুরুত্বপূর্ণ কোনো রোগের চিকিৎসা কেউ নিতে আসেন না।
সরকারি এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের নাম, ঠিকানা লেখা হয় না। মাত্র ১০ টাকা মূল্যের টিকিট দিয়েই চলছে রোগী গণনা।
চিকিৎসা নিতে আসা একাধিক রোগীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জটিল কোনো রোগের জন্য তারা এখানে আসেননি। এছাড়া রোগীদের মধ্যে বেশির ভাগই নারী।
এদিকে হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৫ থেকে ২০টি রক্তের পরীক্ষা ছাড়া এ হাসপাতালে আর কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয় না।
হাসপাতাল উদ্বোধন উপলক্ষে সে সময় তিনটি এক্স-রে মেশিন, দু’টি আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন ও তিনটি ইসিজি মেশিন আনা হয়েছিল। তবে সেগুলো এখনো চালু হয়নি।
হাসপাতালের প্রকল্প পরিচালক ডা. মুহাম্মদ মুস্তাফিজুর রহমান মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের এখানে সব ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলে।
‘তাহলে কী আমার জানা তথ্য ভুল?’ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আপনার তথ্য সম্পূর্ণ ভুল নয়। হাসপাতালের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। সম্পূর্ণ বিষয় মন্ত্রণালয় দেখছে, এ বিষয়ে আর কিছু তিনি বলতে পারবেন না বলেও জানান পরিচালক।
১৪ তলা ভবনের ৮তলা পর্যন্ত মানুষের চলাচল রয়েছে। ৪তলা থেকে ভর্তি রোগীদের ওয়ার্ড শুরু হয়েছে।
পুরো হাসপাতালে ওয়ার্ড ঘুরে দেখা যায়, ৬০ থেকে ৭০ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দাবি করছেন, প্রায় দেড়শ’ রোগী ভর্তি রয়েছেন।
শিশু ও গাইনি বিভাগে রোগী ভর্তি রয়েছে বেশি। মেডিসিন বিভাগেও কিছু রয়েছে। তবে চক্ষু বিভাগে মাত্র একজন রোগী ভর্তি রয়েছেন।
কার্ডিওলজি, অর্থপেডিক্স, ইএনটি, সার্জারি, শিশু সার্জারি, ইউরোলজি, নেফ্রলজি, ভায়ালাসিম, চর্ম ও যৌন ওয়ার্ডে তালা ঝুলতে দেখা গেছে।
মুগদা সরকারি হাসপাতালে নিবিঢ় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র (আইসিইউ) এবং সিসিইউ বিভাগের গেটেও তালা। এ হাসপাতালে হয় না কোনো অপারেশন। চোখ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার মতো যন্ত্রপাতি নেই। তবে চক্ষু বিভাগ ও চিকিৎসক রয়েছে।
রক্তচাপ নির্ণয় ও হৃদস্পন্দনের চিত্র দেখার মতো গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রটি না থাকায় হাসপাতালের কার্ডিওলজি বা হৃদরোগ বিভাগটি কার্যত অচল।
এদিকে অধিকাংশ ওয়ার্ডের নার্স ও অন্যরা কর্মহীন সময় কাটাচ্ছেন।
উপস্থিত নার্সদের কাছে রোগীর সংখ্যা কম কেন? জানতে চাইলে শিশু বিভাগের চারজন নার্স প্রতিবেদকের পরিচয় জানতে চান। পরিচয় পাওয়ার পরে তিনজন স্থান ত্যাগ করেন ও বাকি একজন পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন।
তবে এ বিষয়ে একজন আয়া (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) জানান, ডাক্তার সকালে আসেন। আবার দুপুরে বাসায় চলে যাওয়ার আগে একবার আসেন। রোগীদের বড় ধরনের সমস্যা না হলে আর কোনো ডাক্তার আসেন না।
এভাবে কি হাসপাতাল চলে? ওই আয়া প্রতিবেদককে প্রশ্ন করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১০২৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ৯, ২০১৫
এফবি/আরএ/এএসআর