ঢাকা: এইডস ঝুঁকি বেড়েছে দেশের অপেক্ষাকৃত তরুণ, কর্মক্ষম ও উপার্জন বয়সীদের, বিপদে অভিবাসীরাও। তাদের মধ্যে এইডস আক্রান্ত হওয়ার হার অনেক বেশি দেখা যাচ্ছে।
সরকারি হিসাব বলছে, ২৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সীদের মধ্যে এইডস আক্রান্তের হার বেড়েছে। ২০১৪ সালের নভেম্বর থেকে ২০১৫’র অক্টোবর পর্যন্ত এ বয়সসীমার মানুষ এইডস আক্রান্ত হয়েছেন বেশি। তাদের মধ্যে নতুন আক্রান্ত ৩৫৮ জন, অর্থাৎ বছরটিতে মোট আক্রান্তের হার ৭৬ দশমিক ৩ শতাংশ।
এ হিসাব আরও দেখাচ্ছে, নারীদের চেয়ে পুরুষদের এইডস আক্রান্ত হওয়ার হার বেশি। আক্রান্ত নারীদের অধিকাংশই আবার স্বামীর কাছ থেকে এ রোগ পাচ্ছেন।
বছরটিতে ৩৪৪ জন পুরুষ নতুন করে এইডস আক্রান্ত হয়েছেন, যা মোট আক্রান্তের ৭৩ শতাংশ। নারীদের মধ্যে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা ১১৭ জন, যা মোট আক্রান্তের ২৫ শতাংশ। তৃতীয় লিঙ্গ বা ট্রান্সজেন্ডারদের মধ্যে ৮ জন এ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন, যা মোট আক্রান্তের ২ শতাংশ।
মোট আক্রান্তের প্রায় ৩০ শতাংশ এখন অভিবাসী বা আগে অভিবাসী ছিলেন, একই সময়ের হিসাবে দেখা গেছে। এ অভিবাসীদের মাধ্যমে সংক্রমিত হচ্ছেন তাদের স্ত্রী-সন্তান।
ইউএনএইডস জরিপ অনুযায়ী, ২০১৪ সালে নতুন সংক্রমিত হয়েছিল ৩০ শতাংশ নারী, যাদের স্বামী অভিবাসী।
শুধু অভিবাসীদের স্ত্রী নয়, আক্রান্তদের অনেকেই পরোক্ষ শিকার হয়েছেন। কেউ অন্যের ব্যবহৃত সিরিঞ্জ ব্যবহার করে, কেউ অজান্তে এইচআইভি পজিটিভ রক্ত শরীরে নিয়ে, কেউ পেয়েছেন স্বামী বা মায়ের কাছ থেকে।
‘বিশ্ব এইডস দিবস-২০১৫’ উপলক্ষে সরকারি প্রতিবেদন সবিস্তারে এসব তথ্য জানাচ্ছে। এতে আরও বলা হয়েছে, ২০১৫ সালে এইডস’র নতুন আক্রান্ত চিহ্নিত হয়েছে ৪৬৯ জন, মারা গেছে ৯৫ জন। যা আগের বছরগুলোর চেয়ে বেশি।
শুধু উপার্জনক্ষম তরুণ শ্রেণী নয়, ঝুঁকিতে রয়েছেন বয়স্করাও, যাদের বয়স ৫০’র বেশি।
তাদের মধ্যে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা ৫০, যা মোট আক্রান্তের ১০ দশমিক ৭ শতাংশ। সদ্য কৈশোর পেরোনো তরুণদের (১৯-২৪) মধ্যে নতুন আক্রান্ত ৩৬ জন, যা মোট আক্রান্তের ৭ দশমিক ৭ শতাংশ।
এক্ষেত্রে অভিবাসীদের এইডস সম্পর্কে জ্ঞান ও সচেতনতার অভাবকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টদের কেউ কেউ।
তারা মনে করেন, অভিবাসনের আগে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় না, দেশে প্রবেশের সময় বিমানবন্দরে রোগ সনাক্তের উপযুক্ত ব্যবস্থার ঘটতি থাকায় সংক্রমণ দেরিতে সনাক্ত হচ্ছে। তার আগেই এ ভাইরাসের শিকারে পরিণত হচ্ছে সংক্রমিতের স্ত্রী-সন্তান।
ইউএনএইডস’র তথ্যমতে, বর্তমান বিশ্বে প্রায় ৩৪ মিলিয়ন মানুষ এইডস রোগে আক্রান্ত, এ পর্যন্ত এ রোগে মৃতের সংখ্যা প্রায় ৩৫ মিলিয়ন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক দীন মোহাম্মদ নুরুল হক, পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. নুর হোসেন তালুকদার, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব অধ্যাপক এম ইকবাল আর্সলান বাংলাদেশকেও ঝুঁকিতে দেখছেন।
তারা বলেন, বাংলাদেশে এক শতাংশেরও কম সংখ্যক মানুষ এইডস আক্রান্ত। কিন্তু বাংলাদেশের ঝুঁকিও কম নয়। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে ঝুঁকি বেশি। প্রতিবেশী দেশ ভারত, মায়ানমার, নেপালে এইডস’র মারাত্মক প্রাদুর্ভাব রয়েছে, যা আমাদের জন্য হুমকি।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, এ পর্যন্ত (১৯৮৯-২০১৫) বাংলাদেশে এইচআইভি সংক্রমিতের সংখ্যা ৪ হাজার ১৪৩ এবং এ রোগে মৃত্যু হয়েছে ৬৫৮ জনের। সংক্রমণ যেন না বাড়ে, সংক্রমিতরা যেন সনাক্ত হন ও চিকিৎসা পান- সে লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার।
এইডস দিবসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) এবং ৭টি মেডিকেল কলেজসহ মোট ১২টি সরকারি হাসপাতালে এইচআইভি রোগ সনাক্তকরণ, চিকিৎসা, আক্রান্তদের বিনামূল্যে ওষুধ এবং কাউন্সিলিং সেবা দেওয়া হচ্ছে।
এইডস ছড়ানোর কারণ হিসেবে একাধিক বার সিরিঞ্জ ব্যবহার নিয়ে উদ্বিগ্নতা প্রকাশ করেছেন মন্ত্রী নাসিম ও ডিজি দীন মোহাম্মদ।
বাংলাদেশের ৯ম সেরো-সার্ভিলেন্স রিপোর্ট বলছে, ঝুঁকিপূর্ণ জনেগোষ্ঠীর মধ্যে এইচআইভি’র মাত্রা ৮ম সাভিলেন্স’র তুলনায় কম এবং এ মাত্রা সিরিঞ্জ ব্যবহারকারী মাদকসেবীদের মধ্যে ওঠা-নামা করে।
মাদকসেবীদের মধ্যেও সচেতনতা এবং সহজলভ্য চিকিৎসা অব্যাহত রাখতে চায় সরকার।
এছাড়া যৌনকর্মী, সমকামী, তৃতীয় লিঙ্গ, ট্রাক চালক, কয়েদি, পেশাদার রক্তদাতা, কনডম বিদ্বেষীদের মাধ্যমে এ রোগ ছড়াচ্ছে।
নুর হোসেন তালুকদার বলেন, চিকিৎসার সুযোগ বাড়ানোর চেষ্টা করছে সরকার, সে সঙ্গে প্রতিরোধের ব্যবস্থাগুলোও জোরদার করতে চায়। জনসচেতনতা বাড়ানো, ধর্মীয় অনুশাসন, জীবন-যাপনে শৃঙ্খলাবোধ, সুদৃঢ় পারিবারিক বন্ধন ও মূল্যবোধের লালনকে উৎসাহিত করবে সরকার।
প্রচার বাড়িয়ে অহেতুক লজ্জার বিষয়টি দূর করা হবে, রোগ প্রতিরোধের প্রয়োজনীয় জ্ঞান সাধারণ মানুষের দুয়ারে পৌঁছাবে, এমনটিই আশা করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১০৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০১৫
এসকেএস/এটি