রায়গঞ্জ (সিরাজগঞ্জ) থেকে ফিরে: গ্রামের শিশুরা প্রতিনিয়তই আক্রান্ত হয় নানা ধরনের বিষক্রিয়ায়। এরজন্য দায়ী পরিবারের সদস্যদের অসতর্কতা।
সিরাজগঞ্জ জেলার রায়গঞ্জ উপজেলার ব্রহ্মগাছা ইউনিয়নে তার প্রমাণ রেখে চলছে বেসরকারি সংস্থা সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্স, বাংলাদেশ (সিআইপিআরবি)। শিশুদের সুরক্ষায় বাড়ি বাড়ি দেওয়া হয়েছে বাক্স। এই বিশেষ বাক্সই দেবে শিশুদের সুরক্ষা।
সিরাজগঞ্জ জেলার রায়গঞ্জ উপজেলায় সরেজমিনে ঘুরে ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা যায়।
ব্রহ্মগাছা ইউনিয়নের ২৪টি গ্রামে বসবাসকারী লোকসংখ্যা ৪১ হাজার ৩৯৮ জন। এরমধ্যে হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ১৯১ জন।
গ্রামের মানুষের প্রধান পেশা কৃষিকাজ। পুরুষরা কাজের তাগিদে মাঠে থাকেন, পারিবারিক কাজে ব্যস্ত থাকেন গৃহিণীরা। মায়েদের ব্যস্ততায় প্রায়ই নানা ধরনের দুর্ঘটনায় পড়তে হয় পরিবারের শিশুদের। এসব শিশুর সুরক্ষায় এগিয়ে আসে বেসরকারি সংস্থা সিআইপিআরবি।
সিআইপিআরবি পাঁচ হাজার ৬৯৮টি পরিবারের উপর জরিপ চালিয়ে ২ হাজার ৮৪৭টি শিশুর সন্ধান পায়। যাদের বয়স ০ থেকে ৬ বছর। এদের মধ্যে ৬শ শিশু গত তিন মাসে কোনো না কোনোভাবে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত।
এদের মধ্যে অনেকেই সাবান, কেরোসিন, তরল বিষাক্ত দ্রব্য, জন্ম নিয়ন্ত্রণ পিল, অপ্রয়োজনীয় ওষুধ, পান খাওয়ার চুন, শ্যাম্পু, স্যাভলন, ডিটারজেন্টসহ বিভিন্ন বিষাক্ত দ্রব্য খেয়ে আক্রান্ত। এরফলে অনেকেই ডায়রিয়া, বমি, বিবর্ণ চেহারা, ত্বকে ঘা, মুখ দিয়ে লালা পড়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়েছে।
ব্রহ্মগাছা ইউনিয়নের শিশুদের সুরক্ষায় কাজ শুরু করে সিআইপিআরবি। সংস্থাটি যেসব বাড়িতে ০ থেকে ৬ বছর বয়সের শিশু রয়েছে, সেসব পরিবারের মায়েদের সঙ্গে মতবিনিময় করে প্রতিটি বাড়িতে একটি করে বাক্স দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। যে বাক্সের মধ্যে মায়েরা ওষুধসহ বিষাক্ত দ্রব্যাবি রেখে তালাবদ্ধ অবস্থায় নিরাপদ দূরত্বে রেখে দিলেই শিশুরা এ ধরনের আক্রান্ত থেকে রেহাই পাবে।
বাক্সের গায়ে লেখা আছে ‘শিশুদের দুর্ঘটনাজনিত বিষপান প্রতিরোধে বিষ ও বিষাক্ত দ্রব্য সংরক্ষণের বাক্স। ’
এমন ২ হাজার ৪শ পরিবারে বাক্স দিয়েছে সিআইপিআরবি। অস্ট্রেলিয়ান সেভ কমিউনিটি ফাউন্ডেশনের সহায়তায় এসব বাক্স দেওয়া হয়। এই বাক্স দেওয়ায় ব্রহ্মগাছা ইউনিয়নে শিশুদের বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার হার অনেকাংশেই কমেছে বলে জানান এলাকাবাসী।
শুধু বাক্স দিয়েই থেমে নেই সিআইপিআরবি। প্রতিটি পরিবারের মায়েদের নিয়ে পরামর্শসভা করে সপ্তাহে ছয়দিন চার ঘণ্টা করে। কীভাবে শিশুদের সুরক্ষা দেওয়া যায় সেসব কৌশল বুঝিয়ে দেওয়া হয় মায়েদের।
ব্রহ্মগাছা ইউনিয়নের হাসিলদাহ গ্রামের বাসিন্দা মোছা. শামসুন্নাহার (৩৫) বাংলানিউজকে বলেন, আগে প্রায়ই কোনো না কোনো বাড়িতে শিশুরা বিভিন্ন বিষাক্ত দ্রব্য খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়তো। কয়েকদিন আগে একটা বাচ্চা কেনোসিন খেয়ে ফেলেছিলো। পরে সেই বাচ্চাকে হাসপাতালে নিতে হয়।
শামসুন্নাহারের মতো আরও অনেকেই সিআইপিআরবির পরামর্শ সভায় অংশ নিয়ে নিজের সন্তানের সুরক্ষায় মনোনিবেশ করেছেন।
একই গ্রামের রহিমা খাতুন বাংলানিউজকে বলেন, আমার এক ছেলের বয়স একবছর। আমি কাজে থাকি। অনেক সময় ঘরের ভেতর সার, কীটনাশক খাটের নিচেই রেখে দিতাম, কখন যে ছেলেটা মুখে দেবে তা বোঝার উপায় ছিলো না। তবে এই বাক্স নেওয়ার পর এখন বাক্সের ভেতর সব কীটনাশক রেখে দেই। এখন অনেক নিরাপদবোধ করি।
সিআইপিআরবির সুইম সেভ প্রকল্পের রায়গঞ্জ শাখার প্রকল্প সমন্বয়ক ডা. ইখতিয়ার আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, আমরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে জরিপ করে দেখেছি, যাদের বাড়িতে ০ থেকে ৬ বছরের বাচ্চা আছে তাদেরই অরিয়েন্টেশন ক্লাস করানো হয়েছে। তাদের শেখানো হচ্ছে কোন জিনিস খেলে বাচ্চার কি ক্ষতি গতে পারে। পাশাপাশি বাচ্চাদের সুরক্ষায় একটি বাক্স দিয়েছি, যেন সব কীটনাশক জাতীয় দ্রব্য এই বাক্সে রেখেই নিরাপদে মায়েরা কাজ করতে পারেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৫৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০১৫
এসএম/এএ