ঢাকা: রাজধানীর শেরে-ই-বাংলা-নগরে অবস্থিত জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল। ১০ টাকার টিকেটে এখানে মেলে স্বাস্থ্যসেবা, ওষুধ ও সাইকোথেরাপি।
সম্প্রতি সরেজমিনে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের বর্হিবিভাগে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালে রোগীদের খুব একটা ভিড় নেই। রোগীরা সুশৃঙ্খলভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে টিকেট কাটছেন। এছাড়া রোগী দেখার জন্য বসে আছেন চার থেকে ৫ জন চিকিৎসক।
এই হাসপাতালটিতে রোগীদের বিনামূল্যে ওষুধ ও সাইকোথেরাপি দেওয়া হয়। ১৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালটিতে যে রোগীরা ভর্তি থাকেন তাদের জন্য ওষুধ ফ্রি। এছাড়া যে রোগীরা বহির্বিভাগে চিকিৎসক দেখান তাদের কমপক্ষে ৭ দিনের ওষুধ বিনামূল্যে দেওয়া হয়। ৬০ ভাগ পেয়িং (টাকা দিয়ে থাকতে হয়) বেড। ৪০ ভাগ নন পেয়িং বেড। পেয়িং বেড ২৭৫ টাকা, কেবিনের ভাড়া ৪২৫ টাকা।
হাসপাতালটির টিকিট কাউন্টারের ম্যানেজার গোলাম রহমান বাংলানিউজকে বলেন, টিকেটের মূল্য মাত্র ১০ টাকা। রোগীর খুব একটা চাপ নেই । প্রতিদিন এক’শ থেকে দেড়’শ রোগী হয়ে থাকে। এর জন্য ডাক্তার বসেন চার থেকে পাঁচ জন।
মেয়ে মারিয়া জাহানের চিকিৎসা করানোর জন্য পটুয়াখালী থেকে ঢাকায় এসেছেন মো. বেলাল হোসেন। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, মেয়ের মানসিক সমস্যা হয়েছে। এ্যাবনরমাল আচরণ করে।
তিনি বলেন, ১০ টাকা দিয়ে টিকেট কেটে ডাক্তার দেখিয়েছি। এছাড়া ওষুধও পেয়েছি। বরিশাল থেকে ছেলে মোজাম্মেল হোসেনের চিকিৎসা করাতে এসেছেন মা মালেকা বানু।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, এখানকার চিকিৎসা সেবার মান ভালো। চার বছর আগে আমার ছেলে এই হাসপাতালের চিকিৎসা নিয়ে ভালো হয়েছিল। এখন আগের মত উল্টা-পাল্টা আচরণ করে। তাই নিয়ে আসছি।
চিকিৎসার বিষয়ে বাংলানিউজকে বিভিন্ন তথ্য জানান ডা. শেখ আব্দুল্লাহ-আল মামুন ও ডা. ফাতেমা মারিয়া।
এই দুই চিকিৎসক বলেন, আমাদের এই হাসপাতালে পর্যাপ্ত পরিমাণ ওষুধ রয়েছে। ঢাকার আর কোনো মানসিক হাসপাতালে এত ওষুধের সরবরাহ নেই।
তিনি বলেন, আমারা প্রতিদিন যে সকল রোগী দেখে থাকি তাদের মধ্যে বেশির ভাগই হচ্ছে সিজোফ্রেনিয়া, ডিপ্রেশন, হিসটেরিয়া, বিষণ্নতা, মাদকাসক্ত। অনেকে আমাদের সেবা সম্পর্কে খুব একটা জানে না। এছাড়া মানসিক সমস্যা হলে লজ্জা ও ভয়েও রোগীরা আসে না।
এই চিকিৎসক আরো জানান, মানসিক রোগীদের জন্য যেটি সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সেটি হলো সহানুভূতি, ভালোবাসা ও ভাল ব্যবহার। সিজোফ্রেনিয়া ও ডিপ্রেশনের রোগীরা চিকিৎসা পেলে পুরোপুরি ভালো হয় বলেও জানান তিনি।
ডা. ফাতেমা মারিয়া বলেন, আমরা বিনামূল্যে সাইকোথেরাপি দিয়ে থাকি। এছাড়া সিটিস্ক্যানের সুবিধা রয়েছে। তবে মেশিনটি এখন নষ্ট রয়েছে।
দুই যুগেরও বেশি সময় আগে শেরে বাংলানগরে গড়ে উঠেছে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট অ্যান্ড হাসপাতাল। ১.৭৯ একর জমির ওপর গড়ে ওঠা হাসপাতালটিতে আছে বহির্বির্ভাগ এবং আন্তঃবিভাগ।
১৯৮৮ সালে মিটফোর্ড হাসপাতালে থাকার সময় একে ইনস্টিটিউট অব মেন্টাল হেলথ অ্যান্ড রিসার্চ (আইএমএইচএআর) হিসেবে নামকরণ করা হয়।
১৯৯০ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজে প্রতিষ্ঠানটি স্থানান্তরিত করা হয়। তবে বহির্বিভাগ ও আন্তঃবিভাগের সুবিধা তখন ছিল না। পরে শেরে বাংলানগরের জায়গাটি বরাদ্দ নেওয়া হয়।
এরপর ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠানটি অধিকতর উন্নত হয়ে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়।
নতুন জায়গায় হাসপাতালটি প্রথমে কেবল আউটডোর হিসেবে চালু হয়। এরপর ২০০১ সালে সব কর্মকর্তা নিয়োগের পর আউটডোর এবং ইনডোর এবং জরুরি বিভাগ চালু হয়। বর্তমানে সরকারের আর্থিক সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠানটি চলে। এ ছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কিছু ফান্ড দেয়।
হাসপাতালটিতে ছয়টি বিভাগ রয়েছে। এগুলো হলো এডাল্ট সাইকিয়াট্রিক বিভাগ, শিশু এবং এর বিকাশে সাইকিয়াট্রিক বিভাগ, বয়স্কদের মানসিক রোগ ও কমিউনিটি মানসিক রোগ বিভাগ। এ ছাড়া এখানে রয়েছে ক্লিনিক্যাল সাইকোলোজি বিভাগ।
এর পাশাপাশি রয়েছে সাহায্যকারী বিভাগ রেডিওলজি, এনেসথেসিওলজি ও প্যাথলজি বিভাগ। রয়েছে সমাজ কল্যাণ বিভাগও। তবে এটা সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আওতায় পরিচালিত হয়। বর্তমানে এখানে চিকিৎসক রয়েছে ৪৪ জন। কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা ১৮৪ জন।
বাংলাদেশ সময়: ১২৪৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০১৬
আরএটি/আরআই