ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

বেশিরভাগ যন্ত্রপাতিই ‘অসুস্থ’ বক্ষব্যাধি হাসপাতালে

শেখ জাহিদুজ্জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১০৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৯, ২০১৬
বেশিরভাগ যন্ত্রপাতিই ‘অসুস্থ’ বক্ষব্যাধি হাসপাতালে

জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের একমাত্র সিটি স্ক্যান মেশিনটি বিগত চার মাস ধরে অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে। আর হাসপাতালের দুটি ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন থাকলেও একটি অকেজো হয়ে পড়ে আছে দীর্ঘ ছয় মাস ধরে।

ঢাকা: জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের একমাত্র সিটি স্ক্যান মেশিনটি বিগত চার মাস ধরে অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে। আর হাসপাতালের দুটি ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন থাকলেও একটি অকেজো হয়ে পড়ে আছে দীর্ঘ ছয় মাস ধরে।

অন্যদিকে ন্যাশনাল ইলেকট্রো মেডিকেল ইকুইপমেন্ট অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স ওয়ার্কশপের (নিমিউ) অনুমোদন না পাওয়ায় মেরামত করা হচ্ছে না সিটি স্ক্যান মেশিনটি। এছাড়া ভেন্টিলেটরবিহীন ছয়টি অ্যানেসথেসিয়া মেশিনের তিনটি ও তিনটি স্টেরিলাইজার মেশিনের সবক’টি পড়ে আছে অকেজো অবস্থায়।

শুধু তাই নয়, মস্তিস্ক, স্পাইনাল কর্ড, বোন টিবির মতো রোগ নির্ণয়ে ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স ইমেজিং (এমআরআই) মেশিন, মস্তিস্ক, বুক পরীক্ষার জন্য সিটি এনজিওগ্রাম মেশিন, অত্যাধুনিক আলট্রাসনোগ্রাফি মেশিন এবং শরীরের কোথাও ক্যান্সারের উপসর্গ লুকিয়ে থাকলে সেটি নির্ণয়ে পেট সিটি স্ক্যান মেশিনের প্রয়োজন হয়। অথচ সরকারি এ বক্ষব্যাধি হাসপাতালে নেই এসবের কোনোটিই।

ফলে সরকারি এ হাসপাতালটিতে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা পড়ছেন চরম বিপাকে। অন্যদিকে হাসপাতালটিতে বিভিন্ন যন্ত্রাংশ নষ্ট থাকার কারণে পরীক্ষা-নিরীক্ষার খরচ যোগাতে অনেকটাই হিমশিম খেতে হচ্ছে রোগীদের। কেননা এখানে চিকিৎসা নিতে আসা অধিকাংশ রোগীই হচ্ছে নিম্নবিত্ত ও অসহায়। এছাড়া অধিকাংশ যন্ত্রাংশ নষ্ট থাকায় বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।

সম্প্রতি জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে সরেজমিনে পরিদর্শনে পরীক্ষা-নিরীক্ষা নিয়ে এভাবে বিপাকে পড়তে দেখা যায় অধিকাংশ রোগী এবং তাদের স্বজনদের।

শরীয়তপুর থেকে চিকিৎসা নিতে আসা শরীফ (৩৪) বাংলানিউজকে বলেন, ডাক্তার বুকের এক্সরে করাতে বলেছেন। কিন্তু এখানের ডিজিটাল এক্সরে মেশিন নষ্ট থাকায় অন্য কোথায়ও থেকে করাতে হবে। কিন্তু আমি গরীব মানুষ। এই হাসপাতালের মেশিন ভালো থাকলে ২০০ টাকায় এক্সরে করানো যেত। অন্য জায়াগা থেকে করাতে গেলে ৫০০ টাকা লাগবে।

এভাবেই প্রতিদিন জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে আসা শতশত রোগীদের অর্থনৈতিক বিড়ম্বনাসহ নানা ধরনের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক ডা. মোহাম্মদ শাহেদুর রহমান খান বাংলানিউজকে বলেন, হাসপাতালের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। এজন্য সংশ্লিষ্ট অধিদফতর বারবার লিখিত অভিযোগ করেও কোনো কাজ হচ্ছে না।

এছাড়া ডিজিটাল এক্সরে মেশিনটি শীঘ্রই মেরামত করা হবে। অন্যদিকে নিমিউ-সংশ্লিষ্টরা সিটি স্ক্যান মেশিনটি মেরামতের জন্য ৩৪ লাখ টাকা প্রয়োজন বলে জানান তিনি।

এখন এটি মেরামত করা হবে নাকি নতুন আর একটি মেশিন ক্রয় করা হবে এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়েই ভালো বলতে পারবেন। তবে খুব শিগগিরই যন্ত্রাংশগুলো মেরামত করা হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।

বক্ষব্যাধি হাসপাতালের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ নষ্ট হওয়ার বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বাংলানিউজকে বলেন, আমরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। হাসপাতালটিতে বিভিন্ন যন্ত্রাংশ নষ্ট আছে। এছাড়া রোগীদের কথা বিবেচনা করে যতো দ্রুত সম্ভব ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, ১৯৫৫ সালে যক্ষ্মা বা টিবি হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৬২ সালে এটি উন্নীত হয় বক্ষব্যাধি হাসপাতালে। ১৯৯৭ সালে নামকরণ হয় জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল। ১৯৫৫ সালে ২শ’ শয্যার থাকলেও ১৯৬২ সালে একে ৫শ’ শয্যায় উন্নীত করা হয়। এর পর ১৯৯৩ সালে উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে ৬শ’ শয্যার হাসপাতালে পরিণত হয়। ২০০৪ সালে আরও ৭০ শয্যা যোগ হওয়া বর্তমানে ৬৭০ শয্যার হাসপাতাল এটি।

বাংলাদেশ সময়: ০৭০৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৯, ২০১৬
এসজে/ওএইচ/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।