ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

স্থুলতা একটি মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০২৮ ঘণ্টা, মার্চ ৪, ২০১৭
স্থুলতা একটি মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি

ঢাকা: আমাদের দেশে ইদানিং স্থুলতা মারাত্মক সমস্যায় রূপ নিচ্ছে। উচ্চতা অনুসারে সবারই একটা নির্দিষ্ট ওজন থাকতে হয়। সাধারণভাবে স্বাভাবিক ওজনের চেয়ে ১০ ভাগ ওজন বেশি হলে তাকে স্থুলতা বা ওবেসিটি বলা যায়।

যেমন ধরুন, কারো ওজন হওয়া উচিৎ ৬০ কেজি, তাঁর যদি ৬৬ কেজির চেয়ে ওজন বেশি হয় তাকে আমরা স্থুলতা বলবো। স্থুলতার জন্য বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়।

এছাড়াও স্থুলতার জন্য বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন রোগ ও জটিলতা দেখা দেবে। স্থুলতা একটি রোগ। পুরুষদের চেয়ে নারীরা স্থুলতায় ভোগেন বেশি। ওজন কমালে মৃত্যু ঝুঁকিও কমে।

স্থুলতা একটি নিয়ন্ত্রণযোগ্য সমস্যা। স্থুলতার সঙ্গে বিভিন্ন রোগের সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। যেমন: হৃদরোগ, হার্ট অ্যাটাক, উচ্চ রক্তচাপ, হার্ট ফেইলিওর, উচ্চ কোলেস্টেরল, ডায়াবেটিস, মেয়েদের মাসিকের সমস্যা, পলিসিস্টিক ওভারি, বন্ধ্যাত্ব, গর্ভকালীন জটিলতা, ভ্রূণের মৃত্যু, স্ট্রোক, মাইগ্রেইন, কোমর, হাঁটু ও পায়ে ব্যথা, পা ফুলা থাকা, বগলের নিচে ও ঘাঢ়ে কালচে দাগ পরা, লিভারে চর্বি জমে যাওয়া, এসিডিটির সমস্যা, ঘুমের মধ্যে শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা ও নাক ডাকা, এজমা, পুরুষের যৌন ক্ষমতা হ্রাস, প্রস্রাব আটকে রাখতে না পারা, পুং লিঙ্গ ছোট থাকা, কিডনির কার্যক্ষমতা কমে যাওয়া, খাদ্যনালীসহ শরীরে বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধিসহ আরও অনেক রোগ ও জটিলতা দেখা দিতে পারে।

স্থুলতার কারণ: অধিক খাদ্য গ্রহণ, কায়িক পরিশ্রম না করা, বংশগত কারণ, কিছু কিছু হরমোন জনিত কারণে, কোন কোন ওষুধ জনিত কারণে এবং কখনও কখনও মানসিক সমস্যা থেকেও স্থুলতা হতে পারে।

স্থুলতা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব। এজন্য খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করা যেতে পারে, কায়িক পরিশ্রম ও ব্যায়াম করতে হবে, কম ক্যালোরির খাদ্য গ্রহণ করতে হবে, চর্বি ও চিনিযুক্ত খাদ্য গ্রহণ কমাতে হবে বা বিরত থাকতে হবে, আঁশ যুক্ত খাদ্য বেশি খেতে হবে। এছাড়াও চিকিৎসকের পরামর্শমতে ওজন কমানোর ওষুধ খাওয়া যেতে পারে।

স্থুলতা পরিমাপের জন্য আমরা কয়েকটি প্যারামিটার বা মাপের সাহায্য নিতে পারি।

(ক) আদর্শ শারীরিক ওজন (Ideal Body Weight)ঃ
কোন ব্যক্তির উচ্চতা অনুযায়ী আদর্শ শারীরিক ওজন (Ideal Body Weight) কতটুকু হওয়া উচিৎ তা সাধারণভাবে বের করার নিয়ম হল: উচ্চতা যত সেন্টিমিটার, তার থেকে ১০০ বিয়োগ দিন। মনে করুন আপনার উচ্চতা ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি, অর্থাৎ ৬৬ ইঞ্চি। একে সেন্টিমিটারে নিতে হলে ২.৫৪ দিয়ে গুন করলে পাওয়া যাবে ১৬৮ সেন্টিমিটার (প্রায়)। এখন ১৬৮ থেকে ১০০ বাদ দিলে থাকে ৬৮। অর্থাৎ ৬৮ কেজি। এটিই হল ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি উচ্চতার একজন মানুষের আদর্শ শারীরিক ওজন।

(খ) বডি মাস ইনডেক্স (বিএমআই) (Body Mass Index (BMI)
একজন ব্যক্তির বিএমআই হিসাব করার জন্য ওজনকে (কেজি) উচ্চতা (বর্গ মিটার) দিয়ে ভাগ করতে হবে। ধরা যাক কারো ওজন ৮০ কেজি এবং উচ্চতা ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি (১৬৮ সেন্টিমিটার বা ১.৬৮ মিটার প্রায়)। ১.৬৮ এর বর্গ হল ২.৮২ বর্গ মিটার। এখন ৮০ কেজিকে ২.৮২ বর্গমিটার দিয়ে ভাগ করলে পাওয়া যাবে ২৮.৩৬ কেজি/বর্গমিটার। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিয়মানুযায়ী বিএমআই ১৮.৫ এর নীচে হলে নিম্ন ওজন, ১৮.৫-২৫ হল  স্বাভাবিক ওজন, ২৫-৩০ হলে ওজনাধিক্য, ৩০ এর বেশি হলে স্থুলতা, ৪৫ এর বেশি হলে মারাত্মক স্থুলতা।

(গ) কোমর-নিতম্ব অনুপাত (Waist-Hip Ratio):
কোমরের মাপকে নিতম্বের মাপ দিয়ে ভাগ করলে কোমর-নিতম্ব অনুপাত পাওয়া যাবে। এই মাপ পুরুষের ক্ষেত্রে ০.৯ এবং নারীদের ক্ষেত্রে ০.৮ এর কম থাকতে হবে। ধরা যাক, একজন তরুণীর কোমরের মাপ ২৪ ইঞ্চি (৬১ সেমি) এবং নিতম্বের মাপ ৩৬ ইঞ্চি (৯২ সেমি)। তাহলে তাঁর কোমর-নিতম্ব অনুপাত হবে ০.৬৬।

স্থুলতা থেকে মুক্তি পেতে হলে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের পাশাপাশি আমাদের প্রতিদিন কায়িক পরিশ্রম ও বিভিন্ন ধরনের ব্যায়াম করতে হবে।

ব্যায়ামের উপকারিতা:
রক্তে অক্সিজেনের প্রবাহ বৃদ্ধি পায়, মাংসপেশিতে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায়, শরীরের শক্তি বৃদ্ধি পায়, চর্বির পরিমাণ কমে, স্থুল ব্যক্তির ওজন কমতে সাহায্য করে, রুগ্ন ব্যক্তির স্বাস্থ্য ভালো হতে সাহায্য করে, রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা স্বাভাবিক থাকে, রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকে, রক্তের কোলেস্টেরল স্বাভাবিক মাত্রায় থাকে, কর্মক্ষমতা বাড়ে, ক্যান্সারের সম্ভাবনা কমে, মৃত্যু ঝুঁকি কমে।

যারা কোমরের ব্যাথায় বা পায়ের সমস্যার জন্য ব্যায়াম করতে পারেন না, তারা চেয়ারে বসে বা বিছানায় শুয়ে বিভিন্ন ধরনের ব্যায়াম করতে পারেন।

শিশুদের স্থুলতা:
২ বছর বয়সের পর থেকেই শিশুদের স্থুলতা আছে কিনা সেদিকে নজর দিতে হবে। শিশুদের স্থুলতাকে প্রথম থেকেই নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে ভবিষ্যতে বিভিন্ন সমস্যায় আক্রান্ত হবে। নিম্নে, বয়স অনুযায়ী শিশুদের স্বাভাবিক ওজন কত থাকতে হবে তাঁর একটি সাধারণ তালিকা দেওয়া হল (কিছুটা কম-বেশি হতে পারে)। ১ বছরের শিশুর ওজন হতে হবে ১০ কেজি, ২ বছরে ১২ কেজি, ৩ বছরে ১৪ কেজি, ৪ বছরে ১৬.৫ কেজি, ৫ বছরে ১৮.৫ কেজি, ৬ বছরে ২১ কেজি, ৭ বছরে ২৩ কেজি, ৮ বছরে ২৫.৫ কেজি, ৯ বছরে ২৮ কেজি, ১০ বছরে ৩১.৫ কেজি , ১১ বছরে ৩৩.৫ কেজি, ১২ বছরে ৩৮ কেজি।

ডা. এম. মঞ্জুর আহমেদ
ইমেইলঃ [email protected]
ওয়েবসাইটঃ www.diabeticcenteronline.com

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।