ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

ইন্টার্নদের ধর্মঘটে মিটফোর্ডে ভোগান্তির খণ্ডচিত্র

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৩৯ ঘণ্টা, মার্চ ৬, ২০১৭
ইন্টার্নদের ধর্মঘটে মিটফোর্ডে ভোগান্তির খণ্ডচিত্র মিটফোর্ড হাসপাতালের বাইরে রোগীদের অপেক্ষা। যদিও ধর্মঘট প্রত্যাহারে এ চিত্র কিছুটা বদলেছে। ছবি: সুমন শেখ

ঢাকা: ভোররাত থেকে মায়ের পেটে ব্যথা। তখন থেকে খুব চিৎকার করছেন। প্রাথমিকভাবে কিছু ওষুধ খাওয়ালাম। কোনো কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। সকাল ৭টার দিকে মিটফোর্ড হাসপাতালে (স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল) নিয়ে এসেছি তাকে। এখনও জরুরি বিভাগের চিকিৎসকে দেখাতে পারলাম না মাকে! হাসপাতালে নাকি ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ধর্মঘট চলছে, তাই পর্যাপ্ত চিকিৎসক নেই। মায়ের কান্না আর কতো সময় সহ্য করা যায় রে ভাই! তাই অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে অন্য হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছি। এরা ডাক্তার না ভাই, এরা শিক্ষিত ‘শয়তান’।

সোমবার (৬ মার্চ) মিটফোর্ড হাসপাতালে গিয়ে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ধর্মঘটের কারণে মাকে চিকিৎসা করাতে না পেরে বেলা ১১টার দিকে বের হয়ে যাওয়ার সময় এভাবেই আক্ষেপ প্রকাশ করছিলেন মোফাজ্জল (৩৮)। যদিও তার কিছুক্ষণ বাদেই স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ধর্মঘটীদের বৈঠকের পর কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা আসে।

 

কিন্তু ৪ মার্চ থেকে সারাদেশে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ধর্মঘট শুরু হওয়ার পর এমনই ভোগান্তি পোহাতে হয় ঢাকাসহ সারাদেশের রোগীদের।

সকালে ধর্মঘট প্রত্যাহারের আগে মিটফোর্ড হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, জরুরি বিভাগের ১ নম্বর ভবনের নিচ তলায় বসে আছেন অস্ত্রোপচার করা রোগী আব্দুল মান্নান। তার চেঁচামেচিতে হাসপাতাল চত্বর ভারি হয়ে উঠেছে। সফলভাবে অস্ত্রোপচার হলেও ওষুধ পাতি আর চিকিৎসকদের খোঁজখবরের অভাবে অবস্থার অবনতি হচ্ছিল। বাড়ি থেকে তার কেউ না আসায় নিজেই ডাক্তার খুঁজতে এসছেন।  

আবদুল মান্নানের অভিযোগ, গতকাল থেকে কোনো চিকিৎসক তার খোঁজখবর নেননি। এমনকি তার ক্ষত জায়গা পরিষ্কারও করা হয়নি।  

৯০০ শয্যার এ হাসপাতালে অনেক রোগীই অস্ত্রোপচারের জন্য ভর্তি হয়েছেন। কিন্তু অস্ত্রোপচার কার্যক্রম একপ্রকার বন্ধ থাকতে দেখা যায় হাসপাতালে। মনে হচ্ছিল, যেন পুরো হাসপাতালই ধর্মঘটে বসেছে।

এই ধর্মঘটের প্রভাব আউট ডোর পর্যন্ত ছড়িয়ে যেতে দেখা যায়। আউট ডোরের সামনে শত শত রোগী বা রোগীর স্বজনকে টিকিট কেটে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় চিকিৎসার জন্য।

গত ১৯ ফেব্রুয়ারি বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে সিরাজগঞ্জ থেকে আসা রোগী আলাউদ্দিনের ছেলে ও ২ মেয়ে তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে কিছু বিক্ষুব্ধ ইন্টার্ন চিকিৎসকদের হাতে প্রহৃত হন।
 
পরে আবার ইন্টার্ন চিকিৎসকরা রোগীর স্বজনের হাতে লাঞ্ছিত হওয়ার অভিযোগ তুলে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের ডাক দেন। এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের নির্দেশে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
 
২৫ ফেব্রুয়ারি ৩ সদস্যের তদন্ত দলটি শজিমেকে যায়। উচ্চ পর্যায়ের ওই কমিটি তদন্ত শেষে প্রতিবেদন জমা দেয়। প্রতিবেদনের আলোকে ওই ঘটনায় ছাত্রলীগের শজিমেক শাখার সভাপতি ইন্টার্ন চিকিৎসক ডা. এম এ আল মামুন, সহ-সভাপতি ডা. আশিকুজ্জামান আসিফ, সাবেক সহ-সভাপতি ডা. কুতুব উদ্দিন ও ডা. নূরজাহান বিনতে ইসলাম নাজের ইন্টার্নশিপ ছয় মাসের জন্য স্থগিত করা হয়।
 
শাস্তি শেষে তাদের চারটি ভিন্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ইন্টার্নশিপ শেষ করতে হবে বলেও ঘোষণা দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম।
 
২ মার্চ বিকেলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ঘোষিত শাস্তির বিষয়টি জানার পর হাসপাতালের ১৩০ জন ইন্টার্ন চিকিৎসক একযোগে ধর্মঘট শুরু করেন।
 
শুরুতে তারা অঘোষিতভাবে ধর্মঘট অব্যাহত রাখলেও ৪ মার্চ মানববন্ধন কমসূচি পালনের মধ্য দিয়ে মূলত শাস্তি প্রত্যাহারের দাবির আন্দোলন প্রকাশ্যে নিয়ে আসেন। এরপর দেশের অন্যান্য মেডিকেল কলেজগুলোর ইন্টার্ন চিকিৎসকরাও আন্দোলনে যোগ দিয়ে ধর্মঘট শুরু করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৫ ঘণ্টা, মার্চ ০৬, ২০১৭ 
এসটি/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।