কিন্তু হাসপাতালে পৌঁছার পরপরই দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করলেন। এরপর তার স্বজন ও সহকর্মীরা সিদ্ধান্ত নিলেন, মরদেহে কোন কাটা-ছেঁড়া নয়।
তারা পরামর্শ দিলেন, হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (অর্থ) লক্ষী নারায়ণ মজুমদারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে। কিন্তু মজুমদার সাহেব বেঁকে বসলেন। জানালেন, লিখিত আবেদন ছাড়া মরদেহ নিয়ে যাওয়া যাবে না। একই সঙ্গে পুলিশের অনুমতিও লাগবে।
পৃথকভাবে মৃতের সহকর্মীরা মোবাইলে কথা বললেন কোতোয়ালী মডেল থানা ও ফুলবাড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল ইসলাম ও রিফাত খান রাজিবের সঙ্গে।
তারা জানালেন, মামলা মোকদ্দমা না করলে বিনা ময়নাতদন্তেই মরদেহ নিয়ে যাওয়া যাবে।
স্বজনরা পুলিশের বক্তব্য পৌছে দিলেন নার্সকে। লিখিত আবেদনও জানালো হলো। কিন্তু তিনি যে নাছোড়বান্দা! সহকারী পরিচালকের অনুমতি ছাড়া মরদেহ নেয়া যাবে না বলে গোঁ ধরেই থাকলেন।
অত:পর ডেকে আনা হলো ওয়ার্ড মাস্টারকে। অনুমতি নিতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত হাওয়া হয়ে গেলেন তিনিও।
এবার বাধ্য হয়েই নিহতের এক রাজনৈতিক সহকর্মী মোবাইল ফোনে ধরলেন হাসপাতাল পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল নাসির উদ্দিনকে। তিনি ইতিবাচক সাড়া দেয়ার পর স্বজনরা মরদেহ নিয়ে ১৯ নং ওয়ার্ড থেকে বের হয়ে কয়েক কদম এগিয়েছে কেবল, এমন সময়ে বাগড়া বসালো পুলিশ।
ওয়্যারলেস হাতে হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের কনস্টেবল হাবিব গজর গজর ভঙ্গীতে স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, সহকারী পরিচালক (অর্থ) বারণ করেছেন। পুলিশের লিখিত অনুমতি ছাড়া মরদেহ বের হবে না। লিখিত আবেদনও দেখানো হলো তাকে। কিন্তু কে শোনে কার কথা!
মরদেহ হাসপাতালে রেখেই অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর করতে প্রশাসনিক ভবনে ছুটতে হলো নিহতের ছোট ভাই খোকনকে। অবশেষে মিললো অনুমতি। কিন্তু ততক্ষণে কেটে গেছে প্রায় সাড়ে ৪ ঘণ্টা।
পদে পদে ভোগান্তির যন্ত্রণা সহ্যের পর খোকন বললেন, এই হলো হাসপাতাল। মানুষ যেখানে মরেও শান্তি পায় না।
দুর্ভোগ-ভোগান্তির এ ঘটনা প্রবাহ রোববার (৯ এপ্রিল) রাতের।
ভুক্তভোগীরা জানান, এ হাসপাতালে এমন ভোগান্তি নৈমিত্তিক বিষয়। ময়নাতদন্ত করা বা ময়নাতদন্ত ছাড়াই মরদেহ হাসপাতাল থেকে নিয়ে যেতে স্বজনহারা মানুষকে প্রতিনিয়তই এমন ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
কমপক্ষে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা, আবার কোন কোন ক্ষেত্রে ২৪ ঘণ্টা অতিবাহিত না হলে মরদেহের বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত পাওয়া যায় না। তখন মরদেহ সামনে নিয়ে আর্তনাদ আর আহাজারি করেই সময় কাটাতে হয় স্বজনহারাদের।
রফিকুল ইসলাম নামে এক ভুক্তভোগী বাংলানিউজকে বলেন, এ হাসপাতালের বাইরেই শুধু ফিটফাট, ভেতরে অবস্থা অনেক করুণ। চিকিৎসকদের সঙ্গে হাসপাতালের পরিচালকের সমন্বয় নেই। শুনেছি তার একরোখা ও স্বৈরতান্ত্রিক আচরণে চিকিৎসকরাও অতিষ্ঠ।
মানুষের মরদেহ বাড়ি নিয়ে যেতেও সমস্যার অন্ত নেই এখানে। মরদেহ জিম্মি করে হাসপাতালেরই এক শ্রেণির লোকজন বাণিজ্য করতেই পদে পদে ভোগান্তি তৈরি করেন। আবার নগদ মিললেই কাজ হয় তড়িৎ গতিতে- অভিযোগ ফুলপুরের এক রোগীর স্বজন আহম্মদ হোসেনের।
ভুক্তভোগী আমান উল্লাহ আকন্দ বাংলানিউজকে বলেন, হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগেও যন্ত্রণার শেষ নেই। মৃতের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তৈরি করতে উদাসীনতা দেখান ওয়ার্ড মাস্টাররা। অথচ তারা একবার স্বজনহারাদের জায়গায় নিজেকে চিন্তা করলে নিজেরাই শিউরে উঠতেন।
এসব বিষয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল নাসির উদ্দিন ও সহকারী পরিচালক লক্ষী নারায়ণ মজুমদারের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশ সময়: ১১২০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০১৭
এমএএএম/জেডএম