সরেজমিনে দেখা যায়, অব্যবস্থাপনায় দু্র্ভোগ পোহাচ্ছেন রোগীরা। তখন বেলা সাড়ে ১২টা।
উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সোনাগাজী উপজেলায় চিকিৎসকের মোট একুশটি পদ থাকলেও বর্তমানে উপজেলায় কর্মরত রয়েছেন মাত্র ৩ জন। অফিস সহকারীর ৫টি পদের মধ্যে কর্মরত আছেন মাত্র ১ জন।
চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের পাঁচটি পদের মধ্যে আছেন মাত্র একজন। সুইপারদের ৫টি পদের মধ্যে ৪টি পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে। টেকনিশিয়ান থাকলেও দীর্ঘদিন এক্সরে মেশিনটি বিকল। গত প্রায় এক যুগেরও বেশি সময় জেনারেটরটি নষ্ট অবস্থায় পড়ে রয়েছে। এছাড়া আসবাবপত্র ও বিভিন্ন বিভাগে যন্ত্রপাতির সংকটও রয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ আরো জানায়, বর্তমানে হাসপাতালে যে তিনজন চিকিৎসক কর্মরত রয়েছেন-তাদের মধ্যে একজন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা। তাকেও দাপ্তরিক কাজের পাশাপাশি রোগী দেখতে হয়। দু’জন মেডিকেল অফিসার দিয়ে চরম সংকটে চলছে চিকিৎসা কার্যক্রম।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি কাগজে কলমে ৫০ শয্যার বলা হলেও ৩১ শয্যার জনবল দিয়েই চলছে। প্রতিদিন গড়ে ৭০/৮০ জন রোগী ভর্তি থাকেন। বহির্বিভাগে গড়ে দূর দূরান্ত থেকে সাড়ে তিনশ’ থেকে চারশ’ রোগী চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন।
কিন্তু প্রয়োজনীয় ও বিভাগীয় চিকিৎসক না থাকায় অনেক রোগীকে সেবা না নিয়েই বাড়ি ফিরে যেতে হয়। অথবা জেলা শহরে বেসরকারি ক্লিনিকে গিয়ে চিকিৎসা সেবা নিতে হয়।
উপজেলার সদর ইউনিয়নের সুজাপুর গ্রাম থেকে চিকিৎসা নিতে আসা নূর আলম শাহেদ নামে একজন রোগী জানান, তিনি দাঁতের ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে গিয়ে দাঁতের চিকিৎসক না থাকায় চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছেন।
চর শাহাপুর গ্রামের হাড় ভাঙ্গা রোগী মনোয়ারা বেগম চিকিৎসা সেবার জন্য স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে জানতে পারেন, হাসপাতালের এক্সরে মেশিনটি নষ্ট। সোনাগাজী উপজেলা সদরে ভাল কোনো এক্সরে মেশিন না থাকায় বাধ্য হয়ে তাকে ফেনী যেতে হয়।
হাসাপালে ভর্তি রোগীরা জানান, ওষুধ ব্যবস্থাপনায়ও রয়েছে চরম অনিয়ম। হাসপাতাল থেকে ওষুধ দেয়ার কথা থাকলেও কোন ওষুধই তারা পান না। সব কিনতে হয় বাইরের ফার্মেসি থেকে। বাংলানিউজের সঙ্গে কথা হয়, সাহাব উদ্দিন নামের এক রোগীর। তিনি বুকে ব্যথা নিয়ে হাসাপাতলে ভর্তি রয়েছেন। বাংলানিউজকে জানান, গত দুই দিনে ডাক্তার এসেছেন মাত্র একবার। একটা ট্যাবলেটও হাসপাতাল থেকে দেয়া হয়নি।
কথা হয় জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া স্থানীয় বক্তার মুন্সী কলেজের ছাত্র সোহাগের সঙ্গে। তিনি জানান, একটি নাপা ট্যাবলেটও হাসপাতাল থেকে দেয়া হয় না। সবই কিনতে হয় বাইরের ফার্মেসি থেকে।
সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা নূরুল আলম, চিকিৎসক-কর্মচারী ও যন্ত্রপাতি সংকটের সত্যতা স্বীকার করেন।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, চিকিৎসক সংকট এবং এক্সরে মেশিনসহ বিভিন্ন বিভাগের যন্ত্রপাতি নষ্ট থাকার বিষয়ে একাধিক বার চিঠি দিয়ে উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
তিনি আরো জানান, ২১ জন ডাক্তারের মধ্যে মাত্র ৩ জন ডাক্তার দিয়ে চরম সংকটের মধ্যেও রোগীদের সেবা দিতে সাধ্যমতো চেষ্টা চলছে।
বাংলাদেশ সময়:১০৩০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০১৭
জেডএম/