ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

ধূমপানবিরোধী আইন যা বলছে

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৩৯ ঘণ্টা, জুলাই ১৯, ২০১৭
ধূমপানবিরোধী আইন যা বলছে ধূমপানবিরোধী আইন যা বলছে। ছবি: আনোয়ার হোসেন রানা

ঢাকা: ক্যান্সারসহ প্রাণঘাতি রোগ থেকে বাঁচতে ধূমপানবিরোধী আইন ও বিধিমালায় কঠোরতা আরোপের পরও পাবলিক প্লেসে ধূমপান অব্যাহত রয়েছে। আইনের প্রয়োগ না করাই এর কারণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।  

আইন লঙ্ঘন করলে ধূমপানকারীকে প্রথমবার তিনশ’ টাকা এবং পরবর্তীতে দ্বিগুণ জরিমানার বিধান রয়েছে। পাবলিক প্লেসের মালিক বা পরিবহন মালিকরা আইন না মানলে তাদেরকেও অনধিক এক হাজার টাকা অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে।

দ্বিতীয়বার বা পুনঃ পুনঃ একই ধরনের অপরাধ করলে তিনি পর্যায়ক্রমিকভাবে দ্বিগুণ হারে দণ্ডনীয় হবেন বলেও আইনে বলা হয়েছে।

২০০৫ সালে সরকার প্রথম ‘ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫’ প্রণয়ন করে। এরপর ২০১৩ সালে সংশোধিত ও ২০১৫ সালে আইনের বিধান অনুসারে বিধিমালা তৈরি হয়।
যেসব স্থানে ধূমপান করা যাবে না যেসব স্থানে ধূমপান করা যাবে না
আইনের বিধান মতে, কোনো ব্যক্তি কোনো পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহনে ধূমপান করতে পারবেন না৷

‘পাবলিক প্লেস’ এর ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিস, গ্রন্থাগার, লিফট, আচ্ছাদিত কর্মক্ষেত্র (indoor work place), হাসপাতাল, ক্লিনিক, আদালত, বিমানবন্দর, সমুদ্রবন্দর, নৌ-বন্দর, রেলস্টেশন ও বাস টার্মিনাল ভবন, প্রেক্ষাগৃহ, প্রদর্শনী কেন্দ্র, থিয়েটার হল, বিপণি ভবন, চারদিকে দেওয়াল আবদ্ধ রেস্টুরেন্ট, পাবলিক টয়লেট, শিশুপার্ক, মেলা বা পাবলিক পরিবহনে আরোহণের জন্য যাত্রীদের অপেক্ষার জন্য নির্দিষ্ট সারি, জনসাধারণের সম্মিলিতভাবে ব্যবহার্য অন্য কোনো স্থান অথবা সরকার বা স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের সাধারণ বা বিশেষ আদেশে সময় সময় ঘোষিত অন্য যেকোনো বা সকল স্থান।

‘পাবলিক পরিবহন’  এর ব্যাখ্যায় বলা  হয়, মোটরগাড়ি, বাস, রেলগাড়ি, ট্রাম, জাহাজ, লঞ্চ, যান্ত্রিক সব ধরনের জনযানবাহন, উড়োজাহাজ এবং সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দিয়ে নির্দিষ্ট করা বা ঘোষিত অন্য যেকোনো যান।

জরিমানা
কোনো ব্যক্তি এ বিধান লঙ্ঘন করলে তিনি অনধিক তিনশ’ টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন এবং ওই ব্যক্তি দ্বিতীয়বার বা পুনঃ পুনঃ একই ধরনের অপরাধ করলে তিনি পর্যায়ক্রমিকভাবে দ্বিগুণ হারে দণ্ডনীয় হবেন।

ধূমপান এলাকার বিধান
তবে ধূমপানমুক্ত এলাকার বাইরে ধূমপান এলাকাও নির্দিষ্ট করার বিধান আইনে রয়েছে। এজন্য কিছু শর্তও দেওয়া হয়েছে।

আইনে বলা হয়েছে, কোনো পাবলিক প্লেসের মালিক, তত্ত্বাবধায়ক বা নিয়ন্ত্রণকারী ব্যক্তি বা ব্যবস্থাপক এবং কোনো পাবলিক পরিবহনের মালিক, তত্ত্বাবধায়ক, নিয়ন্ত্রণকারী ব্যক্তি বা ব্যবস্থাপক তার এলাকায় ধূমপানের জন্য স্থান চিহ্নিত বা নির্দিষ্ট করে দিতে পারেন৷

এর ব্যাখ্যায় বিধিমালায় বলা হয়েছে, ধূমপানমুক্ত এলাকাকে ধূমপান এলাকা থেকে আলাদা রাখতে হবে। ধূমপানমুক্ত এলাকায় যেন ধোঁয়া প্রবেশ না করে, অগ্নিনির্বাপক ও উচ্ছিষ্ট অংশ ফেলতে বালি-পানিসহ যথাযথ ব্যবস্থা, চলাচলের স্থানে ধূমপান এলাকা নয়, ধূমপান এলাকায় ‘ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান’ এবং ‘ধূমপানে মৃত্যু ঘটায়’ লেখা নোটিশ থাকতে হবে।

তবে এজন্য প্রত্যেক পাবলিক প্লেস বা পাবলিক পরিবহনের মালিক, তত্ত্বাবধায়ক, নিয়ন্ত্রণকারী ব্যক্তি বা ব্যবস্থাপক বিধিতে নির্ধারিত দায়িত্ব পালন করবেন।

বিধিতে বলা হয়েছে, ধূমপান থেকে বিরত থাকতে সতর্কতামূলক নোটিশ প্রদর্শনের ব্যবস্থা করতে হবে, ধূমপানমুক্ত এলাকায় কোনো ছাইদানি রাখা যাবে না, ধূমপান এলাকায় ‘ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান’ এবং ‘ধূমপানে মৃত্যু ঘটায়’ লেখা নোটিশ থাকতে হবে।

ধূমপানমুক্ত এলাকায় কেউ ধূমপান করলে তাকে কোনো ব্যক্তি বা পাবলিক প্লেসের মালিক ও পরিবহন মালিক বিরত থাকতে অনুরোধ করতে পারবেন। তা সত্বেও যদি ধূমপান করেন, তাহলে তাকে ধূমপানমুক্ত এলাকা ত্যাগ করতে বাধ্য করবেন, কোনো ধরনের সেবা দেওয়া থেকে বিরত থাকবেন এবং আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষের সহায়তা নিতে পারবেন।

কেউ এ বিধান লঙ্ঘন করলে তিনি অনধিক পাঁচশ’ টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন।  
পাবলিক প্লেস ধূমপান করা যাবে না
পাবলিক প্লেস ও পরিবহন মালিকদের জরিমানা

ধূমপান এলাকা হিসাবে চিহ্নিত বা নির্দিষ্ট স্থানের বাইরে প্রত্যেক পাবলিক প্লেসের মালিক, তত্ত্বাবধায়ক, নিয়ন্ত্রণকারী ব্যক্তি বা ব্যবস্থাপক ওই স্থানের এক বা একাধিক জায়গা এবং পাবলিক পরিবহনের মালিক, তত্ত্বাবধায়ক, নিয়ন্ত্রণকারী ব্যক্তি বা ব্যবস্থাপক সংশ্লিষ্ট যানবাহনে ‘ধূমপান থেকে বিরত থাকুন, এটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ’ সম্বলিত নোটিশ বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় প্রদর্শনের ব্যবস্থা করবেন৷

কোনো পাবলিক প্লেস বা পাবলিক পরিবহনের মালিক, তত্ত্বাবধায়ক বা নিয়ন্ত্রণকারী ব্যক্তি বা ব্যবস্থাপক  এ বিধান লঙ্ঘন করলে তিনি অনধিক এক হাজার টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন এবং ওই ব্যক্তি দ্বিতীয়বার বা পুনঃ পুনঃ একই ধরনের অপরাধ করলে তিনি পর্যায়ক্রমিকভাবে দ্বিগুণ হারে দণ্ডনীয় হবেন।

কারা অভিযান চালাবেন
কর্তৃত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবেন। আইনে বলা হয়, ‘কর্তৃত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা’ অর্থ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বা তার সমমানের বা তদূর্ধ্ব পদমর্যাদার স্বাস্থ্য অধিদফতরের কোনো কর্মকর্তা এবং এ সংশ্লিষ্ট দায়িত্ব পালনের জন্য কোনো আইনের অধীন বা সরকারি গেজেট প্রজ্ঞাপনে ক্ষমতাপ্রাপ্ত যেকোনো বা সকল কর্মকর্তাও এর অন্তর্ভুক্ত হবেন।

২০১৫ সালের ১২ মার্চ করা বিধিমালায় বলা হয়েছে, জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের সকল প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা, সিনিয়র স্বাস্থ্য শিক্ষা কর্মকর্তা, রেলওয়ের প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা, সাব ইন্সপেক্টরের নিচে নন- এমন পুলিশ কর্মকর্তা, সহকারী পরিচালকের পদমর্যাদার নিচে নন- মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের এমন কর্মকর্তা, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, সিভিল সার্জনের কার্যালয়, পৌরসভা এবং সিটি করপোরেশনে কর্মরত স্যানিটারি ইন্সপেক্টর, অগ্নিনির্বাপন বা বেসামরিক  প্রতিরক্ষা অধিদফতরে কর্মরত প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা এবং কারখানা পরিদর্শকরা অভিযান চালাবেন।

জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের সমন্বয়ক (যুগ্ম সচিব) মুহাম্মদ রুহুল কুদ্দুস বাংলানিউজকে বলেন, বিধির আলোকে যেসব কর্মকর্তার কথা বলা হয়েছে, তারা দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে সহায়তা করবেন।  

আইনের প্রয়োগের বিষয়ে মুহাম্মদ রুহুল কুদ্দুস বলেন, এ দেশের বিশাল জনগোষ্ঠীর প্রায় ৪৩ শতাংশ মোটা দাগে কোনো না কোনোভাবে তামাকের সঙ্গে জড়িত। এরপরও সরকার আইন প্রয়োগ করছে। সংশ্লিষ্ট মালিকপক্ষকে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, সারাদেশে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে আদায় করা জরিমানা সরকারি কোষাগারে জমা হয়।

ধূমপানবিরোধী বেসরকারি সংগঠন প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এ বি এম জুবায়ের বলেন, ‘২০০৫ সালে আইন হয়। কিন্তু সেটি ছিলো দুর্বল। পরবর্তীতে দীর্ঘ আন্দোলনের ম‍ুখে ২০১৩ সালে সংশোধন করা হয়। আর ওই সময় ভালো কিছু বিধান সংযোজন করা হয়। তার দুই বছর পরে বিধিও পাওয়া যায়। কিন্তু আইন প্রয়োগের দুর্বলতা অন্যান্য আইনের মতোই, মসৃণ নয়’।

‘তবে আশার কথা হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এসডিজি অর্জনে তামাকও একটি বাধা। এখন হয়তো সরকার ধূমপান নিয়ন্ত্রণে আরও জোর দেবে’।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৫ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০১৭
ইএস/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।