কিসের ভিত্তিতে কার কাছ থেকে তথ্য নিয়ে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে এ নিয়েও সন্দিহান তারা। তাছাড়া দুই বছরের আগের তথ্য কেন এখন প্রকাশ করা –এ নিয়েও দেখা দিয়েছে প্রশ্ন।
প্রতিবেদন প্রকাশের একদিন পর শনিবার (২১ অক্টোবর) পরিবেশ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কাজী সারওয়ার ইমতিয়াজ হাশমী বাংলানিউজকে দেয়া প্রতিক্রিয়ায় বলেন, প্রতিবেদনটি কিসের ভিত্তিতে করা হয়েছে? আমাদের কাছ থেকে তো কোনো তথ্য নেয়নি। মনগড়া করল কি ? তারা আমাদের মাধ্যমে কোনো গবেষণা করেনি। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান মাঝেমাঝে মনগড়া তথ্য দিয়ে একটু চাপে রাখার চেষ্টা করে।
দূষণ শুধু বাংলাদেশে হচ্ছে না। এরই মধ্যে হাজারিবাগ থেকে ট্যানারি সরিয়েছি। শিল্প প্রতিষ্ঠানে শতভাগ ইটিপি ব্যবহার নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি। চেষ্টা করছি বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে আনতে। আমরা মনিটরিং করছি। ইটভাটায়ও এখন উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে।
প্রতিবেদনের সত্যতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন ‘পবা’। ‘পবা’র সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী আবদুস সোবহান বলেন, আমি প্রতিবেদনের সঙ্গে একমত নই। তাদের মতে, বাংলাদেশ বায়ুদূষণে সবচে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশ। এই প্রতিবেদনের তথ্য কারা, কিভাবে কোথা থেকে দিলেন?
এখানে ধূমপান বেশি হয়। এ বিষয়ে তথ্য তারা নিয়েছেন কি? তবে আমাদের এখানে ব্যাপক বায়ুদূষণ হচ্ছে, একথা সত্য।
তিনি আরো বলেন, ২০১৫ সালের ডাটা নিয়ে দুই বছর লাগলো এটাকে গবেষণা করতে। এতদিন কেন লাগবে?
বলা হয়েছে, আমরাই নাকি বায়ুদূষণে শীর্ষে। অথচ সবচেয়ে বেশি কয়লা পোড়াচ্ছে চীন ও ভারত। তাদের বায়ুদূষণ আমাদের চেয়ে কিভাবে কম? ! আমরা কি ভুলে গেছি, বায়ুদূষণে বেইজিং ও দিল্লিতে কি ভয়াবহ অবস্থা হয়েছিল? দিল্লিতে এখনো অবস্থা চরম ভয়াবহ। ঢাকা এখনো দিল্লি-বেইজিংয়ের মতো ততোটা ভয়াবহ অবস্থায় যায়নি!
তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, এক বছরের ডাটা নিলেন, দুই বছর লাগল প্রসেস করতে। এই গবেষণা কতটুকু এবং কিভাবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে? দুই বছরে তো তাহলে আরো অনেক লোক মারা গেছে!
ডিএনসিসি’র প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপক কমোডর আব্দুর রাজ্জাক বলেন, প্রতিবেদনটি কিসের ভিত্তিতে করেছে? তবে বর্জ্যের অবস্থা যে খুব খারাপ তা বোধগম্য। সিটি প্লানিংয়ে ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান বলতে কিছু থাকে না। ক্ষতিকর মেডিক্যাল বর্জ্য কিভাবে কোথায় ফেলা হচ্ছে (ডিসপোজাল) ? অকেজো এক্স-রে মেশিন কোথায় কিভাবে ডিসপোজাল করা হচ্ছে? ক্ষতিকর ইলেকট্রনিক বর্জ্য কোথায় যাচ্ছে?
‘বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে জাতীয়ভাবে বাস্তবসম্মত চিন্তা করে করতে হবে’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, নইলে যতদিন যাবে ততই ক্ষতির মুখে পড়বো আমরা।
ডিএসসিসি’র প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপক শফিকুল আলম বলেন, দূষণ তো শুধু আমরা করি না, সবাই করে। এখানে সিটি কর্পোরেশনের খুব একটা ভূমিকা নেই। আমরা শুধু বাসাবাড়ির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করি। এর বাইরে আমাদের খুব বেশি করণীয় নেই।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রভাবশালী জনস্বাস্থ্য ও চিকিৎসা বিষয়ক সাময়িকী ল্যানসেট-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, সারাবিশ্বে নানামাত্রিক দূষণে অন্তত ৯০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
তথ্য বলছে, বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশেই দূষণের মাত্রা তুলনামূলক বেশি। বায়ুদূষণ যার অন্যতম। বাংলাদেশকে দূষণে সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত তালিকায় শীর্ষে রাখা হয়েছে। এরপরে আছে সোমালিয়া। এই দেশগুলোতে হৃদরোগ, স্ট্রোক এবং ফুসফুসের ক্যান্সারে মৃত্যুহার বেড়েছে।
বাংলাদেশ ও সোমালিয়ার পর রয়েছে শাদ, নাইজেরিয়া, ভারত, নেপাল, দক্ষিণ সুদান। দশম স্থানে পাকিস্তান। চীনেও দূষণ দিন দিন বাড়ছে।
সবচে কম দূষণের দেশ ব্রুনাই। এরপরে ইউরোপের সুইডেন ও ফিনল্যান্ড। ১৮৮টি দেশ নিয়ে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২১, ২০১৭
এসএম/জেএম