নারী ও শিশু রোগীরা দীর্ঘদিন ধরেই এ সমস্যার মধ্যে থেকে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছে। এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের দায়সারা ভাবকেই দায়ী করছেন সচেতন মহল।
সরেজমিন দেখা যায়, হাসপাতালের এমন করুণ চিত্র। এ ব্যাপারে অনেক নারী রোগীর সঙ্গে কথা বলতে গেলেও কেউ সহজে মুখ খোলেননি। দু’একজন সাহস করে জানায়, রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালের নারী ও শিশু ওয়ার্ডে ফাটল ধরেছে দশ মাসের বেশি সময় হলো। ফাটল ধরার পর থেকে ওই ওয়ার্ডকে বন্ধ ঘোষণা করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এরপর থেকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ গাদাগাদি করে পুরুষ বেডে নারী ও শিশুদের চিকিৎসা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা এক শিশুর মা জান্নাতুল আকতার বলেন, আমার সন্তানের জ্বর হয়েছে। এখন আমাদের পুরুষ ওয়ার্ডে থেকে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে, এটা আমাদের জন্য খুবই বিব্রতকর।
বিরবাল চাকমা বলেন, আমার খুব জ্বর তাই বাধ্য হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি কিন্তু পুরুষ ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিতে মাঝে মধ্যেই লজ্জায় পড়তে হয়।
চিকিৎসা নিতে আসা রুমা বেগম, বেবি আক্তার, তানিয়া আক্তারদেরও একই অভিযোগ। তাদের দাবি নারী ও শিশু রোগীদের জন্য কর্তৃপক্ষ যেন আলাদা বেডের ব্যবস্থা করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাঙামাটি সিভিল সার্জন ডা. শহীদ তালুকদার জানান, জেলা পরিষদের অধীনে হাসপাতালের তৃতীয় তলা ভবনের নির্মাণ কাজ করার সময় চলতি বছরের ২৯ জানুয়ারি নারী ও শিশু ওয়ার্ডে ফাটল দেখা দেওয়ায় এ ওয়ার্ডে জরুরি ভিত্তিতে নারী ও শিশু রোগীদের সরিয়ে নেয়া হয়।
তিনি আরো বলেন, আমি এ জেলায় বদলি হয়ে আসার আগে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. সাবরিনা সুলতানা নারী ও শিশু চিকিৎসা কার্যক্রম ব্যাঘাত রোধে করণীয় সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানকে এ বিষয়ে অবগত করেছি।
সিভিল সার্জন জানান, নারী ও শিশুদের জন্য প্রয়োজনে একটি কক্ষ ভাড়া করে চিকিৎসা সেবা দেওয়ার জন্য বিভিন্ন আলোচনা সভায় বার বার বলেছি। এ নিয়ে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং আমি নারী ও শিশুদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালের কাছাকাছি একটি কক্ষ খুঁজেও দেখেছি।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালের ভবনটি সংস্কার করা হবে নাকি ভেঙে নতুন ভবন নির্মাণ করা হবে তা নিয়ে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, এলজিইডি এবং গণপূর্ত বিভাগের সমন্বয়ে একটি তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে।
ডা. শহীদ তালুকদার জানান, রাঙামাটি মেডিকেল কলেজের পাশে সরকার ঘোষিত ৫০ শয্যা বিশিষ্ট একটি হাসপাতাল ভবন নির্মাণ করা হবে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে ভবনটি নির্মাণের জন্য অনুমোদনও হয়ে গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বৃষকেতু চাকমা জানান, সরকার রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালকে ১৫০ বেডে উন্নীত করার ঘোষণা দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে ভবনটি নির্মাণের অনুমোদন পেয়েছি। এখন টেন্ডার আহ্বান করা হবে।
চেয়ারম্যান আরো বলেন, নতুন হাসপাতাল ভবনটি তৈরি করতে বছর দু’য়েক সময় লাগতে পারে।
নতুন হাসপাতাল ভবন নির্মাণ না হওয়া পর্যন্ত নারী ও শিশু রোগীরা কী পুরুষ ওয়ার্ডেই চিকিৎসা নিবে? এমন প্রশ্নের তিনি সদুত্তোর দিতে পারেননি।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৩৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৫, ২০১৭
আরএ