বিনামূল্যে দরিদ্র মানুষের সব ধরনের চিকিৎসা সেবা দিয়ে ইতোমধ্যে সুনামও কুড়িয়েছে হাসপাতালটি। সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে দেশের শীর্ষ শিল্প প্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা গ্রুপের সঙ্গে যৌথভাবে আদ্-দ্বীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি স্বল্প খরচে সব শ্রেণির মানুষের চিকিৎসা দিচ্ছে।
যারা টাকার অভাবে চিকিৎসা নিতে পারছেন না, তাদের জন্যই বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা করেছে বসুন্ধরা আদ্-দ্বীন হাসপাতাল। দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে বসুন্ধরা রিভারভিউ আবাসিক প্রকল্পের ভেতর খোলা স্থানে হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতায় চিকিৎসা সেবা পেয়ে খুশি রোগীরা।
শনিবার (২৮ অক্টোবর) সরেজমিনে হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেল বিভিন্ন স্থান থেকে রোগীরা আসছেন চিকিৎসা নিতে। সেবা নেয় হাসি ফুটছে রোগী এবং তার স্বজনদের মুখে।
টাইফয়েড জ্বর নিয়ে ফ্রি ওয়ার্ডে (নারী) ভর্তি হয়েছে শ্যামপুর এলাকার শিশু সুবর্ণা। তার মা জানালেন, চিকিৎসা ফ্রি পাচ্ছি। থাকা খাওয়া সবই ফ্রি।
একই ওয়ার্ডে কিডনির রোগ নিয়ে ভর্তি হওয়া পানগাঁওয়ের পারভীন জানালেন, চিকিৎসা ভালো। পরীক্ষা-নিরীক্ষা ফ্রি পাই। খরচ একেবারেই নেই।
চক্ষু বিভাগেও দেখা গেলো রোগীদের ভিড়। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মো. রুহুল আমিন জানালেন, প্রাথমিক চিকিৎসাসহ সব ধরনের লেন্স বসানো এবং অপারেশনের সুবিধা রয়েছে এখানে।
আদ্-দ্বীন হাসপাতালসমূহের পরিচালক নাহিদা ইয়াসমিন বললেন, গরিব রোগীদের মেডিসিন বিভাগের সব ধরনের চিকিৎসা ফ্রি। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয় বিনামূল্যে। প্যাথোলজি, এক্সরে, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পাওয়া যায় সব সময়।
তিনি বলেন, শিশু এবং গর্ভবতী মায়েরা সব ধরনের চিকিৎসা সেবা পায়। বার্ন রোগীদেরও সেবা দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। ২৪ ঘণ্টা অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে সেবা দেওয়া হয়। মাতৃমৃত্যুর হার কমিয়ে আনতে ৬টি অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে গরিব রোগীদের বাড়ি থেকে নিয়ে আসে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
হাসপাতালটি ২০১২ সাল থেকে স্বল্প মূল্যে সেবা দিয়ে আসছে জানিয়ে নাহিদা ইয়াসমিন বলেন, নতুন সংযোজন বিনামূল্যে চিকিৎসা। টাকার অভাবে যারা চিকিৎসা নিতে পারে না, তাদের জন্য এই হাসপাতাল।
প্রতিদিন হাসাপাতলটির বর্হিবিভাগে ৫০০-৬০০ রোগী সেবা নেন এবং ১৫০ থেকে ২০০ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন বলে জানান পরিচালক নাহিদা ইয়াসমিন।
সেবাসমূহ:
হাসপাতালে রয়েছে বিভিন্ন্ন রোগের পরিপূর্ণ সেবা। গর্ভকালীন ও গর্ভোত্তর সেবা, স্ত্রী রোগ ও পরিবার পরিকল্পনা সেবা, শিশুসেবা ও টিকাদান, মেডিসিন-মনোরোগ ও কার্ডিয়াক, নাক-কান-গলা-চোখের চিকিৎসা, ফিজিও থেরাপি, চর্ম ও দন্ত সেবা। পিত্তথলির পাথর, হার্নিয়া, পাইলস, অ্যাপেনডিকসের অপারেশ হয় এখানে।
বিনামূল্যে সেবা:
দরিদ্র রোগীদের জন্য ১০০ বেডে বিনামূল্যে ভর্তি, ডাক্তার দেখানো, রোগীর খাবার সরবরাহ, ওষুধ, পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং একজন ভিজিটরের খাবার দেওয়া হয়। বহির্বিভাগে প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে এক ঘণ্টা এবং সন্ধ্যা ৬টা থেকে দুই ঘণ্টা চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয় বিনামূল্যে। কার্ড রেজিস্ট্রেশন, ডাক্তার দেখানো, কাউন্সিলিং, কম্পিউটারে চক্ষু পরীক্ষা মিলবে বিনামূল্যে।
প্রতি শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত রয়েছে অপারেশনের সুবিধা বিনামূল্যে। ভর্তি ফি, বেড ভাড়া, পরীক্ষা-নিরীক্ষা, ডাক্তার দেখানো, জরুরি অপারেশন, ওষুধপত্র, রোগীর খাবার এবং একজন ভিজিটরের খাবার দেওয়া হয় কোনো খরচ ছাড়াই।
স্বল্পমূল্যে যেসব সেবা:
মহিলা, পুরুষ ও শিশুদের জন্য সব ধরনের চিকিৎসা, বর্হিবিভাগে মাত্র ৫০ টাকায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ, ভর্তি রোগীর বিনামূল্যে খাবার, এক হাজার টাকায় স্বাভাবিক ডেলিভারি, পাঁচ হাজার টাকায় ওষুধসহ সিজারিয়ান অপারেশন, ৩০০ টাকায় আল্ট্রাসনোগ্রাম সেবা পাওয়া যাবে।
২১০ থেকে ৮০০ টাকায় ডিজিটাল এক্সরে, ১০০ টাকায় ইসিজি এবং প্যাথলজি পরীক্ষা বাজার মূল্যের অর্ধেক। ৩০০ টাকায় পেয়িং বেড, ৯০০-১৫০০ টাকায় রয়েছে কেবিন সুবিধা।
হাসপাতালে ২৪ ঘণ্টা প্যাথলজি পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা, অ্যাম্বুলেন্স সেবা ও ফার্মেসি খোলা থাকে। বর্হিবিভাগ সকাল ৭টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা। ছুটির দিনসহ সব দিনে হাসপাতাল খোলা থাকছে।
ভবিষত পরিকল্পনা
বর্তমানে ৩০০ শয্যার হাসপাতালটিতে ১০০ শয্যায় ফ্রি চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। ভবিষতে ৫০০ শয্যায় উন্নীত এবং ২০০ শয্যায় বিনামূল্যে সেবা দেওয়া হবে বলে জানালেন পরিচালক নাহিদা ইয়াসমিন।
ঢাকায় তিনটিসহ বর্তমানে আদ্-দ্বীনের আটটি হাসপাতাল রয়েছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। রংপুরেও একটি হাসপাতাল স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪২ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৮, ২০১৭
এমআইএইচ/এমজেএফ