এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বুধবার (১৫ নভেম্বর) দিবাগত রাত ১২টার দিকে স্থানীয় জনসাধারণ হাসপাতালটিতে জমায়েত হলে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এরপর রমনা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
মৃত চুন্নু মিয়ার মেয়ে ঋতু চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, গত ৭ নভেম্বর ব্রেইন স্ট্রোক হলে তার বাবাকে হাসপাতালের নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি করান। তারপর বুধবার সকালে অবস্থান উন্নতি হওয়ার কথা বলে তাকে আইসিইউ থেকে হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিটে (এইচডিই) স্থানান্তর করেন চিকিৎসকরা। সেখানেই বুধবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে মারা যান চুন্নু মিয়া।
ঋতু চৌধুরী বলেন, বুধবার সন্ধায় হঠাৎ করে দেখি দুইজন নার্স মিলে বাবার মুখ দিয়ে পাইপ প্রবেশ করাচ্ছিলেন। তখন আমি ও আমার ভাই জানতে চাই বাবার কি হয়েছে? তারা আমাদের কিছু বলছিলেন না এবং আমাদেরকে ওয়ার্ডের ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। কিছুক্ষন পর নার্সরা জানায়, আপনার বাবার হার্টবিট পাওয়া যাচ্ছে না।
তখন আমি ডাক্তারকে খুঁজাখোঁজি শুরু করি। এরপর আমরা ডাকলে এক ডাক্তার এসে বলেন, বাবা আর নাই। নেই বলার সঙ্গে সঙ্গেই ডাক্তার ও নার্সরা আমাদের সঙ্গে কথা না বলে চলে যান।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, বাবার যদি হার্ট কাজই না করে, তাহলে সেটার ট্রিটমেন্ট কেন নার্সরা করবে? জানানোর পরও সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তাররা কেন আসলেন না? বুধবার বিকেলেই যদি বাবার অবস্থা খারাপ হবে তাহলে সকালে কেন তাকে আইসিইউ থেকে ওয়ার্ডে স্থানান্তর করা হলো? ক্রিটিক্যাল অবস্থা জানানোর সঙ্গে সঙ্গেই ডাক্তার পাওয়া গেলে এমনটি হতো না।
মৃত চুন্নু মিয়ার ছেলে ফয়সাল আহমেদ বলেন, পুরোপুরি ডাক্তারদের অবহেলার কারণেই এমনটি হয়েছে। বাবা ব্রেইন স্ট্রোক করেছিল তার হার্টে কোনো সমস্যা ছিল না। হাসপাতালে ভর্তি থাকাকালীন তিনি স্বাভাবিকভাবেই শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়েছেন। আজ সকালেও বাবার হার্টের বিপি ঠিক ছিল। তাহলে বিকেলের মধ্যে কি এমন হলো যে, হার্টবিট পাওয়া যাচ্ছিলো না। এ বিষয়ে চিকিৎসকরা আমাদের কোনো জবাব দিতে পারেননি।
ডা. আলমের তত্বাবধানে চুন্নু মিয়া হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন উল্লেখ করে ফয়সাল বলেন, গত দু’দিন ধরে ওই ডাক্তার ছুটিতে। আজ বাবার অবস্থা খারাপ হলে আরেক ডাক্তারকে গিয়ে জানানোর পর তিনি বলেন, এ বিষয়ে তিনি কিছু জানেননা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাসপাতালের আইসিইউ’র ইনচার্জ ডা. মাহবুব আলম বলেন, রোগীকে যখন আনা হয়েছে তখনই অবস্থা খারাপ ছিলো। তার ভাল হওয়ার ৫০-৫০ চান্স ধরে রোগীকে ভর্তি করি আমরা। স্বজনরা ডাক্তারদের অবহেলার যে অভিযোগ দিচ্ছেন তা সত্য নয়। সকালে অবস্থা ভালো হওয়ায় তাকে আইসিইউ থেকে বের করা হয়েছে। পরে অবস্থা খারাপ হওয়ায় আমরা পদক্ষেপ নিলেও রোগীকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।
চুন্নু মিয়ার বাড়ি মগবাজার এলাকাতেই। ডাক্তারদের অবহেলার খরটি শুনে স্থানীয় এলাকাবাসী হাসপাতালের সামনে জড়ো হন। ইতোপূর্বেও এই হাসপাতালের আইসিইউতে ডাক্তারের অবহেলায় অনেক রোগী মারা গেছে বলে অভিযোগ করেন তারা। তখন পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৫২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৬, ২০১৭
পিএম/বিএস