ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

শীতের প্রকোপে বেড়েছে ঠাণ্ডাজনিত রোগ

মানসুরা চামেলী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৭, ২০১৮
শীতের প্রকোপে বেড়েছে ঠাণ্ডাজনিত রোগ শিশু হাসপাতালের ওয়ার্ড/ ছবি: ‍সুমন শেখ

ঢাকা: দুই বছর বয়সী ফাইয়াজ। হাতে স্যালাইন লাগানো অবস্থায় হাসপাতালের বেডে শুয়ে অনবরত কেঁদে চলেছে। কোনভাবেই স্যালাইনের সিরিঞ্জটি হাতে রাখতে চাইছে না সে। পাশে বসা তার মা শিশুটির কান্না থামাতে আপ্রাণ চেষ্টা করে চলেছেন।

শনিবার (৬ জানুয়ারি) রাতে হঠাৎ পাতলা পায়খানা ও ঘনঘন বমিতে অসুস্থ হয়ে পড়ে ফাইয়াজ। রাত আড়াইটার দিকে ঢাকা শিশু হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে।

রাত থেকে কয়েকবার স্যালাইন দেওয়া হয়েছে।

প্রকৃতিতে চলছে শৈত্য প্রবাহ। রাজধানীসহ সারাদেশে বেড়েছে পড়েছে তীব্র শীত। সেই সঙ্গে বেড়েছে ঠাণ্ডাজনিত রোগের প্রকোপ। রোববার (০৭ জানুয়ারি) রাজধানীর ঢাকা শিশু হাসপাতাল ও ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ডায়রিয়াল ডিজিজ রির্সাচ, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) ঘুরে ঠাণ্ডাজনিত কারণে শিশু রোগীদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়।

ঢাকা শিশু হাসপাতাল সূত্র জানায়, অক্টোবর থেকে ঠাণ্ডাজনিত কারণে রোগী আসছে। গত কয়েক দিন শীত বাড়ায় শিশু ওয়ার্ডে রোগীর চাপ বেশ বেড়েছে। বিশেষ করে নিউমোনিয়া, ব্রংকাইটিস, শ্বাসকষ্ট, অ্যাজমা, হাঁপানি, সর্দি-জ্বর ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের নিয়ে অভিভাবকরা হাসপাতালে আসছেন।

হাসপাতালের ইমারর্জেন্সি মেডিকেল অফিসার জানান, শীতের প্রকোপ বাড়ায় ঠ‍াণ্ডাজনিত কারণে শিশুদের রোগবালাইও বেড়েছে। মৌসুমি এসব রোগে আক্রান্ত শিশুদের নিয়ে জরুরি বিভাগে আসছেন অভিভাবকরা। রোগের ধরন বুঝে শিশুদের চিকিৎসা দেওয়া বা সিনিয়র কনসালট্যান্টের কাছে রেফার করা হচ্ছে। রোগীর অবস্থা গুরুতর হলে হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
শিশু হাসপাতালে বহির্বিভাগে রোগীর চাপ/ ছবি: ‍সুমন শেখশিশু মেডিসিন বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক ডা. রিজওয়ানুল আহসান বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের এখানে অন্যান্য সময় যত শিশু রোগী আসত, শীতের প্রকোপে জানুয়ারির শুরু থেকে তার দ্বিগুণের বেশি আসছে। প্রতিদিন যেখানে ২০০ থেকে ২৫০ শিশু রোগী আসতো, সেখানে গত কয়েকদিনে প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৫০০ রোগী আসছে। এর মধ্যে কেউ কেউ প্রয়োজন অনুসারে চিকিৎসা নিয়ে চলে যাচ্ছে, কেউ কেউ ভর্তি করাচ্ছেন শিশুদের।

তিনি বলেন, কোনো কোনো দিন অতিরিক্ত রোগীর চাপ থাকে, তখন একটু সমস্যা হয়। তবে চিকিৎসকরা সেবাদানে বেশ তৎপর রয়েছেন। তাছাড়া রোগীদের জন্য এখানে সাকার মেশিন, সেন্ট্রাল অক্সিজেন, সিলিন্ডার অক্সিজেন, নেবুলাইজারসহ প্রয়োজনীয় ওষুধের সরবরাহ করা হচ্ছে। শিশুদের শীতের হাত রক্ষা করতে বাবা-মায়ের সচেতনতা জরুরি।

শীতের প্রকোপে ঢাকা শিশু হাসপাতালে রোগীর অনেক বেড়ে গেলেও চিকিৎসা নিতে আসা অভিভাবকদের তেমন কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি।

২ নং ওর্য়াডে কথা হয় নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশু মোস্তাকিমের মা আফরোজা আক্তারের সঙ্গে। তিনি জানান, খুলনার পাইকগাছা থেকে এখানে এসেছেন। ঠাণ্ডা লেগে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে তার সন্তান। গত দুই সপ্তাহ ধরে ছেলেকে নিয়ে এখানে ভর্তি তিনি। ছেলেটা মোটামুটি ভালো হয়ে উঠেছে, আর কিছুদিন থাকতে হবে। হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নিয়েও সন্তোষ প্রকাশ করেন আফরোজা আক্তার।

অন্যদিকে আইসিডিডিআরবিতে শীতের শুরুতে রোগীর সংখ্যা তেমন বাড়েনি। শীতের শুরুতে ৫ বছরের নিচে লোটা ভাইরাস ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশু বেশি ভর্তি হয়েছে। তবে বর্তমানে রোগীর চাপ কমে গেছে বলে জানায় আইসিডিডআরবি কর্তৃপক্ষ।

বাংলাদেশ সময়: ১৯২০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৭, ২০১৭
এমসি/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।