চিকিৎসক ও পদার্থবিদদের সমন্বয়ের মাধ্যমে ক্যান্সার রোগ নিরাময়ে চিকিৎসা পদ্ধতি এখন প্রায় হাতের মুঠোয় চলে এলেও চিকিৎসা পদ্ধতিটি হয়ে গেছে বেশ ব্যয়বহুল। তাই কাজ চলছে এসব চিকিৎসা পদ্ধতিতে খরচ আরও কিভাবে সহনীয় করা যায় এবং বেশি উন্নত করা যায়।
ক্যান্সার চিকিৎসায় বাংলাদেশে সবরকম আধুনিক যন্ত্রপাতি থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র সঠিক লোকবলের অভাবে এখন পর্যন্ত চিকিৎসা পদ্ধতিটি সবার নজরে আসছে না বলে মনে করেন ক্যান্সারের চিকিৎসক ও পদার্থবিদরা।
এ বিষয়ে জার্মানির কোলন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক প্রফেসর ড. গোলাম আবু জাকারিয়া বাংলানিউজকে জানান, আমাদের দেশে ক্যান্সার রোগ নিরাময়ের জন্য আধুনিক সব মেশিনপত্র ও ডাক্তাররা রয়েছেন। কিন্তু এই মেশিনগুলো চালানোর জন্য ইঞ্জিনিয়ারের অভাব রয়েছে। যদিও একমাত্র সাভার গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘মেডিকেল ফিজিক্স অ্যান্ড বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং’ বিভাগটি চালু রয়েছে। তবে সেখান থেকে যে পরিমাণ শিক্ষার্থী প্রতি বছর বের হচ্ছে তাদের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই কম। আমি চেষ্টা করেছিলাম বুয়েটে এই বিভাগটি খুলতে, কিন্তু পারিনি। পরে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে চালু হয়। তবে আমি চেষ্টা করছি বিভিন্ন মেডিকেল কলেজগুলোতে হলেও বিভাগটি চালু করতে।
ক্যান্সার রোগটির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে করণীয় সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, যে হারে বাংলাদেশে ক্যান্সার রোগী বাড়ছে সে অনুসারে আগামী ২০ বছরের মধ্যে মহামারি আকার ধারণ করতে পারে। তাই আমাদের এ বিষয়ে আরও বেশি সচেতন হতে হবে এবং সরকারকে এখনই সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া উচিৎ। সারাদেশের মেডিকেল কলেজগুলোতে হলেও ক্যান্সার বিভাগ আলাদা করে চালু করা প্রয়োজন। তবে দুঃখের বিষয় হচ্ছে এদেশের অধিকাংশ দরিদ্র মানুষদের জন্য আমরা এখনও কিছু করতে পারিনি। যা হচ্ছে বা আছে ধনীদের জন্য বা চিকিৎসা পদ্ধতিটি অনেক ব্যয়বহুল। তবে এ বিষয়েও আমাদের গবেষণা এগিয়ে চলছে।
এ লক্ষ্যে সাধারণ জনগণকে আরও সচেতন ও চিকিৎসকদের জ্ঞানী করে তুলতে শনিবার (১০ মার্চ) ক্যান্সার চিকিৎসা ও রোগ নির্ণয় বিষয়ক ‘3rd International Conference On Medical Physics In Radiation Oncology And Imaging’ (ICMPROI-2018) শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলন কৃষিবিদ ইনিস্টিটিউট অব বাংলাদেশ (কেআইবি) কনভেনশন হলে শুরু হয়েছে।
তিনদিনব্যাপী এ সম্মেলনটি চলবে সোমবার (১২ মার্চ) পর্যন্ত। বাংলাদেশ মেডিকেল ফিজিক্স সোসাইটি (বিএমপিএস) আয়োজিত এ সম্মেলনে ২০টিরও বেশি দেশের বিজ্ঞানি, গবেষক, শিক্ষকসহ বাংলাদেশের প্রায় ৩০০ চিকিৎসক, চিকিৎসা পদার্থবিদ, জীব চিকিৎসা প্রকৌশলী অংশগ্রহণ করছেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রফেসর ড. গোলাম আবু জাকারিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নেপালের রাষ্ট্রদূত প্রফেসর ড. চপ লাল ভুসাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. কামরুল হাসান খান, প্রফেসর ড. থমাস ক্রন ও মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ড. আবুল আজাদ, বিএমপিএসের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি প্রফেসর ড. হাসিন অনুপমা আজহারিসহ প্রমুখ।
আয়োজকরা জানান, বাংলাদেশে ক্যান্সার চিকিৎসা ও রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে চিকিৎসা পদার্থবিদের প্রয়োজন ও জনবল তৈরির ধারণা সৃষ্টি ও কার্যক্রম বাস্তবায়নে এবং ক্যান্সার চিকিৎসার উন্নয়নের লক্ষ্যে ‘বাংলাদেশ মেডিকেল ফিজিক্স সোসাইটি (বিএমপিএস)’ ২০০৯ সাল থেকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে কাজ করে আসছে। তারই ধারাবাহিকতায় ও বাংলাদেশের ক্যান্সার চিকিৎসা উন্নত আর সময় উপযোগী করার লক্ষ্যে বিএমপিএস এ আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজন করছে। যাতে করে বাংলাদেশের মানুষ ক্যান্সার চিকিৎসা ও এতে ব্যবহার করা আধুনিক যন্ত্রপাতির সঙ্গে পরিচিত হতে পারে।
সম্মেলনে প্রদর্শিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক ও দেশীয় গবেষকদের মৌখিক ও পোস্টার প্রেজেন্টেশন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫০ ঘণ্টা, মার্চ ১০, ২০১৮
এমএএম/এসএইচ