অন্য হাসপাতালের রিপোর্ট পেয়ে ক্ষ্যাপার কারণ খুঁজতে কথা বলার চেষ্টা করা হয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। পরে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালের একজন কর্মকর্তা জানান, এখানে টেস্টপ্রতি চিকিৎসকরা ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ কমিশন পান।
ধারণা করা হচ্ছে ডা. নজরুলের ক্ষিপ্ত হওয়ার কারণ কমিশন না পাওয়া।
দীর্ঘদিন ধরে বাতের ব্যথায় ভুগছিলেন ৫৩ বছরের আলেয়া বেগম। উন্নত চিকিৎসার জন্য তিনি পাবনা থেকে ঢাকায় আসেন এবং গত ১৯ মার্চ আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালের মেডিসিন অ্যান্ড রিউমোট্যালজি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলামের শরণাপন্ন হন। প্রথম দিন রোগী দেখে এক্স রে এবং বেশ কিছু টেস্ট করতে দেন চিকিৎসক।
বোথ এসআই জয়েন্টস অবলিক ভিউর এক্স-রে, লুমবোসাক্রাল স্পাইন এ/পি অ্যান্ড লেটারেলের এক্স-রে, রাইট অ্যান্ড লেফট নি এ/পি স্ট্যান্ডিং ভিউর এক্স-রে, সিআরপি, এন্টি সিসিপি, সিবিসি, ইএসআর, এসজিপিটি, এস ক্রিটিনাইন এবং আরবিএস এর টেস্ট করার পরামর্শ দেন চিকিৎসক।
রোগী বাংলানিউজকে বলেন, হাসপাতালের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়ে খোঁজ নিলে দেখা যায় এসব টেস্ট করতে বিল আসছে প্রায় সাড়ে আট হাজার টাকা। যা আমাদের পক্ষে খুব বেশি হয়ে যাচ্ছিল।
পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) হেমাটোলজি এবং বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগে টেস্টগুলো করান তিনি। এছাড়াও ইবনে-সিনায় করান এক্স-রে।
২১ মার্চ সন্ধ্যায় ধানমন্ডির আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে ডা. নজরুল ইসলামকে রিপোর্টগুলো দেখাতে যান রোগী এবং তার পরিবার। কিন্তু বিএসএমএমইউ ও ইবনে সিনা থেকে করা টেস্ট এবং এক্স-রে দেখে তেলে-বেগুনে জ্বলে ওঠেন চিকিৎসক।
রোগীর মেয়ে উম্মে সালমা বাংলানিউজকে বলেন, ডাক্তার বিএসএমএমইউ ও ইবনে সিনা থেকে টেস্ট করা হয়েছে শুনে আর রিপোর্ট দেখলেন না। বললেন, যেহেতু ওখান থেকে টেস্ট করিয়েছেন, সেখানেই ডাক্তার দেখান। আপনারা আর এখানে আসবেন না।
স্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলন দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসকদের এই টেস্ট বাণিজ্যের বিরুদ্ধে কথা বলে আসছে। ডাক্তারের সঙ্গে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের চুক্তিটি এমন থাকে যে তারা ডাক্তারকে ভবনে বসার জায়গা করে দেবেন। ডাক্তার যে ফি পাবেন সেটি নিজেরই থাকবে। আর চেম্বারের স্থানের বিপরীতে রোগীকে ওই হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষা করার জন্য যত বেশি সম্ভব টেস্ট দেবেন। আর টেস্ট ও পরীক্ষার জন্যে রোগীর খরচের থেকেও ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ পান ডাক্তার।
অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করতে ২১ মার্চ রাতে ফোনে যোগাযোগ করা হলে পাওয়া যায়নি। এসএমএস ও মেইলে বার্তা পাঠিয়েও কোনো উত্তর মেলেনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৩২৬ ঘণ্টা, মার্চ ২২, ২০১৮
এমএন/এএ