দিনাজপুর জেলা প্রশাসন ও সিভিল সার্জনের দপ্তর থেকে এ দুই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। সোমবার (১৩ আগস্ট) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রংপুর বিভাগীয় পরিচালক ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
জানা গেছে, রোববার (১২ আগস্ট) দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর উপজেলার হামিদপুর ইউনিয়নের বাঁশপুকুর গ্রামের রিকশাচালক আবু তাহেরের স্ত্রী রিনা বেগমের (৩৩) প্রসব বেদনা ওঠে। এ অবস্থায় তাকে নিজের রিকশায় ভোর সাড়ে ৫টার দিকে ফুলবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দিতে নিয়ে যান আবু তাহের। কিন্তু কর্মরত নার্স রোজিনা আক্তার ও আফরোজা খাতুন তাকে কোনো চিকিৎসা বা হাসপাতালে ভর্তি না করে বেসরকারি কোনো ক্লিনিকে নিয়ে যেতে বলেন এবং স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দ্বিতীয় তলা থেকে নামিয়ে দেন। রিনাকে কেন এখানে চিকিৎসা দেওয়া বা ভর্তি করা হবে না তার কোনো কারণও ওই দুই নার্স বলেননি। এ অবস্থায় আবু তাহের তার স্ত্রীকে নিয়ে হাসপাতাল ভবনের পাশের একটি কামরাঙ্গা গাছের নিচে বসে কি করবেন সে সিদ্ধান্ত নিচ্ছিলেন। এমন সময় রিনার প্রসব বেদনা বেড়ে গেলে পাশের এক দোকানদারের মা এগিয়ে আসেন। তার সহযোগিতায় গাছের তলায় ঘাসের ওপর জনসম্মুখে একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেন রিনা। পরে স্থানীয় লোকজনের তোপের মুখে প্রসূতি ও নবজাতককে হাসপাতালের বেডে নেওয়া হয়।
এ ঘটনায় ওই দিনগত রাতেই দিনাজপুর সিভিল সার্জনের নির্দেশে ফুলবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. সঞ্জয় কুমার গুপ্তর নেতৃত্বে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন-পরিবার পরিকল্পনা মেডিকেল অফিসার ডা. রইচ উদ্দিন ও মেডিকেল অফিসার ডা. মুহর্তেমা ফাতেমা।
অপরদিকে, সোমবার (১৩ আগস্ট) দিনাজপুর জেলা প্রশাসন থেকে ফুলবাড়ী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এনামুল হকের নেতৃত্বে অপর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন- ফুলবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. সঞ্জয় কুমার গুপ্ত ও উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ইসমাইল হোসেন।
তদন্ত কমিটির আহ্বায়কদ্বয় যথাক্রমে সহকারী কমিশনার (ভূমি) এনামুল হক ও ফুলবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. সঞ্জয় কুমার গুপ্ত বিকেল ৫টার দিকে বাংলানিউজকে জানান, তিন কার্য্যদিবসের মধ্যে তারা তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন জমা দেবেন।
ফুলবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার নুরুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, প্রাথমিকভাবে অভিযুক্ত নার্সদের তিনটি অপরাধ চিহ্নিত করা হয়েছে। তা হলো- (১) প্রসূতিকে সর্তকতার সঙ্গে সেবা না দেওয়া, (২) রোগীর অবস্থার বিষয়ে কোনো চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ না করা এবং (৩) চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ না করেই বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া (কোনো নার্স রোগীকে রেফার্ড করতে পারেন না, এটা চিকিৎসক করতে পারেন)।
তিনি আরো জানান, তদন্ত কমিটির রিপোর্ট পেলেই অভিযুক্ত নার্সদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুস সালাম চৌধুরী জানান, দিনাজপুর জেলা প্রশাসকের পরামর্শে সহকারী কমিশনার ভূমি এনামুল হককে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন এলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে, দোষী নার্সদের শাস্তির দাবিতে স্থানীয় নারীরা সোমবার সকালে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চত্বরে বিক্ষোভ করেছেন। বিক্ষোভকারীরা বলেন, খোলা আকাশের নিচে জনসম্মুখে একজন মা সন্তান প্রসব করেছেন। এতে করে সমস্ত মা জাতির সম্মানহানি হয়েছে। এর জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নিলে কঠোর আন্দোলনে যাবেন তারা।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০১৮
এসআই