প্রতিবছর এই মশা নিধনে সিটি করপোরেশনের বাজেটে বড় বরাদ্দ থাকে। কিন্তু এর সুফল কতটা পাচ্ছে নগরবাসী সেটা নিয়েও প্রশ্ন সিটির বাসিন্দাদের।
তবে মশার বিস্তার রোধে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে সপ্তাহব্যাপী, পক্ষকালব্যাপী নিয়মিত বিশেষ কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়। তাতেও বাগে আসছে না মশার উৎপাত।
গতবছর চিকুনগুনিয়া রোগে নাস্তানাবুদ হয়েছিলেন দুই সিটির বাসিন্দারা। এজন্য এবার আগে থেকে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধে ডিএনসিসি মেয়র সাঈদ খোকন ঘোষণা দিয়ে মাঠে নেমেছেন। যে বাসায় এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যাবে সেখানে ধ্বংস করার পাশাপাশি নাগরিকদের এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এরপরেও এডিস মশার জীবাণু থাকলে ওই বাসার মালিককে সর্তক করা হবে।
এতো কিছুর পরেও কাজে আসছে না ডেঙ্গু বিরোধী অভিযান। রাজধানীতে নতুন করে ডেঙ্গুজ্বরের প্রকোপ বেড়েছে। আস্তে আস্তে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ছে।
নগর বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ডেঙ্গু প্রতিরোধে সিটি করপোরেশনের যতটা না দায়ী তার চেয়ে বেশি দায়ী নগরবাসীর। কেননা ডেঙ্গু মশা সাধারণত ফুলের টব, পরিত্যাক্ত টায়ার, পানির ট্যাংকি, বাসার ছাদে জমে থাকা স্বচ্ছ পানিতে বংশ বিস্তার করে।
সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে সচেতনতামূলক কার্যক্রম হাতে নিলেও নগরবাসী সেটাকে পাত্তা দিচ্ছে না। যে কারণে প্রতিনিয়ত ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাচ্ছে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আওতাধীন আগারগাঁও, তালতলা জনতা হাউজিংয়ের বাসিন্দা এখলাস উদ্দিন। গত চারদিন ধরে ডেঙ্গু জ্বরে ভুগছেন। তিনি বাংলানিউজকে জানান, চারদিন আগে আমার জ্বর হয়। প্রথম দিকে ওষুধ খাওয়ার পর জ্বর না কমায় ডাক্তারের কাছে গেলে রক্ত পরীক্ষা করতে দেয়। শুক্রবার ডেঙ্গু ধরা পড়ে।
তিনি জানান, এ এলাকায় আরও কয়েকজন একইভাবে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন। ডেঙ্গু মশার বিস্তার নিয়ে তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে সিটি করপোরেশনের কোন লোককে মশার ওষুধ দিতে দেখি না। তারা যদি মাঝে মধ্যে ধোঁয়া দিত তাও তো আমরা খুশি হতাম। সেটাও দেখি না। জনতা হাউজিংয়ে মশার যন্ত্রণায় দিনের বেলাতেও কোনো জায়গা বসা যায় না। চায়ের দোকানে বা যে কোনো জায়গা দাঁড়ালে সঙ্গে সঙ্গে মশা ঘিরে ধরে।
জনতা হাউজিংয়ের ৫ নং রোডের ওই বাসিন্দার অভিযোগ প্রসঙ্গে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জাকির হাসান বাংলানিউজকে বলেন, নগরবাসীকে সচেতন করতে যা যা করার তার সবগুলো কার্যক্রম আমরা নিয়েছি। আগামী ৯ সেপ্টেম্বর থেকে আবারও নতুন কর্মসূচি হাতে নেওয়া হবে। যদি কোনো এলাকায় মশার ওষুধ দিতে না দেখা যায় তাহলে ওই এলাকার কাউন্সিলরকে জবাবদিহি করতে হবে। আমরা মশার ওষুধ সব এলাকার কাউন্সিলরের জিম্মায় দিয়ে দিয়েছি। তারপরেও আমরা মনিটরিং করি। আমাদের ঘাটতি থাকতে পারে।
রাজধানীর কিছু জায়গায় যে মশার ওষুধ স্প্রে করার ক্ষেত্রে ব্যতয় ঘটছে সেটা স্বীকার করে জাকির হাসান বলেন, এজন্য জনপ্রতিনিধিদের জবাবদিহি করতে হবে। তারা মনিটর করতে পারে কেন এটা করল না। আর একটা কথা মনে রাখতে হবে ডেঙ্গু কিন্তু জমে থাকা স্বচ্ছ পানিতে জন্মায়। কাজেই সিটি করপোরেশনের চাইতে নগরবাসীর দায়িত্ব বেশি।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শেখ সালাউদ্দীন বাংলানিউজকে বলেন, আমরা আমাদের শতভাগ চেষ্টা চালিয়েছি এবং অব্যাহত আছে। আমরা পক্ষকালব্যাপী বিশেষ কর্মসূচিতে ৩৩ হাজার ৫০৮টি বাড়িতে পরিদর্শন করি। এরমধ্যে কিছু বাড়িতে এডিস মশার প্রজনন ক্ষেত্র ধ্বংস করা হয়েছে। তারপরেও ডেঙ্গু ছড়াচ্ছে।
তিনি বলেন, আমরা সচেতনতামূলক সফল কর্মসূচি হাতে নিলেও নগরবাসী সেটাকে বিশ্বাস করছে না। কেউ বিষয়টা সিরিয়াসলি নিচ্ছে না। তারপরেও আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। আগামী ৩ সেপ্টেম্বর আবার বিশেষ কর্মসূচি হাতে নেয়া হবে।
এ স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জানান, মশা পুরোপুরি নিধন করা সম্ভব না। তারপরেও মশা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। মশার প্রকোপ খুবই সামান্য, বলতে গেলে নেই। তারপরেও এডিস মশাস কামড়াচ্ছে ডেঙ্গু ছড়াচ্ছে। এজন্য সবার আগে নগরবাসীর সচেতনতা জরুরি।
স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, এ বছর সর্বশেষ পাওয়া তথ্য অনুসারে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে ১১ জন রোগী মারা গেছেন। যাদের মধ্যে অধিকাংশই নারী শিশু। আর মৃত্যুবরণকারী ১১ জন রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৭১৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০২, ২০১৮
এসএম/এসএইচ