ঢাকা, রবিবার, ২৮ আশ্বিন ১৪৩১, ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৯ রবিউস সানি ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

বাংলাদেশ এইডস মুক্ত হবে ২০৩০ সালে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪২২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১২, ২০১৮
বাংলাদেশ এইডস মুক্ত হবে ২০৩০ সালে

ঢাকা: বাংলাদেশে এইডস রোগের চিকিৎসা শুরু হয়েছিল ২০০৫ সালে। তবে তা পরিচালিত হতো বেসরকারিভাবে। বিভিন্ন দাতা গোষ্ঠীর অর্থায়নে বা এনজিও প্রতিষ্ঠান এ কার্যক্রম পরিচালনা করতো।

সরকারিভাবে ২০১৬ সাল থেকে এইডসের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন পরিচালিত হচ্ছে। সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচির কারণে খরচ আগের তুলনায় প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে।

পাশাপাশি বেড়েছে সেবার পরিধি। এমনটাই দাবি করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষরা বলছেন, ২০৩০ সালের মধ্যে এইডস মুক্ত হবে বাংলাদেশ।
 
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এইডস/এসটিডি কর্মসূচির (এএসপি) তথ্য অনুযায়ী, সুইস রেড ক্রিসেন্টের তত্ত্বাবধানে ২০০৫ সালে সর্বপ্রথম দেশে এইচআইভি/এইডস রোগীদের শনাক্তকরণ ও চিকিৎসা শুরু হয়। এরপর উন্নয়ন সহযোগী গ্লোবাল ফান্ড এবং সেভ দ্যা চিলড্রেন এবং বিভিন্ন এনজিওর আর্থিক সহায়তায় এ কাজ চলতে থাকে। তবে তারা মূলত এইডস রোগী ও ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীগুলোর কাছে ওষুধ ও অন্যান্য সরঞ্জাম পৌঁছে দেয়ার কাজ করতো। সে সময় এনজিগুলোর শুধু ওষুধ সরবরাহ করতে ব্যয় হতো প্রায় ১৪ কোটি টাকা। ২০১৬ থেকে এসব কাজ সরাসরি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এএসপি কর্মসূচির মাধ্যমে পরিচালিত হতে শুরু করে। এতে বিপুল পরিমাণ টাকা সাশ্রয় হচ্ছে। আর রোগীরাও আগের তুলনায় বেশি সেবা পাচ্ছেন।
 
এএসপি সূত্রে আরও জানা গেছে, এ কর্মসূচির আওতায় বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ), চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, এমএজি ওসমানি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সিলেট, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং রাজধানীর সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে রোগীদের নিয়মিত ওষুধ ও চিকিৎসা সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।
 
এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এইডস/এসটিডি প্রোগ্রামের উপ পরিচালক এবং প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. মো. বেলাল হোসেন বলেন, এইডস নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির গতি আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। তাছাড়া বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের অবস্থা বেশ ভাল। বর্তমানে সাধারণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে এইডস সংক্রমণের হার ০.১ শতাংশের কম এবং টার্গেট জনগোষ্ঠীর মধ্যে এই হার ০.১ শতাংশেরও কম। রোগীরা এখন একটি নির্দিষ্ট স্থান থেকে প্রয়োজনীয় ওষুধ ও সেবা নিতে পারছেন। ওষুধ ফুরিয়ে গেলে কারও প্রতিক্ষায় তাদের থাকতে হচ্ছে না।
 
জানা গেছে, ১৯৮৯ সালে দেশে প্রথম এইডস রোগী শনাক্ত হয়। সেই থেকে এ পর্যন্ত ১১ হাজার ৭০০ রোগী শনাক্ত হয়েছে। ২০১৭ সালের তথ্য অনুসারে সারাদেশে ৫ হাজার ৫৮৬ জন এইডস রোগী রয়েছে। এর মধ্যে পুরুষ ৩৭১৮ জন এবং নারী ১৮০৫ জন। শুধু ২০১৭ সালেই নতুন করে এইডস রোগী শনাক্ত হয়েছে ৮৬৫ জন, এর মধ্যে মারা গেছে ১২৫ জন। বর্তমানে জীবিত রোগীর সংখ্যা ৪ হাজার ৬৬২ জন। যার মধ্যে পুরুষ ৩ হাজার ৯৫ জন এবং নারী ১ হাজার ৫৬৭ জন।
 
বিএসএমএমইউ সূত্রে জানা যায়, চলতি সময়ে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়টিতে পরিচালিত প্রিভেনশন মাদার টু চাইল্ড ট্রান্সমিশন (পিএমটিসিটি) প্রকল্পের আওতায় এইডস আক্রান্ত ৬৪ জন চিকিৎসাধীন। এর মধ্যে ৫২ জন মা সন্তান প্রসব করেছেন। নবজাতকদের ৫০ জনই এইচআইভি মুক্ত, ১ জন এইচআইভি নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছে ও একজন মারা গেছে। এছাড়া একই সময়ে সিলেটে ২৬ জন অন্তঃসত্ত্বার মধ্যে ২৪ জন এইচআইভিমুক্ত সুস্থ সন্তান প্রসব করেছেন।
 
সামগ্রিক বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এইচআইভি/এইডস এবং টিভি ল্যাপ্রসি প্রোগ্রামের লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. শামিউল ইসলাম বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে দেশ থেকে এইডস নির্মূলের বাধ্যবাধকতা রয়েছে আমাদের। এই সময়ের মধ্যে মোট ইস্টিমেটেড কেসের ৯০ শতাংশ নির্ণয় করতে হবে। নির্ণিত কেসের ৯০ শতাংশ রোগীকে চিকিৎসার আওতায় আনতে হবে। চিকিৎসার আওতাধীন রোগীদের ৯০ শতংশের ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। এই চ্যালেঞ্জ বাস্তবায়ন করতে সরকারিভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যাতে করে নির্ধারিত সময়ে আমরা লক্ষ্য অর্জন করতে পারি।
 
বাংলাদেশ সময়: ০০১৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১২, ২০১৮
এমএএম/আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।