অন্যদিকে সেবা প্রদানকারী কো্ম্পানিও এর দায় স্বীকার করছে না। ফলে ভোগান্তিতে ও আবারও নতুন করে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন দেশের একমাত্র সরকারি কিডনি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা।
জানা যায়, হাসপাতালটিতে ২০১৫ সালের ২৭ জানুয়ারি থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর পরিচালিত পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) প্রকল্পের মাধ্যমে সেন্ডর নামের কোম্পানি রোগীদের ডায়ালাইসিস দিয়ে যাচ্ছে। তবে সম্প্রতি সেন্ডরের ডায়ালাইসিস কার্যক্রমে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ ওঠেছে।
এ নিয়ে গত বৃহস্পতিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) ৪৫ জন রোগীর সই করা একটি অভিযোগপত্র হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. নুরুল হুদার কাছে দেওয়া হয়। কিন্তু এটি গ্রহণ করেননি তিনি।
এ বিষয়ে ডা. মো. নুরুল হুদা বাংলানিউজকে বলেন, আমরা সেন্ডরের অনিয়ম সম্পর্কে জানি। তাদের সঠিকভাবে কাজ করতে বলেছিও। কিন্তু তারা তাদের চুক্তিপত্র অনুসারে আমাদের গ্রাহ্য করে না। কারণ তারা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত। তাই আমি অভিযোগপত্রটিও গ্রহণ করতে পারিনি। অভিযোগ করলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে করতে হবে।
তবে রোগী ও তাদের স্বজনদের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সেন্ডরের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা লে. কর্নেল (অব.) এস এম আব্দুল সালাম।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, রোগীর স্বজনরা কী ডাক্তার? তারা এত কিছু বোঝে কিভাবে? তাদেরকে কেউ ভুল বোঝাতে পারে। সরকারের সঙ্গে হওয়া চুক্তি অনুসারে আমাদের সার্ভিস দেওয়া হচ্ছে। ফ্লুইড উৎপাদনের জন্য আমরা আবার নতুন বড় জায়গা পাচ্ছি। সেখানে কাজ হবে। তবে এখন যেখানে আছে সেখানে জীবাণুযুক্ত হওয়ার কথা না।
>>আরো পড়ুন...কিডনি হাসপাতাল: ডায়ালাইসিস ব্যবস্থাপনায় অনিয়মের অভিযোগ
সেন্ডরের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, নোংরা ও দুর্গন্ধযুক্ত পরিবেশে ফ্লুইড উৎপাদন করার। এমনকি সেখানে ডায়ালাইজার পরিষ্কার করে পুনরায় ব্যবহারের কোনো মেশিনও নেই। হাতেই পরিষ্কার করা হচ্ছে এসব এগুলো। ডায়ালাইসিস ফি ৪৫০ টাকা হলেও কৌশলে বেশি টাকা নেওয়ার ঘটনা ঘটছে নিয়মিত।
রোগী ও স্বজনদের এ অভিযোগের বিষয়ে সেন্ডরের প্রধান নির্বাহী বলেন, ‘আমাদের নার্স ও ফ্লুইড তৈরির জন্য ফার্মাসিস্ট সবাই অভিজ্ঞ। কাজটি স্পর্শকাতর হওয়ায় এতে আমাদের পূর্ণ মনযোগ রয়েছে। আর চুক্তি অনুযায়ী, ডায়ালাইজারের ফাইবার বান্ডেলের ভলিউম ৮০ শতাংশ হওয়া পর্যন্ত এটি ব্যবহার করা যাবে। তাই আমরা ১৫ থেকে ১৮ বার পর্যন্ত একই ডায়ালাইজার পরিশুদ্ধ করে ব্যবহার করি। ’
এদিকে রাজধানীর ধানমন্ডিতে অবস্থিত গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মহিব উল্লাহ খন্দকার বাংলানিউজকে বলেন, ডায়ালাইসিস শেষ হলে ডায়ালাইজারটি মেশিনের মাধ্যমে তিনবার পার অ্যাসিটিক এসিড দিয়ে পরিশোধন করা হয়।
‘এর ভেতরে এক ধরনের টিস্যু জাতীয় ফাইবার থাকে, যা রক্তের ছাঁকনি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আর একজনের ডায়ালাইজার আরেকজনের ক্ষেত্রে কোনোভাবেই ব্যবহার করা যাবে না। এতে রোগীর ক্ষতি হবে। ’
অথচ সেন্ডর পরিচালিত কিডনি হাসপাতোলে ডায়ালাইসিস সেন্টারে এ ধরনের কোনো পরিবেশ দেখা যায়নি। এমনকি সেখানকার নার্স বা ওয়ার্ড বয়দেরও কোনো ধরনের নিয়ম-কানুনের তোয়াক্কা করেন না বলে অভিযোগ করেন রোগী ও স্বজনরা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর সূত্র জানায়, যে কোনো ওষুধ জাতীয় পণ্যের প্রস্তুত প্রণালী একই। এক্ষেত্রে জীবাণুর সংক্রমণের দিকে নজর দেওয়ার গুরুত্বতাই বেশি।
বাংলাদেশ সময়: ০৬২০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৮
এমএএম/ এমএ