কিন্তু সেই রোগীর তুলনায় এ অব্দি চিকিৎসক ও সেবাদানকারী কর্মীর (তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেনী) সংখ্যা এ অব্দি বাড়েনি। আবার যেসব পদ রয়েছে তার থেকে অনেকটাই কম জনবল দিয়ে বছরের পর বছর পার করে যাচ্ছে হাসপাতালটি।
বর্তমান প্রায় ১শ’ জন চিকিৎসক সংকটের মধ্য দিয়ে প্রতিদিন কয়েক হাজার রোগীকে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (শেবাচিমহা)।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ১৯৬৮ সালে নির্মিত হাসপাতালটি ৩২৪ বেড থেকে পর্যায়ক্রমে ২০১৩ সালে ১ হাজার বেডে উন্নীত হয়। কিন্তু কাগজে কলমে হাজার শয্যায় উন্নীত হলেও এ অব্দি হাসপাতালটির তেমন কোনো অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়নি। আবার চিকিৎসক ও তৃতীয় চতুর্থ শ্রেনীর জনবলও সে অনুযায়ী বাড়েনি। সর্বোশেষ ৫ শত শয্যার অনুকূলে থাকা জনবল দিয়েই চলছে হাসপাতাল পরিচালনা।
হাসপাতালের প্রশাসনিক শাখা সূত্রে জানা গেছে, হাজার নয় ৫ শ’ শয্যার অনুকূলে সৃষ্ট পদ অনুযায়ী ২২৪টি চিকিৎসকদের পদের মধ্যে বর্তমানে হাসপাতালটিতে বিপুল পরিমাণে চিকিৎসকদের পদ শূন্য রয়েছে। সর্বোশেষ হিসাব অনুযায়ী চিকিৎসকদের ৯৯টি পদই শূন্য রয়েছে। এরমধ্যে ডেন্টালের জুনিয়র কনস্যালটেন্টের একটি পদের মধ্যে একটি শূন্য রয়েছে। এছাড়া অর্ধেকের বেশি খালি রয়েছে রেজিস্ট্রার, সহকারী রেজিস্ট্রার ও ক্লিনিক্যাল প্যাথলজিস্ট পদে। এরমধ্যে ৩৩টি রেজিস্ট্রার পদের মধ্যে ১৮টি, ৬৬টি সহকারী রেজিস্ট্রার পদের মধ্যে ৩৭টি ও চারটি ক্লিনিক্যাল প্যাথলজিস্ট পদের মধ্যে তিনটি পদই শূন্য রয়েছে। এছাড়া ইমারজেন্সি মেডিকেল কর্মর্তা (ইএমও) পদের অর্ধেকই শূন্য রয়েছে। যেখানে ১০জন চিকিৎসকের স্থলে রয়েছেন মাত্র পাঁচজন।
এদিকে অ্যানেসথেসিওলজিস্ট পদে চারটি, মেডিকেল কর্মকর্তা (বহিঃ বিভাগ, সহকারী সার্জন, রেডিওলজিস্ট, স্বতন্ত্র রক্তরোগ, রেডিওথেরাপিস্ট, ডেন্টাল সার্জন) পদে ১৯টি, মেডিকেল কর্মকর্তা (নবসৃষ্ট) পদে আটটি ও ইনডোর মেডিকেল কর্মকর্তা পদে চারটি শূন্য রয়েছে।
চিকিৎসক সংকটের বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরকে জানানো হলেও এখন পর্যন্ত তেমন কোনো সমাধান হয়নি। তাই ইন্টার্ন (শিক্ষানবিষ চিকিৎসক) নির্ভর হয়েই হাসপাতালে চিকিৎসা সেবাদানের কার্যক্রম এগিয়ে চলছে।
ওই হাসপাতালের পরিচালক ডা. বাকির হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, হাসপাতালে শুধু চিকিৎসক সংকট তা নয়। এক হাজার সাজ-সজ্জার অনুকূলে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারীদেরও সংকট রয়েছে। সম্প্রতি কর্মচারীদের যে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তা ৫শ’ শয্যার অনুকূলে শূন্য পদের নিয়োগ ছিল।
তিনি বলেন, কর্মচারীদের ওই নিয়োগের পর হাসপাতালে কিছুটা শৃঙ্খলা এলেও রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। তাতে যেমন হাসপাতালের পরিবেশ শতভাগ পরিচ্ছন্ন ও নিয়মে রাখা সম্ভব হচ্ছে না, তেমনি চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে চিকিৎসকেদরও হিমশিম খেতে হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ৫শ’ শয্যার অবকাঠামোতে হাজার সাজ-সজ্জার এই হাসপাতালে বর্তমানে আন্তঃবিভাগে প্রতিদিন গড়ে ১ হাজার ৭৫০ জন রোগী থাকছে। আর বহিঃবিভাগ থেকে ৩ হাজারের মতো রোগী প্রতিদিন সেবা নিচ্ছে। হিসেব অনুযায়ী যে সেবা দেওয়ার কথা ছিল ৪৪০ জন চিকিৎসকের। কিন্তু হাজার সাজ-সজ্জার হাসপাতালে উন্নীত হলেও বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজে তার অনুকূলে এখনও পদ সৃজন করা হয়নি। তাই ৫ শয্যার অনুকূলে ২২৪ জন চিকিৎসকই এ হাসপাতালের জন্য এখনও বরাদ্দ।
তিনি বলেন, সেই ২২৪ জনের মধ্যে প্রায় ১শ’ জন চিকিৎসকের পদই শূন্য রয়েছে। এ অবস্থায় চিকিৎসকরা রোগীদের সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। তবে হাসপাতালে ১শ’ জনের ওপরে থাকা ইন্টার্ন চিকিৎসকই এখন প্রাণ। এদের সঙ্গে সহায়তা করে যাচ্ছেন সেবিকারা। আর হাসপাতালকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, রোগী স্থানান্তরীতকরণসহ সার্বিক কাজ করছেন তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেনীর স্টাফরা।
পরিচালক বলেন, সবচেয়ে বড় কথা বরিশাল মেডিকেলে রোগীরা সেবা নিয়ে, সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছেন। নয়তো এখন দক্ষিণের সব জেলায় হাসপাতাল ও উপজেলায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থাকার পরেও দিনে দিনে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলছে। আবার এখানে রোগী মৃত্যুর হার খুবই কম। বর্তমানে সেবার মান ভালো রয়েছে।
তবে চিকিৎসক সংকট নিরসন হলে সেবার মান আরো ভালো হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, নদীবেষ্টিত এলাকার জন্য এখানে চিকিৎসকরা আসতে চান না। তবে পদ্মাসেতু হলে এ সমস্যার সমাধান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১২১০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৮
এমএস/এএটি