ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১১ অক্টোবর ২০২৪, ০৭ রবিউস সানি ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

ইউপির ‘লাইসেন্সে’ চলছে আইসক্রিম কারখানা!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩১ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩, ২০১৮
ইউপির ‘লাইসেন্সে’ চলছে আইসক্রিম কারখানা!

মানিকগঞ্জ: মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার দরগ্রাম এলাকায় কেবল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ‘ট্রেড লাইসেন্স’ দিয়েই চলছে পপুলার আইসক্রিম নামের একটি কারখানা। একটি ছোট কক্ষ ভাড়া নিয়ে একজনমাত্র শিশু শ্রমিক নিয়ে দেদারছে আইসক্রিম বানিয়ে চলছে বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহও।

সাটুরিয়ার দরগ্রাম বাজারের এই কারখানার মালিক মোশারফ হোসেন নামের এক ব্যক্তি। প্রায় অর্ধযুগ ধরে এভাবে আইসক্রিম বানানো চলছে তার ‘পপুলার আইসক্রিম’ কারখানায়।

আবার মোড়ক বিখ্যাত পোলার আইসক্রিমের মতো হওয়ায় গ্রাম এলাকায় এর চাহিদাও বেশ।  

সম্প্রতি কারখানাটি ঘুরে দেখা যায়, একেবারে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে উৎপাদন করা হচ্ছে বিভিন্ন রকমের আইসক্রিম। সেখানে বাংলানিউজ কথা বলে কারখানার মালিক মোশারফ হোসেনের সঙ্গে।  

তিনি বাংলানিউজকে জানান, আইসক্রিমের মোড়ক কেনেন ঢাকার চকবাজার থেকে। প্রতিদিন ২-৩ হাজার লেমন ও চকবার আইসক্রিম আশেপাশের বিভিন্ন এলাকায় বাজারজাত করেন।

উৎপাদন কার্যক্রমে অনুমোদনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কেবল সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের একটি ট্রেড লাইসেন্স রয়েছে বলে জানান। আর বাকি কাগজপত্রের বিষয়ে নিজের শ্বশুর ও সুমি আইসক্রিম নামে আরেকটি কারখানার মালিক সিরাজুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করার কথা বলেন।

সাটুরিয়া সদর এলাকায় সিরাজুল ভিলার নিচতলায় সুমি আইসক্রিম কারখানায় সিরাজুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলতে গেলে সেখানে দেখা যায়, কয়েকজন শিশু শ্রমিক ছোট তিনটি কক্ষের মধ্যে আইসক্রিম বানানোর কাজ করছে। কিন্তু পরিবেশ একেবারেই অস্বাস্থ্যকর। যত্রতত্র যেমন ময়লা-আবর্জনা ছড়ানো-ছিটানো দেখা যায়, তেমনি দেখা যায় স্যাঁতস্যাঁতে মেঝেতে ময়লা পাত্রেই খালি গায়ে কাজ করছেন শ্রমিকরা। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে চলছে আইসক্রিম উৎপাদন।  ছবি: বাংলানিউজকারখানার মালিক সিরাজুল ইসলাম দাবি করেন, উৎপাদন কার্যক্রম তিনি নিজে দেখভাল করেন। তিনি উপস্থিত থাকলে সব কিছু পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নই থাকে।

আর উৎপাদনের অনুমোদনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, কারখানা পরিচালনার জন্য বিএসটিআইসহ প্রয়োজনীয় দফতরে কাগজপত্রের জন্য যোগাযোগ করে যাচ্ছেন তিনি।  

নিজের কারখানায় উৎপাদনে পরিবেশ অধিদপ্তর এবং ট্রেড লাইসেন্স রয়েছে দাবি করলেও মেয়ে জামাই মোশারফের কারখানার কাগজপত্রের বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে কিছু বলতে পারেননি সিরাজুল।

সুমি আইসক্রিম কারখানায় কর্মরত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিশু শ্রমিক বাংলানিউজকে বলে, কাপ আইসক্রিম, কোন আইসক্রিম, লেমন আইসক্রিম ও চকবার বানানো হয় তাদের কারখানায়। সাটুরিয়া, মানিকগঞ্জ সদর এবং ধামরাই উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পাইকারি বাজারজাত করা হয় এসব আইসক্রিম।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সাটুরিয়া বাজারের এক ব্যবসায়ী জানান, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে উৎপাদন করা এসব আইসক্রিম প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের বিভিন্ন দোকানে বেচা হয়। বিশেষ করে গ্রাম এলাকার প্রাইমারি স্কুল ও ছোট ছোট বাজারে এসব আইসক্রিম বিক্রি হয় বেশি। আইসক্রিমের মোড়ক দেখতে হুবহু পোলার আইসক্রিমের মতো হওয়ায় এর বিক্রিও বেশি।  

তবে জনস্বাস্থ্য বিবেচনায় এসব আইসক্রিমের বিষয়ে প্রশাসনের নজরদারি বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করলে সাটুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহিদ ফারজানা সিদ্দিকী বাংলানিউজকে জানান, প্রায়ই এসব আইসক্রিম কারখানার বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালায়। খোঁজ নিয়ে খুব শিগগির এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪২৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৩, ২০১৮
কেএসএইচ/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।