চিকিৎসকদের মতে, একদিকে পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিগ্রির মধ্যে এমডি, এমএস, এম.ফিল, ডিপ্লোমা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেওয়া হয়। এসব ডিগ্রিগুলো রোগ নির্ণয় তথা চিকিৎসার ক্ষেত্রে বাস্তবধর্মী হওয়ায় চিকিৎসক ও রোগীদের মাঝেও দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
অপরদিকে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনস (বিসিপিএস) প্রদত্ত এফসিপিএস ডিগ্রিধারীরা রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার ক্ষেত্রে বাস্তবতা থেকে বেশ দূরে থাকায় অনেক পিছিয়ে পড়েছে বলে মত প্রকাশ করেছে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।
তাছাড়াও পরীক্ষা পদ্ধতি তাত্ত্বিক জ্ঞানে ভরপুর থাকায় নতুন পাস করা চিকিৎসকরা এই ডিগ্রি অর্জনে খুব একটা আগ্রহী হচ্ছেন না। যেখানে ব্যবহারিক জ্ঞানের প্রতি জোর কম দেওয়া হয়। এ কারণে এ ডিগ্রি অর্জন করতে যেয়ে ফেল করা চিকিৎসকের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।
এছাড়া অনেক চিকিৎসক ডিগ্রি অর্জনের মাঝপথ থেকে ছেড়ে দিতেও বাধ্য হচ্ছেন। আবার যারা কষ্ট করে পাস করেন তারাও ব্যবহারিক জ্ঞানে কাঁচা থাকায় আবার এমডি/এমএস কোর্সে ভর্তি হন। এভাবে তাদের জীবনের অধিকাংশ মূল্যবান সময়ই নষ্ট হয়ে যায় বলে অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে বিসিপিএস কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা নিজেদের দল ভারী করতে অন্য ডিগ্রি (এমডিৱ, এমএস, এমআরসিএস, এফআরসিএস) পাস করা অনেক চিকিৎসককে পরীক্ষা ছাড়াই অনারেরি এফসিপিএস ডিগ্রি দিয়ে চালাচ্ছে। তাছাড়া দেশে থেকেই এখন আন্তর্জাতিক মানের রয়েল কলেজ অব লন্ডনের ডিগ্রি (এমআরসিপি, এমআরসিএস) ব্রিটিশ কাউন্সিলে বসে দেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরও বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ ও স্পেশালাইজড ইনস্টিটিউট থেকে হাতে কলমে শিক্ষাদানকারী এমডি, এমএস, এম.ফিল, ডিপ্লোমা করার সুযোগ রয়েছে। ফলে চিকিৎসকরা এফসিপিএস ডিগ্রি বিমুখ হচ্ছে। আবার এমডি, এমএস, এম.ফিল ডিগ্রি নিতে হলে অবশ্যই চিকিৎসকদের এফসিপিএস ডিগ্রি সম্পূর্ণ করে আসতে হবে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে বিসিপিএস’র কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে।
এ বিষয়ে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনে’র মহাসচিব কার্ডিওলজিস্ট অধ্যাপক ডা. রাকিবুল ইসলাম লিটু বাংলানিউজকে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি অনুসারে চিকিৎসকদের সম্মানজনক ডিগ্রি অর্জন করতে গিয়ে ন্যুনতম ৪৫ থেকে ৫০ বছর লেগে যাচ্ছে। এতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের ডাক্তারি বা সংসার জীবন করা হয়ে উঠবে না। বরং ডিগ্রি করতে করতেই জীবন প্রদীপ নিভে যাবে। অথচ ইন্ডিয়া, সিংঙ্গাপুর, ব্যাংকক, মালয়শিয়া, ইউরোপ, অ্যামেরিকাসহ বেশিরভাগ দেশে ৩০ বছরের মধ্যেই এমডি, এমএস ডিগ্রি অর্জন করে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার হওয়ার বাস্তবধর্মী শিক্ষা পদ্ধতি চালু আছে। ফলে তারা মেধা, দক্ষতা ও আন্তরিকতার সঙ্গে রোগীর সর্বোচ্চ সেবা দিতে পারে। একইভাবে এমডি, এমএস, এম.ফিল ডিগ্রি দিয়েই এদেশের চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিপ্লব করা সম্ভব।
বিসিপিএসকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, এফসিপিএস ডিগ্রিটি সারা বিশ্বের শুধুমাত্র বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে চালু আছে। অথচ সারা বিশ্বের অন্যান্য দেশে এমডি, এমএস ডিগ্রি চালু আছে। এইভাবে ডিগ্রির সমন্বয় করার নামে চিকিৎসকদের উচ্চ শিক্ষা রোধ তথা জীবন ধংসের পাঁয়তারা চলছে। আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, আমরা কারও প্রতিপক্ষ নই। বরং বিশ্বের সঙ্গে তাল মেলাতে আপনারা আপনাদের প্রদেয় ডিগ্রিকে আরও বাস্তবমুখী ও আধুনিকরণ করুন।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব হেলথ থেকে পিএইচডি ও পোস্ট ডক্টরেট করা এক চিকিৎসা বিজ্ঞানী বাংলানিউজকে বলেন, ‘বিসিপিএস থেকে প্রদত্ত এফসিপিএস, এমসিপিএস কোনো ডিগ্রিই না। এটি একটি মেম্বারশিপ বা ফেলোশিপ মাত্র। এটিকে প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রি হিসেবে বিবেচনা করা একটি হাস্যকর বিষয়। ’
‘এমনকি যুক্তরাজ্যের রয়েল কলেজ অব সার্জন থেকে এফআরসিপি, এফআরসিএস ও কোন ডিগ্রি নয়, ফেলোশিপ মাত্র। এমডি, এমএস, এম.ফিল সারাবিশ্বে প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রি হিসেবে বিবেচিত। ’
এ বিষয়ে বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনসের (বিসিপিএস) সভাপতি ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া বাংলানিউজকে বলেন, ‘২০১১ সালে দেশে চিকিৎসা বিজ্ঞানের যে সব ডিগ্রি চালু আছে সেগুলো সমন্বয় করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তখন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ছিলেন অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হক। ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী আবার একই নির্দেশনা দিলে এ বিষয়ে নতুন কমিটি করা হয়। সেই কিমিটি যাচাই-বাচাই করছে। তবে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। দেশে যেসব ডিগ্রি আছে তা অবশ্যই সমন্বয় প্রয়োজন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিধারীরা কেন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছে তা বুঝতে পারছি না। তবে যাই করা হোক না কেন সবার সম্মতিক্রমে করা হবে। ’
বাংলাদেশ সময়: ০৩৪৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৮
এমএএম/জিপি