ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

অব্যবস্থাপনায় খুমেক, দুদকে মামলা, জানে না কর্তৃপক্ষ

মাসুদ আজীম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২১, ২০১৯
অব্যবস্থাপনায় খুমেক, দুদকে মামলা, জানে না কর্তৃপক্ষ খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

খুলনা থেকে ফিরে:  একেবারে নাজুক অবস্থায় বা চরম অব্যবস্থাপনায় চলছে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (খুমেক)। কর্তৃপক্ষের নিকট অভিযোগ করেও আজ পর্যন্ত আশানুরূপ কোনো ফলাফল পাওয়া যায়নি বলে মন্তব্য  ভুক্তভোগীদের।

তাছাড়া এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) এর আগে পৃথক পৃথক মামলা হয়েছে, এবং তদন্ত চলমান রয়েছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কেউ এ বিষয়ে অবগত নন।

  
 
জানা গেছে, একেবারে হতদরিদ্র যারা বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণের সামর্থ্য রাখেন না তারাই বাধ্য হয়ে এখানে চিকিৎসা গ্রহণ করতে আসেন। খুমেকের কাছেই রয়েছে শহীদ আবু নাসের সরকারি বিশেষায়িত হাসপাতাল। এই হাসপাতালটি হওয়ার কারণে খুলনার সরকারিভাবে চিকিৎসা ব্যবস্থায় কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেও পুরো চাপ নেয়া সম্ভব হয়নি এখনো। এক্ষেত্রে হাসপাতালটির অব্যবস্থাপনাগুলোর ব্যপারে খুলনাবাসী এমনকি খুমেকে পড়ুয়া এমবিবিএস শিক্ষার্থীদের  অভিযোগও একই।    

তাছাড়া দুদকে ২০০৪ ও ২০১১ সালে পৃথক পৃথক মামলা হয়েছে সার্টিফিকেট জাল করাসহ বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগে।  এছাড়া দুদকের ঝটিকা অভিযানে সেখানে প্যাথলজি বিভাগে অর্থ আদায়, রান্না ঘরে অপরিচ্ছন্নতা, দালালদের দৌরাত্ম, জরুরি বিভাগে চিকিৎসক না থাকাসহ বিভিন্ন অনিয়ম ধরা পড়ে। এসব বিষয়ে দুদকের তদন্ত চলমান থাকলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এসব বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে জানিয়েছেন বাংলানিউজকে।  

খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালটির ভবনের প্রতিটি কোরিডোর বা প্রতিটি জায়গা নোংরা। যেখানে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন কর্মীদের উপস্থিতি একেবারেই দেখা যায় না। জরুরি বিভাগের রুমে নেই কোনো মেডিকেল ইকুয়পমেন্ট বা যন্ত্রপাতি। ফাঁকা রুমটিতে রোগীদের দেখা মিললেও মেডিকেল এটেন্ডেন্ট ও চিকিৎসকদের দেখা পাওয়া দুষ্কর। জরুরি বিভাগের সামনেই চলতে দেখা গেছে ধীর গতিতে চলমান নির্মাণ কাজ। কর্মরত নির্মাণ শ্রমিকদের সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে এই নির্মাণ কাজ শেষই হচ্ছে না।
 
এদিকে নোংরা অবস্থায় পড়ে রয়েছে জরুরি বিভাগের আশেপাশের অনেকগুলো রুম। হাসপাতালে প্রবেশের পর শৌচাগারটি (টয়লেট) দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকায় এসব রুমই টয়লেট হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।  
 
এদিকে হাসপাতালের ব্রেস্টফিডিং কর্নারটি নোংরা ও পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে দিনের পর দিন। তাছাড়া অবহেলায় হাসপাতালটির ঔষধাগারটিও তালাবদ্ধ রয়েছে অনেক দিন ধরে। জানা গেছে, হাসপাতালের জন্য সরকারি বাজেটে বরাদ্দকৃত অর্থ প্রতিনিয়ত আত্মসাৎ করছে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক ও অন্যান্য কর্মচারীরা হাসপাতালে অনুপস্থিত থাকে বলেও অভিযোগ রযেছে। হাসপাতালটির কাজ চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে খুলনা মেডিকেল কলেজের ইন্টার্ন শিক্ষার্থীদের দিয়ে।
 
হাসপাতালটিতে গিয়ে আরও দেখা গেছে, হাসপাতালটির সমাজ সেবা কার্যালয়ের সামনে রোগী কল্যাণ সমিতির মাসিক আয় ও ব্যয়ের বিবরণী ২০১৭ সালের পর আর হালনাগাদ করা হয়নি। সকাল থেকে দূপুর পর্যন্ত অর্থাৎ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রোগীদের চিকিৎসা সেবা নেয়ার জন্য নির্ধারিত টিকেট বিক্রয় কেন্দ্র ফাঁকা। হাসপতাল ভবনের বারান্দায় বা ভেতরে বাই-সাইকেল বা মটরসাইকেল রাখার ক্ষেত্রে কড়া নির্দেশনামূলক সাইনবোর্ড দেখা গেলেও প্যাথোলজি ল্যাবের ঠিক সামনের তালাবদ্ধ  রুমেই মটর সাইকেল দেখা গেছে। অনেক ধরনের অনিয়মের সঙ্গে ভবনের বাইরে হাসপাতাল বাউন্ডারির মধ্যে এখনও সদ্য সমাপ্ত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রার্থীদের ব্যনার পোস্টার দেখা গেছে।
 
এদিকে হাসপাতাল ভবনের উপরে যাওয়ার জন্য ভগ্নদশা লিফটের পাশে দেখা যায়, পায়ের পাতা থেকে উরু পর্যন্ত প্লাস্টার করা। দূর্ঘটনায় আহত হয়ে এক মাস আগে তাকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছিল এবং এক মাস পরে আবার আসতে বলা হয়েছিল। আনুমানিক ৬০ থেকে ৬৫ বছর বয়সী জোবায়দা বেগম এই বৃদ্ধা লিফটের পাশে নোংরা স্থানে শুধুমাত্র একটি চটের বস্তা বিছিয়ে কাটিয়েছেন দু’দিন। বাংলানিউজকে জোবায়দা জানান, আমারে ১ মাস পর আসতি বলিছিলো। আসিছি দুইদিন আগে, কিন্তু  এখন এরা বলতেছে ১ মাস হইনাই। আমার খুলনা শহরে থাকার কোন জায়গা নেই। তাই এহানেই আছি। ওরা খেতে দেয়। কাগজপত্র ওরা সব নিয়ে গেছে। খালি যে ছবি তুলিছিলো (এক্স-রে) তা আছে।  

'ওষুধ দেবেন কোথা, যার সর্বাঙ্গে ব্যথা' উল্লেখ করে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খুমেকের ইন্টার্নির এক শিক্ষার্থী বাংলানিউজকে জানান, এই হাসপাতালের প্রতিটি রন্ধ্রে রন্ধ্রে সমস্যা। হাসপাতালে চিকিৎসকদের কাজ করি আমরা। এখানে তাদেরকে পাওয়াই যায় না। হাসপাতালের ভেতরে রোগী ঢুকতে পারে না। তার আগেই দালালরা রোগীদের মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে টাকা আত্মসাৎ করে নেয়। এখানে বেশিরভাগই দরিদ্র রোগীরা আসে। আর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষসহ সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজ একটাই যে, কীভাবে সরকারি টাকা আত্মসাৎ করা যায়।

এ বিষয়ে খুমেক হাসপাতালের সাবেক তত্বাবধায়ক ডা. এবিএম ইকবাল বাংলানিউজকে বলেন, আমি অবসরে আছি এখন। এখানে যে অনিয়ম দূর্নীতি আছে তা নিয়ে দুদকে একাধিক অভিযোগ-মামলা হয়েছে। সে মামলার তদন্ত একবার শেষ হয়েছে, আবার পুনঃতদন্ত হবে বলে শুনেছি। মনে হয় না এই কাজ সম্পাদনের আগে হাসপাতালের পরিস্থিতি পরিবর্তিত হবে৷ 

এ বিষয়ে খুলনা বিভাগের স্বাস্থ্য দপ্তরের  পরিচালক ডা. মো. রওশন আনোয়ার বাংলানিউজকে বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। মন্তব্য করব কীভাবে? 

 আবার খুমেক হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও, যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।  


বাংলাদেশ সময়: ০৭০৮ঘণ্টা, জানুয়ারি ২১, ২০১৯
এমএএম/এসআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।